একজন লিখেছেন, ‘‘ও্যজিল বর্ণবাদকে উসকে দেননি, ও্যজিলের বক্তব্য পড়েছি৷ যখন ও্যজিল জার্মানির জন্য গোল করে ম্যাচ জেতায় তখন সে জার্মান, আর গোল করতে না পারলে সে তুর্কি৷''
ডয়চে ভেলে বাংলার ফেসবুক পাতায় করা বেশিরভাগ মন্তব্যই ও্যজিলের পক্ষে৷
রহুল আমীন সজীব লিখেছেন, ‘‘বৈষম্যমূলক আচরণের মূল কারণ ও্যজিল একজন মুসলিম৷তাঁর মতো এমন জনপ্রিয় তারকারা যদি বৈরিতার শিকার হয়, তবে তা হবে জার্মান ফুটবলের তথা পুরো ফুটবল বিশ্বের জন্য অমানবিক কাজ, যা দাবানলের মতো ফুটবল বিশ্বকে পুড়িয়ে মারবে৷''
বাবুল করিমও মনে করেন, ও্যজিল মুসলিম হবার কারণেই বৈষম্যের শিকার হয়েছেন৷ পাঠক রুবেলও তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন৷
আরেক পাঠক আল হাসান সরকার লিখেছেন, ‘‘প্রিয় জার্মান ফুটবল দল থেকে ও্যজিলের বিদায় মেনে নিতে পারছি না৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শুধু ছবি তোলা দিয়ে ও্যজিলকে বিচার করা যাবে না৷ গত বিশ্বকাপে জার্মানির জয়লাভের পেছনে ও্যজিলের অনেক অবদান রয়েছে৷''
গোলাম কিবরিয়াও ও্যজিলের বিদায় মেনে নিতে পারছেনা৷
-
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
বিস্ময় বালক
২০০৫ সালে ও্যজিল নিজের শহর গালসেনকিয়র্শেনে বুন্ডেসলিগার দল শালকের যুবা দলে যোগ দেন৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর সাফল্য আসে বেশ দ্রুতই৷ ২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিনি৷
-
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
ব্রেমেন এবং তারপর
যাঁরা একসময় ‘ভবিষ্যতের তারকা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, তাঁদের হতাশ করেননি ও্যজিল৷ শালকের সাথে বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়ার পর ২০০৮ সালে ভ্যার্ডার ব্রেমেনে যোগ দেন তিনি৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপে তাঁর নজরকাড়া নৈপুণ্য ইউরোপের সবচেয়ে ভালো ক্লাবগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ ২০১০ সালে ও্যজিল রেয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন, পরে তৎকালীন সময়ে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর রেকর্ড ট্রান্সফার মানিতে যোগ দেন ইংলিশ দল আর্সেনালে৷
-
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
ইন্টিগ্রেশন
২০১০ সালে ও্যজিল জার্মানির সর্বোচ্চ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ‘বাম্বি’ জিতে নেন৷ জার্মানিতে ও্যজিল তাঁর পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম৷ তুর্কি ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করলেও, ও্যজিল জার্মানির প্রতি তাঁর আনুগত্যের কথা বরাবরই জানিয়ে এসেছেন৷ ও্যজিল একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম৷ ২০১৬ সালে মক্কায় হজ করে এসেছেন তিনি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবিও পোস্ট করেছেন৷
-
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
জয় করেছেন হৃদয়
২০১২ সালে জার্মানির হয়ে তুরস্ককে হারানোর পরের ছবি এটি৷ খেলোয়াড়দের কেবিনে গিয়ে ও্যজিলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের শান্ত মেজাজ ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অনেক ভক্তকে কাছে টেনেছেন৷ ২০১৪ সালে নিজের বিশ্বকাপ জয়ের উপার্জন ব্রাজিলের দুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য দান করে সবার মন জয় করে নেন তিনি৷
-
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পথে সাতটি ম্যাচই শুরুর করেছিলেন ও্যজিল৷ জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল তাঁর৷ সবচেয়ে বেশি সফল পাসের তালিকায় সেবার তৃতীয় হয়েছিলেন ও্যজিল৷ সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার ক্ষেত্রে আর্জেন্টাইন তারকা মেসিই ছিলেন কেবল তাঁর চেয়ে এগিয়ে৷
-
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
এর্দোয়ান বিতর্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের সঙ্গে আগেও দেখা করেছেন ও্যজিল৷ কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে এর্দোয়ানের সাথে এমনই এক সাক্ষাতের পর তোলা ছবি বিতর্ক উসকে দেয়৷ বামপন্থিরা এই বৈঠক ও ছবিকে বর্ণনা করেছেন স্বৈরাচারী এক শাসকের পক্ষে সমর্থনের প্রতীক বলে, অন্যদিকে, চরম ডান থেকে অভিযোগ এসেছে ও্যজিলের জার্মানির প্রতি আনুগত্যের অভাবের৷
-
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
একটি অধ্যায়ের অবসান
২০১৮ সালে রুশ বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়ে জার্মানি৷ কয়েক দশকের মধ্যে যা ছিল দেশটির সবচেয়ে বাজে পারফর্ম্যান্স৷ ডিএফবি-প্রধান রাইনহার্ড গ্রিন্ডেল নিজের দিকে আসতে থাকা সমালোচনার তীর ঘুরিয়ে দেন ও্যজিলের দিকে৷ তিনি অভিযোগ করেন, এর্দোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর দলে বিক্ষিপ্ত মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে৷ এর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে জার্মান ফুটবল ফ্যানরাও৷
-
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
জিতলে ‘জার্মান’, হারলে ‘অভিবাসী’
মাত্র ২৯ বছর বয়সেই টুইটারে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অবসরের ঘোষণা দিলেন ও্যজিল৷ গ্রিন্ডেলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তাঁর অদক্ষতার জন্য আমি বলির পাঁঠা হতে রাজি না’৷ ডিএফবি প্রধানের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগও তোলেন তিনি৷ বাজে সময়ে পাশে থাকায় জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ এবং সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান তিনি৷ জার্মানির হয়ে মোট ৯২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৩টি গোল নিজে করেছেন এবং ৪০টি গোলে সহায়তা করেছেন ও্যজিল৷
সালমান আহমেদ মনে করছেন, ও্যজিল মুসলিম হওয়ার কারণেই নাকি জার্মান ফুটবল ফেডারেশন তাঁকে অপমান করে বের করে দিয়েছে৷
‘অবসর নিয়ে বর্ণবাদের অভিযোগ উসকে দিলেন ও্যজিল'ডয়চে ভেলেতে প্রকাশিত এই শিরোনামের প্রতিবাদ করে মোস্তাকিন মুল লিখেছেন, ও্যজিল কোনো বর্ণবাদ উসকে দেননি, উনি বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন৷
মইনুল ইসলাম খুবই দুঃখ করে তাঁর মত প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘আমার হৃদয়ে জার্মানি সবসময় আলাদা একটা জায়গা করে থেকেছে৷ এবং সেটি ডয়চে ভেলে বাংলার সম্প্রচারের জন্যই৷ ২০০১ সাল থেকে আপনাদের রেডিও শ্রোতা হিসেবে জার্মান সমাজ ও জার্মান সংস্কৃতি সম্পর্কে এক প্রকার মোহ সৃষ্টি করতে আপনারা সার্থক হয়েছিলেন৷ জার্মানির প্রতি এক প্রকার অন্ধ ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল৷ কিন্তু জার্মানরা যে ভেতরে ভেতরে আরো অনেক বেশি অসহিষ্ণু আরও বেশি বর্ণবাদী আরও বেশি কট্টরপন্থি সেটা আজ অনুধাবন করতে পারলাম৷''
হানিফ মোহাম্মদ আকন্দের ধারণা, জার্মানরা শুধু খাঁটি জার্মানদের পছন্দ করেন৷
ও্যজিলের অপরাধ তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর সাথে সাক্ষাৎ করা৷ তারপর আবার বিশ্বকাপে জার্মানি ভালো করেনি৷ সব মিলিয়ে ও্যজিলকে দোষ দিয়েছে জার্মানরা৷ এমনটাই মনে করেন পাঠক কামাল হোসেন৷
হোসেন আহমেদ ও্যজিলকে সালাম জানিয়েছেন ‘‘স্যালুট ও্যজিল'' বলে৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: জাহিদুল হক