1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খেলা হচ্ছে এখন, রেজাল্ট জানবো পরে

DW Bengali Mohammad Zahidul Haque
জাহিদুল হক
১ ডিসেম্বর ২০২২

বিএনপি হঠাৎ জেগেছে৷ বাইরের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে হোক, কিংবা দেয়ালে পিঠ ঠেকার কারণে হোক, তারা শক্তি দেখানো শুরু করেছে৷

https://p.dw.com/p/4KKJz
সিলেটে বিএনপির সমাবেশ
সিলেটে বিএনপির সমাবেশছবি: Mamun Hossain/DW

বিভাগীয় শহরগুলোতে তাদের গণসমাবেশে অনেক কর্মী সমাগম হচ্ছে৷ বিভিন্নভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন৷ বিএনপি কর্মীদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, তারা আর গ্রেপ্তার-হয়রানির ভয় পাচ্ছেন না৷

বিএনপির কারণে আওয়ামী লীগও সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ বিএনপির সমাবেশের একচেটিয়া মিডিয়া কাভারেজ নস্যাৎ করতে তারাও সমাবেশ করা শুরু করেছে৷ যশোরে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে গণমাধ্যমে ‘জনসমুদ্র' বলা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে সুবিধা দেয়ার বিষয়টিও গণমাধ্যমে এসেছে৷

অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশে বাধা দেয়ার বিষয়গুলোও গণমাধ্যমে এসেছে৷ পরিবহন ও নৌ ধর্মঘট, ইন্টারনেট বন্ধ করাসহ নানাভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ তারপরও ড্রামে ভেসে, সাঁতার কেটে বিএনপি কর্মীদের সমাবেশে যোগ দেয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে৷

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপি মহাসমাবেশ ডেকেছে৷ ঐ সমাবেশকে ঘিরে দুই দলের নেতাকর্মীদের কথাবার্তায় উত্তেজনা টের পাওয়া যাচ্ছে৷ দলীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷

বিএনপির সমাবেশের সময় ঢাকাকে ‘অবরুদ্ধ' করার চিন্তা করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা৷ তবে এখন শোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি সমাবেশে বাধা দিতে না করেছেন৷ তিনি নাকি বিএনপির শক্তি দেখতে চান, তাই এমন সিদ্ধান্ত৷ অথচ কদিন আগেই বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ঢোকানোর হুমকি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷

ডিসেম্বরে ‘খেলা হবে' বলে বারবার বলছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের৷

সবমিলিয়ে অনেকদিন পর রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে৷ পশ্চিমা কূটনীতিকদের বক্তব্য ও কার্যক্রমও এতে ভূমিকা রাখছে৷

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি কতদিন এভাবে সক্রিয় থাকতে পারবে৷ নির্বাচনের এখনও এক বছরেরও বেশি সময় বাকি৷ এর মধ্যে নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ কি গ্রেপ্তার হয়ে যাবেন? এবং গ্রেপ্তারের ট্রেন্ড কি বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আবারও ভয় ঢোকাতে পারবে? সময়ই সেটা বলে দিবে৷

আন্দোলনের ইতিহাস: সফল আওয়ামী লীগ, ব্যর্থ বিএনপি

মাঠের শক্তিতে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়ে৷ অতীতে আন্দোলন করে দাবি আদায়ে সফলতা দেখিয়েছে তারা৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু তাদেরই সফল আন্দোলনের ফসল ছিল৷ আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কারণে ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে সরকার গঠনের দেড় মাসের মাথায় ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি সরকার৷

অথচ বিএনপি কখনও আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে কিছু করাতে বাধ্য করতে পারেনি৷ যেমন:

  • ২০১১ সালের জুন মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিল সরকার৷ এরপর জুলাই মাস থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি৷ আন্দোলনের শুরুতে দেয়া হরতাল কার্যকর না হলে প্রতিটি বিভাগীয় শহর অভিমুখে রোডমার্চ করেছিলেন খালেদা জিয়া৷ ঐ কর্মসূচি শেষ হয়েছিল ২০১২ সালের ১২ মার্চ ‘চল চল ঢাকা চল' কর্মসূচির মধ্য দিয়ে৷ এরপর দাবি আদায়ে দুই দফা সময় বেঁধে দেয়া হলেও দাবি আদায় করতে পারেনি বিএনপি৷
  • এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি৷ নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েও দলটি ব্যর্থ হয়৷
  • এক বছর পর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়নি সরকার৷ এরপর টানা তিন মাস জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন চলেছিল দেশে৷
  • ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন পেলেও বিএনপি তা কাজে লাগাতে পারেনি৷
  • খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যও বড় ধরনের কোনো আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি৷
  • ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে সমর্থ হয়নি বিএনপি৷

আন্দোলন দমনেও সফল আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগই নানা কৌশলে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ করে দিতে সফল হয়েছে৷ যেমন:

  • ২০১৪ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৯শে ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘‘উনি [খালেদা জিয়া] যদি হরতাল বন্ধ করেন, অবরোধ বন্ধ করেন, মানুষের ওপর জুলুম অত্যাচার বন্ধ করেন তাহলে ওই নির্বাচনের পর আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা যদি একটি সমঝোতায় আসতে পারি৷ প্রয়োজনে আমরা আবার পুনরায় নির্বাচন দেব৷ পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেব৷''

কিন্তু পরে দেখা গেছে ওটা আসলে শেখ হাসিনার একটা কৌশল ছিল৷ নির্বাচনের কয়েকমাস পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কিসের মধ্যবর্তী নির্বাচন? এমন কি সমস্যা হয়েছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন? কার জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের দলকে ক্ষমতায় আনতেই মধ্যবর্তী নির্বাচন?''

জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলে
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller
  • এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সংলাপে অংশ নেয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘‘আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি নির্বাচন হবে অবাধ ও সুষ্ঠু৷ কোনো কারচুপি হবে না৷ আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং আপনারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন৷'' 

পরে দেখা গেছে ঐ নির্বাচনের সঙ্গে ‘রাতের ভোট' শব্দ দুটি জড়িয়ে গেছে৷ আগামী কয়েক দশক রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতিতে ২০১৮-র নির্বাচনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে অনেকে ঐ দুটি শব্দ ব্যবহার করবেন৷

  • আর এবার ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এর মাধ্যমে তিনি বিএনপির শক্তি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান৷ এছাড়া সমাবেশ আয়োজনে যারা নেতৃত্ব দেবেন তাদের তালিকা তৈরি করে ভবিষ্যতে তাদেরকে মামলার জালে জড়িয়ে ফেলতে চাইতে পারেন শেখ হাসিনা৷ কারণ তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও অতিরিক্ত শক্তি হিসেবে আছে পুলিশ ও প্রশাসন৷ তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেতন বাড়ানো থেকে শুরু করে যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়, তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার৷ বিশেষ করে গত নির্বাচনের পর ক্ষেত্রবিশেষে দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন সরকারি কর্মকর্তারা৷ তারা এখন যে ক্ষমতা উপভোগ করছেন তা সহজে চলে যেতে দিতে চাইবেন না৷ তাই তারা শেখ হাসিনাকেই ক্ষমতায় রাখতে চাইবেন৷

তবে এবার পরিস্থিতি আলাদা?

অতীতের আন্দোলনগুলো সফল না হওয়ার একটি বড় কারণ বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নিষ্ক্রিয়তা৷ সে কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও আন্দোলনে সেভাবে দেখা যায়নি৷ কিন্তু এবার মনে হচ্ছে, তৃণমূলের কর্মীদের দাবির কারণে শীর্ষ নেতাদের পক্ষে আর ঘরে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না৷ কারণ তিন মেয়াদ ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে তৃণমূলের কর্মীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে৷ এ থেকে পরিত্রাণ চান তারা৷ ফলে প্রতিটি সমাবেশেই বাধা অতিক্রম করে হাজির হচ্ছেন নেতাকর্মীরা৷ পরিবহন ধর্মঘট, হোটেলে থাকতে না দেয়া, মামলা- এসব কোনোকিছুই নেতাকর্মীদের সামনে বাধা হতে পারছে না৷

তাছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং বেড়ে যাওয়ার সুযোগও কাজে লাগাতে চাইছেন বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা৷

এসব কারণের সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা৷ সরকার এতদিন উন্নয়নের কথা বলে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করে এসেছে৷ কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, এসব উন্নয়ন করতে গিয়ে সরকার বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে৷ এবং ভবিষ্যতে এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভে টান পড়বে৷ এখনই ডলারের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে সরকার, যার প্রভাব পড়ছে শিল্প খাতে৷

এই অবস্থায় মানুষের দুর্দশা বেড়েছে৷ কম দামে চাল ও আটা পাওয়ার আশায় ওএমএসের দোকানের সামনে দরিদ্র ও অভাবী মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন৷ সমাবেশে বক্তৃতায় বিএনপি এসব বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছে৷

এছাড়া আগের দুই নির্বাচনের চেয়ে এবার নির্বাচনকে ঘিরে কূটনীতিকদের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে৷ তাদের সক্রিয়তা বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে সাহস সঞ্চার করছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য