পাঠক এম রহমান মনে করেন, ব্লগারদের নিজের দোষেই মৃত্যু হয়েছে৷ তাই তিনি শেখ হাসিনাকে দোষ দিতে রাজি নন৷ তবে তিনি এ কথাও লিখেছেন, শেখ হাসিনার অন্তত ব্লগারদের সাবধান করে দেওয়া উচিত ছিল যাতে তারা ধর্মে আঘাত না করে৷
ফেসবুক বন্ধু মেহেদী হাসান বেশ মজা করে লিখেছেন, ‘‘আপনারা পাগল হইছেন৷ এত সাহস পান কিভাবে৷ তিনি আমাদের দেশমাতা, আমাদের প্রধান লিডার, তাঁকে নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করার ইচ্ছা আমাদের নাই৷''
বিদেশি সাহায্য সম্পর্কে সচেতন আবদুল্লাহেল ফরিদ৷ তাঁর ভয় ব্লগার হত্যার কারণে বিদেশি সাহায্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ আর সে'কথা তিনি জানিয়েছেন এভাবে, ‘‘ব্লগার হত্যার কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক৷ নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারলে ভবিষ্যতে ধনী দেশ বা সংগঠন থেকে ‘সাপোর্ট' পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে৷''
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
ঘরে ঢুকে জবাই
গত ৭ আগস্ট ঢাকার উত্তর গোড়ান এলাকার বাসায় ঢুকে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ওরফে নিলয় নীলকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে৷ ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নিলয়ের বয়স হয়েছিল ৪০ বছর৷ ভাড়া নেয়ার জন্য বাসা দেখতে চেয়ে ঢুকে পড়া চার দুর্বৃত্ত প্রথমে নিলয়ের স্ত্রী ও তাঁর ছোট বোনকে বারান্দায় বের করে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়, তারপর জবাই করে নিলয়কে৷
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
পুলিশকে পাশে পাননি নিলয়
কিছুদিন ধরেই তাঁর ওপর হামলার আশঙ্কা করছিলেন নিলয়৷ তিন মাস আগে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, অচেনা কয়েকজন লোক তাঁকে অনুসরণ করছে৷ বিষয়টি জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য থানায় গিয়েছিলেন৷ পুলিশ বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে তাঁকে বরং দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেয়৷ তাঁকে অনুসরণ করা এবং পুলিশের দেশ ছাড়ার পরামর্শের কথা ফেসবুকে নিলয় নিজেই লিখেছিলেন নিলয়৷
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
নিন্দার ঝড়, গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি
নিলয় নীল নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেছে৷ নিলয়ের স্ত্রী আশামনি (ওপরের ছবিতে, বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন৷
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
প্রতিবাদ
নিলয় হত্যার পর রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে৷ নিলয়সহ সব ব্লগার হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করার পাশাপাশি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘‘এতদিন ব্লগারদের রাস্তায় হত্যা করা হতো, এখন বাসায় ঢুকে জবাই করা শুরু হলো৷ এই সরকার ব্লগার হত্যায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে৷’’
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও বিচারহীনতার জন্যই হত্যাকাণ্ড চলছে
গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ ৩০শে মার্চ তেজগাঁও এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে৷ মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির মুখে দেশ ছাড়া লেখিকা তসলিমা নাসরীন ধারবাহিকভাবে ব্লগার হত্যার জন্য শেখ হাসিনার সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন৷
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
আল-কায়েদার দায়িত্ব স্বীকার
শুক্রবারই নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদা৷ আল-কায়েদার ভারতীয় উপ-মহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল-ইসলামের নামে সংবাদমাধ্যমে ই-মেল পাঠিয়ে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটি এ হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে৷
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস চলতে দেবো না’
এদিকে ঢাকার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মরক্ষার কথা বলে মানুষ হত্যাকে ‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে এটা চলতে দেওয়া যাবে না৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম৷ যারা ধর্মকেও কলুষিত করে যাচ্ছে, তারা কখনোই ধর্মে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না৷ তারা নিজেদের মুসলমান হিসেবে কীভাবে ঘোষণা দেবে?’’
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
‘সীমা লঙ্ঘন করবেন না’
পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ জানিয়ে ব্লগারদের প্রতি সীমা লঙ্ঘন না করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘‘কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া উচিত নয়৷ কেউ তা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’ ব্লগার হত্যাকারীদের ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ হিসেবে অভিহিত করে তাদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি৷
-
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
জামায়াতের ‘ভুল’
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন নিলয় নীল৷ বিচারাধীন, সাজাপ্রাপ্ত এবং অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর নেতা৷ নিলয় নিহত হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় জামায়াত৷ তবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদের পাঠানো বিবৃতিতে নিলয় নীল নামে পরিচিতি নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের নাম লেখা হয় নীলয় হোসেন ওরফে নীল৷
লেখক: আশীষ চক্রবর্ত্তী
মৃগাঙ্ক দে ব্যাঙ্গ করে জানিয়েছেন, ‘‘শেখ হাসিনার অনেক কাজ আছে৷ কয়েকটা ব্লগার মরলে উনার কিছু যায় আসে না৷ ব্লগারদের অনেকেই হিন্দু আর উনি হিন্দু খুন সমর্থন করেন৷''
শাফ জেট বলছেন, ‘‘আসল কথা হলো শেখ হাসিনা নিজেই ব্লগার তৈরি করছে৷ রাজীব হায়দারদের মাধ্যমে শাহাবাগে ফ্রি বিরিয়ানি দিয়ে৷'' তবে ফেসবুক বন্ধু শাফ জেট যদি ব্যাপারটি একটু খুলে লিখতেন, তাহলে হয়ত সবার বুঝতে সুবিধা হতো৷
মো. জাহিদ হোসেনের মতে, জনগণকে কিভাবে দেখাশোনা করতে হয় তা নাকি শেখ হাসিনা জানেনই না৷
অন্যদিকে ডয়চে ভেলের পুরনো বন্ধু অসিত কুমার দাস মিন্টু হাসিনা সরকারকে সমর্থন করে বলছেন, ‘‘বর্তমান সরকার ব্লগারদের রক্ষায় অবশ্যই চেষ্টা করে, তবে হত্যাকারীদের ধরতে সময় লাগবে৷''
ধর্মপ্রাণ আজমান হোসেন টুটুলের মন্তব্য, ‘‘কোনো মতামত দিতে চাই না, শুধু বলতে চাই ইসলাম ধর্মকে অনেক ভালোবাসি এবং বিশ্বাস করি৷ তাই অনুরোধ রইলো, কেউ ধর্ম নিয়ে কোনো খারাপ কিছু লিখবেন না৷''
‘‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক এবং গণতান্ত্রিক সরকারের প্রয়োজন৷'' ছদ্মনামে খবরের পাতা লিখেছেন এ কথা৷ তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘‘শুধু ব্লগার নয়, আমাদের দেশে আরোও অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত৷''
-
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
যেখানে হামলার শিকার অভিজিৎ, বন্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার ফুটপাথ৷ লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নিহত হবার এই জায়গাটা নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ হামলায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন৷
-
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
বেঁচে গেছেন বন্যা
হামলার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ দুষ্কৃতিকারীরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করলেও প্রাণে বেঁচে যান অ্যামেরিকায় বসবাসকারী এই ব্লগার৷ বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি৷
-
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
নির্বাক অজয় রায়
ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নিহত অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়৷ আজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন৷
-
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
ভালোবাসার ফুল
লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের রক্তে মাখা ফুটপাথে ভালোবাসার ফুল৷
-
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
প্রতীকী প্রতিবাদ
অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি-র সামনের রাজু ভাস্কর্যের চোখগুলো কালো কাপড়ে বেধে দেয়া হয়৷
-
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
ছাত্র-শিক্ষকদের মানববন্ধন
লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা এবং তাঁর স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাকে হত্যা চেষ্টার প্রতিবাদে ছাত্র-শিক্ষকদের মানববন্ধন৷
-
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
অবস্থান কর্মসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি-র সামনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের অবস্থান কর্মসূচি৷
-
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
মানববন্ধন
লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের মানববন্ধন৷
শান্তনু পালও ঠিক তাই মনে করেন৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আইনের শাসন থাকলে এমন হতো না৷''
কবির শহরিয়ার বলছেন, ‘‘শেখ হাসিনা পুরো দেশ চালাতে ব্যর্থ৷''
মোহাম্মাদ আবুল হাসানের মতে, সরকারের নাকি এ সব দেখার সময় নেই৷
হাসিনা সরকার ব্লগারদের রক্ষায় সচেষ্ট নয় – এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় আবু আহসানের মন্তব্য, ‘‘হাসিনা নিজেই খুনি, কাকে রক্ষা করবে?''
ব্লগারদের স্ব-আরোপিত ‘সেন্সরশিপ'-এর দিকে ঠেলে না দিয়ে তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে বাকস্বাধীনতার পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই উদাহরণটি দিয়ে ছদ্মনামে বাংলাদেশ সমিতি একজন সচেতন নাগরিকের মতোই লিখেছেন, ‘‘একটা স্বাধীন দেশের প্রত্যেকের বাকস্বাধীনতা থাকা সংবিধানের প্রধান ধারা৷ সরকারের উচিত আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানবিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের মানষিক চিন্তা-চেতনার উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণ করা৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ