প্রশ্নটা ছিল এরকম, ‘‘অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা মূলত বাংলাদেশকে সংকেত দিচ্ছে৷ সেটা হচ্ছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী সরকারকে তারা সহযোগিতা না-ও করতে পারে৷ আপনারও কি তাই মনে হয়?''
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
অনিশ্চিত অপেক্ষা
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন এই মহিলা যাত্রী৷ অবরোধের কারণে ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় ঘটায় কখন যে ট্রেন আসবে তার কোনো ঠিক নেই৷
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
বিপর্যস্ত অর্থনীতি
অবরোধের কারণে সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে রেল যোগাযোগ৷ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘকালীন সংকটে পড়তে যাচ্ছে৷ তাই সহিংসতা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় সম্প্রতি সাদা পতাকা মিছিল করেছেন সর্বস্তরের ব্যবসায়ী৷
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
নীরব বাস টার্মিনাল
মহাখালী বাস টার্মিনালে থেমে আছে দূরপাল্লার বাস৷ বিরোধী জোটের চতুর্থ দফায় দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের কারণে বাসগুলো টার্মিনাল ছেড়ে যেতে পারেনি৷ এতে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি তো হয়েছেই, ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতির হিসেব নেই৷
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
চারদিন ধরে কাজ নেই
আশি বছর বয়সি শুকুর আলীর উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন এই ঠেলাগাড়ি৷ গত চারদিন ধরে গাবতলীতে কোনো পণ্য না আসায় অলস বসে আছেন তিনি৷ এই কদিনে একটি পয়সাও হাতে না আসায় কিভাবে চলবে, তাই ভাবছেন এই বৃদ্ধ৷ আর ভাবছেন, নিজের প্রিয় দেশ আজ কোন পথে?
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
ভোগান্তির শেষ কবে?
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে নিয়মিত জুতার পসরা সাজিয়ে বসেন শুভ৷ অন্য সময় টার্মিনালে বহু মানুষের আনাগোনা থাকায় ব্যবসা মন্দ চলে না৷ তবে অবরোধের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বন্ধ তার বিক্রিও৷ শুভ রাজনীতি বোঝে না, ওর মনে শুধু প্রশ্ন, ওদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের এই ভোগান্তির শেষ কবে?
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
মহিলা শ্রমিকদের কি হবে?
অবরোধের কারণে পরিবহণ সংকট ও সহিংসতার ভয়ে এই পোশাক শ্রমিকরা কাজে যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে৷ না গেলে চাকরির ভয় , তাছাড়া সংসার চলবে কি করে,আছে সেই চিন্তাও? ছবিটি ঢাকার কল্যাণপুরের৷ টানা অবরোধের কারণে পোশাক খাতে গড়ে প্রতিদিন ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
অলস সময়
অবরোধের কারণে ট্রাক শ্রমিকদের বেশিরভাগ সময় কাটে বসে থেকে৷ ঢাকার গাবতলীতে কাজের অপেক্ষায় আছেন এই শ্রমিকরা৷ দেশের রাজনীতিকরা কি চায় সেটা তারা জানতে চান না৷ তবে তাদের চাহিদা খুব বেশি নয় – শুধু পেট ভরে খাওয়া, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো আর নিশ্চিন্তে ঘুমানো৷
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
আবারো শূন্য হাতে?
অবরোধের কারণে নৌকা চালকদের ব্যস্ততা নেই বললেই চলে৷ ঢাকার সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের এই নৌকা চালকদের মনে প্রশ্ন – কোনো যাত্রী আসবেন কি, নাকি শুধুই অপেক্ষা, অর্থাৎ আবারো খালি হাতে বাড়ি ফেরা?
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
কাজ বন্ধ বলে তো আর খাওয়া বন্ধ নয়!
ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পণ্য কম আসায় কাজ নেই শ্রমিকদের৷ কাজ বন্ধ বলে তো আর খাওয়া দাওয়া বন্ধ থাকতে পারে না! দু’বেলা যে খাওয়া চাই৷ খেতে বসে কেউ কেউ ভাবছেন ঘরে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা কি কিছু খেতে পেল? কারণ গত কয়েকদিন ধরে যে কোনো রোজগার নেই৷
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
সাধারণ মানুষেরই কষ্ট
কারওয়ান বাজারে ভ্যান শ্রমিকদেরও কাজ নেই৷ শুয়ে বসে কতক্ষণ? আর খিদে পেলে? অবরোধের কারণে যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের অবস্থা নিয়ে কি কেউ ভাবছেন?
-
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
আড়ত শ্রমিকদেরও কাজ নেই
অবরোধের কারণে কারওয়ান বাজারের এই আড়ত শ্রমিকরা তাস খেলে সময় কাটাচ্ছেন৷ কিন্তু এভাবে ক’দিন চলে? সংসারের কথা মনে হলে তাস খেলে সময় কাটানোর সামান্য আনন্দটুকুও যে আর থাকে না!
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন, ঢাকা / নুরুননাহার সাত্তার
উত্তরে বেশিরভাগ পাঠককেই অধ্যাপক ইমতিয়াজের সঙ্গে একমত হতে দেখা গেছে৷ রাজীব রায়হান লিখেছেন, ‘‘হ্যাঁ আমি তাই মনে করি...৷'' আহমেদ মোতায়েদ বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, এটা সত্য...৷ আমি বলতে চাই আওয়ামী লীগ মনে করে শুধু ভারত তাদের সঙ্গে থাকলেই তারা যা খুশি করতে পারবে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে ভারত বিশ্বকে শাসন করছে না... ভারতের ওপরেও কেউ আছে যারা কাজটা করছে৷''
মুহাম্মদ মুরশেদুল হকের বক্তব্য, ‘‘সহযোগিতা করার জন্য একটি গ্রাউন্ড লাগে তাও তো আমরা ধ্বংস করতে চলেছি৷ গ্লোবালাইজেশনের যুগে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কতটুকু স্বাধীন থাকতে পারে তা আর কেউ না বুঝলেও শাসকরা অন্তত বুঝেন৷ এরপরও যদি না বুঝার ভান করেন তা হলে কার কী করার থাকে?''
এমএইচ মামুন রশিদের প্রশ্ন, ‘‘ওরা এসে কি করবে? একতরফা ভোট হবে আর যা-ই হোক নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে ১০০ ভাগ নিশ্চিত৷'' জাহাঙ্গীর আলম বাবলুর কথা, ‘‘ওদের স্বার্থে ওরা সহযোগিতা করবে৷ কিন্তু স্বার্থ বা সুবিধা বেশি আদায় করে নিবে৷''
তবে পাঠক বন্ধু মাইক শাকিল আর তমাল আজাদ প্রিন্স সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘না'৷ অর্থাৎ তাঁরা অধ্যাপক ইমতিয়াজের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন৷ কামাল আহমেদও সেই দলে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘কষ্ট বাড়বে৷ দেশ থাকবে, আমরাও থাকবো৷ একাত্তরে অনেক দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে জিতেছি৷ এবার না হয় তারা সহযোগিতা করবে না৷''
এদিকে নুরুল আলম অনিক বিভিন্ন দেশের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তকে ভুল মনে করছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘মনে হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব তালেবানকে মদদ দিচ্ছে (স্পন্সরিং তালেবানিজম)৷''
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী