‘দিনটি কীভাবে উদযাপন করলেন?' – সেকথা জানিয়েছেন অনেকে৷ দেশ নিয়ে গর্ব, দেশ সম্পর্কে তাঁদের আবেগ, ভাবনা, হতাশা আর দুঃখের কথাও লিখেছেন কেউ কেউ৷ যেমন মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে পাঠক মাসুদ রহমানের মনে নানা প্রশ্ন৷ দেশ মানে ‘মা' আর মায়ের প্রতি ভালোবাসা আর আবেগের কথা তিনি ডয়চে ভেলের ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন ঠিক এভাবে:
‘‘দেশ মানে কী? সে কি কথা বলতে পারে? খেতে পারে? সে কি বুদ্ধি সম্পন্ন? তবে সব ধিক্কার দেশের জন্য কেন? কই, কোনো কৃষক তো বলে না দেশ আমাকে কী দিয়েছে? কারণ কৃষক জানে দেশ মানে মাটি আর এই মাটিতে সে সোনা ফলায়৷ সে বোঝে এই মাটির ওপর সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে৷ দেশ যদি হতো যুদ্ধময়, তাহলে কৃষক সোনা ফলাতে পারতো না৷ দেশই আমার ভিত্তি, দেশকে যে যেভাবেই ধিক্কার দিক না কেন, আমার কাছে দেশ মানে ‘মা'৷ মায়ের দাবি পূরণ হওয়ার নয়, মাকে কেমন করে জিজ্ঞেস করবো যে মা, তুমি আমাকে কী দিয়েছো?''
পাঠক কামরুল ইসলাম দেশ নিয়ে হতাশ৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আজ বিজয় দিবস, কিন্তু ঘরের-বাইরে যাওয়ার স্বাধীনতা পাচ্ছি না, তাই রুমে বসে টিভি দেখছি৷''
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো হয়৷ রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে এদিন শহিদ হন৷ সেই তার সঙ্গে সঙ্গেই রচিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
কাল রাত
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে বাঙালি নিধন শুরু করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ তার জবাব দেয়া হয় স্বাধীনতা ঘোষণা আর মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে৷ যুদ্ধকালীন নয় মাসের চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া দেশ
১৬ই ডিসেম্বর অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র, পায় নতুন একটা মানচিত্র৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ৩০ লাখ মানুষ৷ দেশের বাতাসে তাই আজ ভেসে বেড়াচ্ছে সেই গান – ‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন
বরাবরের মতোই দিনটিকে পালন করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে৷ তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে ৪৪তম বিজয় উৎসব শুরু হয়৷ আর ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন সরকার প্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতারা৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
মানুষের ঢল
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের৷ মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী সবাই সমবেত হন শ্রদ্ধার্ঘ্য হাতে৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
বীরাঙ্গনা
প্রায় দু’লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এসেছে স্বাধীনতা৷ অনেকেই হারিয়েছেন তাঁদের মূল্যবান সহায়, সম্পদ৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
বিজয় উদযাপন
দেশের প্রতিটি শহরে নানা ভাবে বিজয় উদযাপন চলছে৷ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সহ চলছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ
খাদেমুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী দু'জনই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে গর্বিত৷ তাঁরা জানিয়েছেন, ‘‘শহিদদের জন্য কোরআন শরীফ পড়ে দোয়া করেছি৷''
ব্যবসায়ী সাগর আহমেদ লিখেছেন, ‘‘আমি আমার দোকানে সকালবেলা পতাকা উত্তোলন করেছি৷ তারপর দেশের গান বাজিয়েছি আর এখন ফেসবুকে দেশের কবিতাসহ বন্ধুদের এবং ডয়চে ভেলের বাংলা সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি৷''
মো. হাফিজউদ্দিনও তাঁর দোকানে বসেই বিজয় দিবস পালন করছেন৷
দেশ নিয়ে গর্বিত কমিক ট্রাভেলার লিখেছেন, ‘‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়াতে তেজগাঁও পুরাতন বিমান বন্দরস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পেরে অনন্দিত৷ একজন বাংলাদেশি হয়ে আমি গর্বিত৷''
ফেসবুকে মামুন লিখেছেন, ‘‘জাতীয় পতাকা নিয়ে ব়্যালি করছি, বেশ বড় ব়্যালি৷''
অন্যদিকে ওমর বিন মোস্তফা, সোনার তরী এবং আরো কেউ কেউ জানিয়েছেন যে, তাঁরা আজকের দিনটি ঘুমিয়েই কাটাচ্ছেন৷ আর মো. একলাস ঘরে বসে ফেসবুক দেখছেন৷
সাদিক হাসান ও নিলয় নাকি আজকে, মানে বাংলাদেশের এই বিজয়ের দিনে হিন্দি, ইংরেজি ছবি দেখছেন, গান শুনছেন৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলো ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র, পেয়েছে নতুন মানচিত্র৷ আজ ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তি৷ সেই উপলক্ষ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
বিরোধী নেতার শ্রদ্ধা
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
লাখো জনতার স্মরণ
প্রায় দু লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এসেছে স্বাধীনতা৷ অনেকেই হারিয়েছেন তাঁদের মূল্যবান সহায়, সম্পদ৷ তাই বিজয়ের দিনে স্মৃতিসৌধে সমবেত হয়েছেন লাখো জনতা৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
এসেছিল শিশুরাও
বড়দের সঙ্গে এসেছিল শিশুরাও৷ বুঝে হোক, কিংবা না বুঝে, বড়দের সাথে সাথে তারাও শ্রদ্ধা জানিয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
"বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা"
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির হাজার প্রাণের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷ তাদের পরাজয়ে উদিত হয় একটি নতুন দেশের সূর্য৷ সূচিত হয় নতুন ইতিহাস, নতুন পতাকা৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরি করেন প্রায় ত্রিশ হাজার সেনা সদস্য, স্কুল শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
নতুন রূপে বিজয় দিবস
এবারের বিজয় দিবস বাঙালির কাছে নতুন রূপে ধরা দিয়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির তিনদিন পর এই বিজয় দিবস জাতিকে ভিন্ন মাত্রায় উজ্জীবিত করেছে, দিয়েছে নতুন সাহস৷ ৪২ বছর ধরে জাতি যা চেয়েছে, তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
নয় মাসের আত্মত্যাগ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাঙালি নিধন শুরু করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ তার জবাব দেয়া হয় স্বাধীনতা ঘোষণা আর মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে৷ যুদ্ধকালীন ৯ মাসের চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ৩০ লাখ মানুষ৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামসসহ স্বাধীনতা বিরোধীরা ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিল৷ হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা৷ এই সব রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনতে কয়েক দশক সময় লেগে যায়৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো হয়৷ রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে শহিদ হন৷ সেই সময়ই রচিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেছিল সেই জায়গায় লাখো কণ্ঠে একসঙ্গে উচ্চারিত হলো ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি৷'' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটিই একাত্তরের রণাঙ্গণে বাঙালি জাতিকে প্রেরণা যুগিয়েছিল, শক্তি দিয়েছিল –যা পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে গ্রহণ করা হয়৷ ‘বিজয় ২০১৩' মঞ্চে বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে এই গানে কণ্ঠ মেলান উপস্থিত লাখো জনতা৷
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন, ঢাকা /নুরুননাহার সাত্তার
নূর নবী হাসান নূর লিখেছেন, ‘‘ঘরে বসে বসে ভাবতেছি, আমরা যে ‘স্বাধীনতা'-কে এত কষ্ট করে অর্জন করেছি, সেই স্বাধীনতার আজ এ কী বেহাল দশা!! ''
একটি দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে পাঠক নূর নবী তাঁর মনের ভাব প্রকাশ করেছেন৷ লিখেছেন:
‘‘কী দেখার কথা – কী দেখছি, কী শোনার কথা – কী শুনছি, কী ভাবার কথা – কী ভাবছি, কী বলার কথা –কী বলছি৷ ৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাকে খুঁজছি৷ স্বাধীনতা কি বৈশাখী মেলায় পান্তা ইলিশ খাওয়া? স্বাধীনতা কি বটমূলে বসে বৈশাখী গান গাওয়া? স্বাধীনতা কি বুদ্ধিজীবীর বক্তৃতা-সেমিনার? স্বাধীনতা কি শহিদ বেদীতে পুষ্পের সমাহার? স্বাধীনতা কি ঢাকা শহরের আকাশচুম্বি বাড়ি? স্বাধীনতা কি ফুটপাথে শোওয়া গৃহহীন নর-নারী? স্বাধীনতা কি হোটেলে হোটেলে গ্রান্ড ফ্যাশান শো? স্বাধীনতা কি দুঃখী নারীর জরাজীর্ণ বস্ত্র? স্বাধীনতা কি গজিয়ে ওঠা অভিজাত পান্থশালা? স্বাধীনতা কি অন্নের খোঁজে কিশোরী প্রমোদবালা? স্বাধীনতা কি নিরীহ লোকের অকারণে প্রাণদণ্ড? স্বাধীনতা কি পানির ট্যাংকে গলিত লাশের গন্ধ? স্বাধীনতা কি হরতাল ডেকে জীবন করা স্তব্ধ? স্বাধীনতা কি ক্ষমতা হরণে চলে বন্দুকযুদ্ধ? স্বাধীনতা কি সন্ত্রাসীর হাতে মারণাস্ত্রের গর্জন? স্বাধীনতা কি অর্থের লোভে বিবেক বিসর্জন? আজ নেই বর্গি, নেই ইংরেজ, নেই পাকিস্তানি হানাদার৷ আজ তবু কেন আমার মনে শূন্যতা আর হাহাকার? আজ তবু কি লাখো শহিদেও রক্ত যাবে বৃথা? আজ তবু কি ভুলতে বসেছি স্বাধীনতার ইতিকথা?''
এছাড়া পাঠক মাইশা মুনিয়া দিনটি খুব উপভোগ করছেন বলে লিখেছেন৷
আর মো.মনিরুল ইসলামের মন্তব্য: ‘‘বিজয় দিবস মানেই হলো চেতনার আনন্দ৷ তাই আজ সেই আনন্দে দেশকে ভালোবাসার আনন্দ আবার ফিরে পেলাম৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ