পুরান ঢাকার বন্ধু ইমাম হোসেন ইমন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন এভাবে, ‘‘৫৮০/ একদাম, নিলে নেন, না নিলে যান, রোজা রাইখা বেশি কথা কইতে ভালো লাগে না৷–এই হচ্ছে আমাদের পুরান ঢাকার গরুর মাংসেরদোকানদারদের ভাষ্য৷''
‘‘আমি কিনতে গিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেয়া দাম বলায়, দোকানদার আমাকে মাংস না দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছ থেকে মাংস নিতে বলেছেন৷'' অভিজ্ঞতা পাঠক মহিন উদ্দিনের৷
আর উত্তরার বন্ধু প্রিন্স আহমেদ তাঁর এলাকা থেকে গতকাল বিকেলে ৬০০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস কেনার কথা জানিয়েছেন৷
‘‘অ্যামেরিকার মতো দেশে গরুর মাংস ৪০০ থেকে ৪৪০ টাকায় বিক্রি হয়৷ সে দেশে মানুষ ঘণ্টায় ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা ইনকাম করে৷ আর আমাদের দেশে (গরুর মাংসের দাম) ৫২৫ টাকা, ভাবতেও অবাক লাগে৷''এই মন্তব্য পাঠক আব্দুল কাদিরের৷
ডয়চে ভেলেকে শুক্রাবাদের চা দোকানদার জামাল হোসেন বলছেন, ‘‘সিটি কর্পোরেশনের দামে মাংস চাইলে দোকানদাররা ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেবে৷'' ফেসবুকে পাঠক আফনান খান লিখেছেন, গতকাল তিনি ৬০০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস কিনেছেন৷ আর জাহিদ হাসান কিনেছেন ৫৮০ টাকায়৷
মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন গরুর মাংস খাওয়াই ছেড়ে দেবেন বলে ঠিক করেছেন৷
-
রোজার আগে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে
ছোলা
রোজায় ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ ছোলা৷ টিসিবির হিসাবে গত বছর এই সময়ে ঢাকায় পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকায়৷ এখন তার দাম বাজারে ৯০ টাকা ছুয়েছে৷ বছর ব্যবধানে দাম প্রায় সোয়া তিন ভাগ বেড়েছে৷
-
রোজার আগে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে
মশুর ডাল
বর্তমানে ঢাকার বাজারগুলোতে মশুর ডালের দাম মানভেদে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ১২০ টাকা৷ এক মাসের মধ্যে এর দর বেড়েছে ৬ ভাগের বেশি৷ কেজিতে দশ টাকা দাম বেড়েছে শুধু গত এক সপ্তাহেই৷
-
রোজার আগে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে
পেঁয়াজ
গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ ভাগ৷ ঢাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকায় আর দেশি পেঁয়াজের দাম ২৮ থেকে ৩৫ টাকা৷ তবে টিসিবির হিসাবে এই দর এক বছর আগের চেয়ে প্রায় ২০ ভাগ কম৷
-
রোজার আগে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে
রসুন
রোজার আগে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে রসুনের৷ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১২০ টাকায়৷ একমাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা করে৷ এক বছরে দাম বেড়েছে পৌনে বারো ভাগের মতো৷
-
রোজার আগে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে
আদা
মানভেদে গত এক মাসের আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা৷ ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন ঢাকার বাজারগুলোতে, যা আগে বিক্রি হতো ৯০ থেকে ১২০ টাকায়৷
-
রোজার আগে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে
চিনি
ইফতারির শরবতেও খরচ বেড়ে যাবে, কেননা, চিনির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ৫ টাকা বেড়ে গেছে৷ সাড়ে নয় ভাগ দাম বেড়েছে গত এক মাসে৷
-
রোজার আগে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে
মজুদ পর্যাপ্ত
দু’দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘‘আমরা যেরকম চেষ্টা করেছিলাম, (বাজার), সেরকম সহনীয় মাত্রায় রয়েছে৷’’ বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ছোলা, তেল, চিনি, ডালসহ রোজায় যেসব পণ্য বেশি লাগে, সেগুলোর দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই, যথেষ্ট পরিমাণে বাজারে রয়েছে৷
সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেয়া দাম সম্পর্কে ডয়চে ভেলের পাঠক জহুরুল হক জায়েদের মন্তব্য, ‘‘ওটা শুধু কাগজে-কলমে৷ এ ব্যাপারে কোনো ফাটাকেষ্টর সন্ধান পাওয়া যাবে না৷ এমপি, মন্ত্রীরা চাইলেই সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷ কারণ, ব্যবসায়ীদের জনগণের চাইতে তাদের প্রয়োজন বেশি৷''
এ বিষয়ে পাঠক রওশন হাবিবও প্রায় একমত৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক বক্তব্য৷ বাংলাদেশে বাস্তবতার সাথে রাজনৈতিক বক্তব্যের মিল খুঁজতে যাবেন না৷''
পাঠক গোলাম ফারুক মনে করেন, ‘‘এসব অভিজ্ঞতার কথা শোনার মতো কেউ নেই৷ মিডিয়া এবং বাজারের বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, রমজানের আগে দফায় দফায় নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে৷ অথচ মন্ত্রী ও দোকানদাররা বলছেন, রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না৷ এটা তো মানুষের সাথে মস্করা করা হচ্ছে৷ আর সিটি কর্পোরেশনের দামের চার্ট ম্যাজিস্ট্রেট যাওয়ার আগে ঝোলায়, চলে যাওয়ার সাথে সাথে নামিয়ে ফেলে বা মুছে ফেলে৷''
‘‘ওরা বাঘের মতো খাঁচায় থেকে হম্বিতম্বি করে, বাজার মনিটরিং করে না,'' মন্তব্য নুরুল হক সরকারের৷
‘‘আমাদের দেশে সকল ক্ষেত্রে আইন আছে, শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগ নেই৷ তবে শত্রু ও বিরোধী দলের ক্ষেত্রে অতি মাত্রায় প্রয়োগ আছে,'' এই মন্তব্য নেওয়াজ মামুনের৷
‘‘এসব ফাও কথার জন্যই রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের প্রতি মানুষের আস্থা উঠে গেছে৷ ব্যবসায়ী আর শ্রমিক নেতাদের সাথে এ দেশের সরকার কখনোই পেরে উঠেনি৷ কারণ, এ দেশে রাজনীতি করতে পেশিশক্তি ও ডোনেশনের দরকার পড়ে আর জনগণ হলো হরিদাস পাল,'' পাঠক মাহমুদুর রহমান এমনটা মনে করেন৷
তবে এবার রমজানের আগে সিটি কর্পোরেশন দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ডয়চে ভেলে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পাঠক সালেক মোহাম্মদ লিখেছেন,‘‘এরকম সুন্দর, বস্তুনিষ্ঠ এবং বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনের জন্য ডয়চে ভেলেকে অনেক ধন্যবাদ৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
জার্মানদের রোজা রাখা বা উপোস করা
জার্মানরাও উপোস করেন তবে তা ধর্মীয় অনুভূতি থেকে নয়, তাঁরা করেন সুস্থ থাকতে, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য৷ ত্যাগের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ নানা শারিরিক সমস্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব৷এর উপকারিতা সম্পর্কে সমীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, শতকরা ৫৫ জন জার্মান একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না খাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ একটি অ্যামেরিকান গবেষণা থেকে জানা যায় যে, রোজা রাখলে তা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
পরামর্শ
বলা বাহুল্য, জার্মানরা উপোস করেন একটু অন্যভাবে বা অন্য নিয়মে৷ এ বিষয়ে রক্তচাপ বিশেষজ্ঞ ডা. হাউসব্যার্গ-এর পরামর্শ, ‘‘উপোস শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন৷ বিশেষ করে তাঁরা, যাঁদের ডায়বেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে৷’’ এছাড়াও উপোস বা না খাওয়ার পুরো সময়টা যেন এক নাগারে তিন সপ্তাহের বেশি যেন না হয়, জানান ডা. হাউসব্যার্গ৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
দূষিত পদার্থ বের করে দেয়
ফাস্টফুড, সাদা রুটি, পিৎসা জাতীয় তৈরি খাবার শরীরের ভেতরে ঢুকে ‘টক্সিন’ বা দূষিত পদার্থে রূপান্তরিত হয়৷ এগুলি শরীর থেকে বের হওয়া জরুরি৷ আর সে ক্ষেত্রেই কাজে আসে উপোস করা৷ সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট এবং দূষিত ও ক্ষতিকারক পদার্থগুলো বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে বের হয়ে যায়৷ তাছাড়া রোজা রাখলে অনেকটা সময় না খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণও কিছুটা কমে, ফলে গ্যাসট্রিকের ব্যাথাও কম হয়৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
ডায়বেটিস প্রতিরোধে সহায়ক
সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে শরীরের ‘গ্লুকোজ’ বা শর্করা জাতীয় খাবারের দ্রুত ক্ষয় হয় এবং তা দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়৷ এর ফলেই ‘ইনসুলিন’-এর উৎপাদন কমে যায় এবং তা, প্যানক্রিয়াসকে খানিকটা বিশ্রাম দেয়৷ গ্লুকোজ ক্ষয়ের ফলে শরীরে ‘গ্লাইক্লোজেন’ তৈরি হয় এবং ‘ব্লাডসুগার’ কমে ডায়বেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হয়৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
রক্তচাপ হ্রাস করে
না খেয়ে থাকা অবস্থায় শরীরে গ্লুকোজ ও চর্বিকণাগুলোর ক্ষয় হয়ে শক্তি উৎপাদন হয় এবং ‘মেটাবলিক রেট’ কমে৷ তাছাড়া অন্যান্য হরমোনের মতো ‘স্ট্রেস হরমোন’-ও কমে, ফলে রক্তচাপও কমতে পারে৷ এছাড়াও রোজার মাসে ধূমপান কম করা হয়৷ তাই এটা ধূমপান একেবারের মতো ছেড়ে দেবারও একটা পরীক্ষা হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে৷ সারাদিন রোজা রাখলে শরীরে ‘কোলেস্টোরল’-এর পরিমাণও কিছুটা কমে, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
ওজন কমে
রোজা বা সংযমের মাসে সারাদিন না খাওয়াতে পাকস্থলী কিছুটা ছোট হয় তাই ওজন কমানো হয় সহজ৷ এই অভ্যাস রোজার পরে অব্যাহত রাখলে ওজন নিয়ে আর কোনো চিন্তাই থাকে না৷ অনেক জার্মান কোনো উৎসব বা উপলক্ষ্যে বেশি খাওয়া-দাওয়ার পর অথবা বছরে এক বা দু’বার নিয়ম করে কয়েকদিন উপোস করেন৷এই উপোসের সময় খাবারের তালিকায় থাকে সেদ্ধ শাক-সবজি, সবজির স্যুপ, গ্রিন টি, অর্থাৎ প্রচুর পানি জাতীয় খাবার৷ যা শরীরকে হালকা ও পরিষ্কার করে৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
রোজার পরেও সুন্দর ও ফিট থাকুন
রোজা যেহেতু এখন গরমের সময় হচ্ছে, তাই বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শরীরে পানিশূন্যতা না হয়৷ তাই ইফতারের সময় ভাজা, পোড়া কম খেয়ে বিভিন্ন মৌসুমি ফল, ডাবের পানি ও তরমুজ খাওয়া স্রেয়৷ তরমুজ হার্ট, ধমনী, কিডনির জন্য খুব উপকারী৷ তাছাড়া আম, কাঁঠাল, আনারস, বাঙ্গি থাকতে পারে ইফতারের টেবিলে৷ এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন এ আর সি, যা ‘অ্যান্টি অক্সিডেন্ট’ হিসেবে কাজ করে এবং রোজার পরেও ত্বক সুন্দর ও আকর্ষণীয় রাখে৷
লেখক: নুরুননাহার সাত্তার