ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখ হিন্দুদের সংস্কৃতি, মুসলামানদের নয়৷ এই দেশের ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা পহেলা বৈশাখের নামে কোনো বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনা মেনে নেবে না৷''
এর উত্তরে সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ‘‘এখনো এ দেশের কিছু মানুষ এবং কিছু গোষ্ঠীর মাথায় পাকিস্তানি ভূত রয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে এই ভূতের কোনো অস্তিত্ব নেই৷ তাই এ সব ভূত টিকতে পারবে না৷''
এ বিষয়ে পাঠক এয়ার মাহমুদ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘দেখুন, অভিন্ন সংস্কৃতি বলতে কিছু নেই৷ হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের মতো রথযাত্রা, মঙ্গল শোভাযাত্রা আরও কত কী আয়োজন করে!! বৈশাখে তারা ভিন্নভাবে এ সব আয়োজন করে৷ এতে কেউ দোষ দেখছে না৷ কিন্তু বিষয়টি তাদের ধর্মীয় বিষয়েরই মতো৷ তাই আসুন বর্জন করি৷''
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
বৈশাখকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বাঙালি গেয়ে ওঠে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর...৷’’
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
এসো হে বৈশাখ
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকার রমনা বটমূলে শুরু হয় বাংলা বর্ষবরণ৷ ছায়ানটের শিল্পীরা বিশ্বকবির – ‘‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’’ গেয়ে বাংলা ১৪২১ সালকে স্বাগত জানান৷
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
সার্বজনীন উৎসব
রমনা বটমূলে নতুন বছরের সূর্য উঁকি দিতেই সমবেত কণ্ঠে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সব বয়সের, সব শ্রেণির মানুষ৷ পুরনো বছরের জরা, দুঃখ, পাপ, তাপকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিয়েছেন তাঁরা৷
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
মঙ্গল শোভাযাত্রা
মঙ্গল শোভাযাত্রার ‘‘জাগ্রত করো উদ্যত করো নির্ভয় করো হে’’ – এই বাণী সব প্রাণের ভয় দূর করে বাঙালির চিত্তকে যেন করেছে ভয়শূণ্য৷ এ উত্সবে মিলেছে সব প্রাণ, সব ধর্ম, সব বর্ণ৷
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
সমৃদ্ধির প্রতীক
বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ছিল লক্ষ্মী পেঁচা, শিশু হরিণ, মা ও শিশু, হাঁস এবং মাছের ঝাঁক; লোক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিড়ালের মুখে চিংড়ি, শখের হাঁড়িসহ মোট ১৩টি বড় ভাস্কর্য৷ এছাড়াও ময়ূর, বাঘের দুইটি বড় মুখোশ, ১০টা ছোট পাখি, প্রায় এক হাজার কাগজে কাটা ছোট মুখোশ, ১০০টি বড় মুখোশ৷
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
কাণ্ডারির প্রতীক
হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের দুঃসময়ের কাণ্ডারির প্রতীক হিসেবে এবারের শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে ‘গাজী ও বাঘ’৷
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
২৬ বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রা
বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রার ২৬ বছরে পদার্পণ ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবারের আয়োজন অন্যবারের চেয়ে দ্বিগুণ৷’’
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করে
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলা নববর্ষ বাঙালির সার্বজনীন উত্সব৷ এই উত্সবের রঙ পবিত্র৷ এই উত্সব বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করে৷ করে জরামুক্ত৷ এছাড়া বাংলা নববর্ষ অশুভকে বিদায় দিয়ে শুভ এবং কল্যাণের দিকে আহ্বান জানায়৷’’
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের মিশেল
বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য মিশে আসে এই বাংলা বর্ষবরণের সঙ্গে৷ এই উত্সব বাঙালিকে তার আত্ম পরিচয়ের সন্ধান দেয়৷
-
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
বসেছে মেলা
নববর্ষকে ঘিরে বৈশাখী মেলার আয়োজন বসেছিল৷
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন/জেডএইচ
তবে পহেলা বৈশাখের উৎসব সম্পর্কে পাঠক হাফিজুর রহমান মনে করেন, যে যা ভালো মনে করেন, তার তাই-ই করা উচিত৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার লাল-সাদা রঙে কোনো অ্যালার্জি নাই৷ কেউ যদি বলে লাল রং মানে সিঁদুর আর সাদা রং মানে শাখা, তাহলে আমি বলবো লাল রং মানে রক্ত আর সাদা মানে কাফন৷ তবে আপনি যদি আমাকে বলেন, ভোরবেলা যখন সূর্য উঠবো উঠবো করছে তখন রমনার বটমুলে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসে যেতে আর সবাই মিলে ‘এসো হে বৈশাখ' করতে, তাহলে আমার সমস্যা আছে৷ কারণ তখন আমার ফজরের ওয়াক্ত৷ তখন আমার সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময়, সৃষ্টিকর্তার সাথে কথা বলার সময়৷ আপনার যদি সৃষ্টিকর্তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা না থাকে আপনি যেতে পারেন৷ আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে পারি৷''
পহেলা বৈশাখ উদযাপন সম্পর্কে ডয়চে ভেলের পাঠক মো. সালাউদ্দিন তাঁর মত প্রকাশ করেছেন এভাবে৷ ‘‘আপনি যদি ধর্ম (ইসলাম) বিশ্বাস করেন তাহলে ইসলামের ব্যাখ্যাই মেনে নিতে হবে৷ আর যদি ইসলামে বিশ্বাস না করেন তাহলে অন্য ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেন৷''
পাঠক বেলাল বেপারি অবশ্য মনে করেন পহেলা বৈশাক হিন্দু ধর্মের উৎসব৷ আর শওকত আলি বলছেন, ‘‘হিন্দু মূর্তি পূজা বৈশাখী উৎসব বলে কৌশলে বাঙালি মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷''
-
বাঙালির বর্ষবরণ
মঙ্গল শোভাযাত্রা
নববর্ষ উদযাপনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ মঙ্গল শোভাযাত্রা৷ এতে বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক চিত্র, মুখোশ আর প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়৷
-
বাঙালির বর্ষবরণ
ইতিহাস
মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ১লা বৈশাখে যশোরে৷ এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক ছাত্র মাহবুব জামাল শামিম৷ চার বছর পর ১৯৮৯ সালে চারুকলা থেকে শুরু হয় এই শোভাযাত্রা৷
-
বাঙালির বর্ষবরণ
মূল ভাব
এবারের শোভাযাত্রার মূল ভাব ছিল ‘রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ’৷ এই মূল ভাবকে সামনে রেখেই বর্ণিল আর রঙিন করা হয় শোভাযাত্রাকে৷
-
বাঙালির বর্ষবরণ
অশুভ বিনাশ
শোভাযাত্রার মূল ভাবকে সামনে রেখেই এবার সাজানো হয় শোভাযাত্রাকে৷ বিশাল আকৃতির এক সরীসৃপ আর এর বিপরীতে শান্তির পায়রার প্রতিকৃতি মঙ্গল শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশের কথা বলেছে৷ আর বাংলার রয়েল বেঙ্গল টাগারের দিকে ধেয়ে আসা এক কুত্সিত দানব বলে দিয়েছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি৷
-
বাঙালির বর্ষবরণ
শক্তি জোগায়
শোভাযাত্রায় হাতি, ঘোড়া, মুখোশ, নানা ধরণের পাখি, সরাচিত্র – সব কিছুই বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতিকে তুলে ধরে৷ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া সব শ্রেণির মানুষ বলেন, এটা তাদের শক্তি দেয়৷ বাঙালি হিসেবে গর্ব করার মতো অনুপ্রেরণা দেয়৷
-
বাঙালির বর্ষবরণ
উৎসবের সাজ
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে উৎসবের সাজে সেজেছিল রমনীরা৷
-
বাঙালির বর্ষবরণ
সবার অংশগ্রহণ
উৎসবের রঙ লেগেছে এই শিশুর মনেও৷ ছোট-বড়, নারী-পুরুশ, মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সব ধর্ম, বর্ণ ও রঙয়ের মানুষের প্রাণের উৎসব এই নববর্ষ বরণ৷
-
বাঙালির বর্ষবরণ
জোর নিরাপত্তা
মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনে দেখা যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল৷
লেখক: জাহিদুল হক
অন্যদিকে ‘‘বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে ঘটা করে পান্তা ইলিশ খেয়ে গরিব-দুঃখিদের হাতে কিছু টাকা তুলে দিলে ওরা সুন্দরভাবে বেচেঁ থাকতে পারবে৷'' ফেসবুক বন্ধুদের এই এই অনুরোধ করেছেন রাজু আহমেদ৷
ধীরে ধীরে বৈশাখী উৎসবের চেহারায় পরিবর্তন এসেছে আর সেকথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘যুগ যুগ ধরে হাল খাতা আর মেলা ছিল৷ বাকি সব ১৯৯৬ সালের পরে যোগ হয়েছে৷''
‘‘বৈশাখী উৎসবকে খারাপ না বলে নিজে অপকর্ম থেকে দূরে থাকুন৷'' সকল ধর্মের মানুষ আনন্দ করতে পারে এমন যে কোনো উৎসবই সমর্থনযোগ্য বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু ফরহাদ হোসেন বাকের৷
সংকলন: নুরুন নাহার সাত্তার
সম্পদনা: দেবারতি গুহ