‘‘যাঁরা এই বিজয় এনেছিলেন তাঁদের আমরা গভীর সহৃদয়তা পূর্ণ ভালোবাসায় স্বরণ করছি৷ এ বিজয় আমাদের নয়, এ বিজয় তোমাদের৷'' ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এ মন্তব্য পাঠক রবির৷ মিতা বিশ্বাসের কথাও অনেকটা এরকম৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এই দিনের জন্য অনেক মায়ের সন্তান জীবন দিয়েছেন, তাঁরা আজ মরেও সকলের মাঝে বেঁচে আছেন৷ ''
আজকের এই বিজয়ের দিনে স্বাভাবিকভাবে মনে পড়ে ১৯৭১ সালের ভয়াবহ সেই দৃশ্যের কথা৷ সে'কথাই স্বরণ করেছেন মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা তাপস৷ লিখেছেন, ‘‘যুদ্ধের বীভৎসতা দেখা ও প্রত্যক্ষ করা মানুষদের ভিড়ে অনেকেই আছেন৷ ৪৪ বছর আগের আজকের এই দিনে একদিকে স্বজন হারাবার সুতীব্র যন্ত্রণা, শোক, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষের হাহাকার, চোদ্দ পুরুষের ভিটে ছাড়া হওয়া মানুষের চোখের জল, অন্যদিকে ভাসছিল জয়ধ্বনি৷ এত মৃত্যুর পর হু হু শীতের বাতাসে মানুষগুলো হয়ত বা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিল জীবনের সৌন্দর্যের কথা৷ লাশ আর বারুদের গন্ধে চারদিকে কান্নামাখা আনন্দের হুল্লোড় মাটি থেকে উড়িয়ে দিচ্ছিল অনেক শকুনকে৷''
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো হয়৷ রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে এদিন শহিদ হন৷ সেই তার সঙ্গে সঙ্গেই রচিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
কাল রাত
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে বাঙালি নিধন শুরু করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ তার জবাব দেয়া হয় স্বাধীনতা ঘোষণা আর মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে৷ যুদ্ধকালীন নয় মাসের চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া দেশ
১৬ই ডিসেম্বর অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র, পায় নতুন একটা মানচিত্র৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ৩০ লাখ মানুষ৷ দেশের বাতাসে তাই আজ ভেসে বেড়াচ্ছে সেই গান – ‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন
বরাবরের মতোই দিনটিকে পালন করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে৷ তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে ৪৪তম বিজয় উৎসব শুরু হয়৷ আর ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন সরকার প্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতারা৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
মানুষের ঢল
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের৷ মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী সবাই সমবেত হন শ্রদ্ধার্ঘ্য হাতে৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
বীরাঙ্গনা
প্রায় দু’লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এসেছে স্বাধীনতা৷ অনেকেই হারিয়েছেন তাঁদের মূল্যবান সহায়, সম্পদ৷
-
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
বিজয় উদযাপন
দেশের প্রতিটি শহরে নানা ভাবে বিজয় উদযাপন চলছে৷ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সহ চলছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই হয়ত এতটা রাগ হোসেন ইকবালের৷ তাঁর মন্তব্য এরকম, ‘‘দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতা আমরা পাইনি৷ আমরা বিজয় পেয়েছি মঠে-ঘাটে অনবরত লাশ আর লাশ, যুদ্ধাপরাদের নামে হত্যা, দু্নীতি, চাঁদাবাজি আর হাম্বালীগের চাপাতি ও বন্দুকের মিছিল৷''
অন্যদিকে বিজয় দিবস নিয়ে গর্বিত মো. রাজ৷ আমাদের ফেসবুকে তিনি লিখেছেন এভাবে, ‘‘বিজয় মানে একটা মানচিত্র, বিজয় মানে একটা লাল-সবুজের পতাকা, বিজয় মানে একটা গর্বিত জাতি, বিজয় মানে অস্তিত্বে বাংলাদেশ৷ বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্তিতে এই গর্বিত জাতি গড়ার সকল কারিগরকে শুভেচ্ছা৷''
মোহাম্মাদ আবুল হাসান আমাদেরও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন৷
ডয়চে ভেলের ফেসবুকে শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পাঠক সুলতানা রাজিয়া সিথী৷ আরো শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বন্ধু নূর আলম, ইসমাইল আহমেদসহ অনেকে৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলো ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র, পেয়েছে নতুন মানচিত্র৷ আজ ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তি৷ সেই উপলক্ষ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
বিরোধী নেতার শ্রদ্ধা
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
লাখো জনতার স্মরণ
প্রায় দু লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এসেছে স্বাধীনতা৷ অনেকেই হারিয়েছেন তাঁদের মূল্যবান সহায়, সম্পদ৷ তাই বিজয়ের দিনে স্মৃতিসৌধে সমবেত হয়েছেন লাখো জনতা৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
এসেছিল শিশুরাও
বড়দের সঙ্গে এসেছিল শিশুরাও৷ বুঝে হোক, কিংবা না বুঝে, বড়দের সাথে সাথে তারাও শ্রদ্ধা জানিয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
"বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা"
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির হাজার প্রাণের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷ তাদের পরাজয়ে উদিত হয় একটি নতুন দেশের সূর্য৷ সূচিত হয় নতুন ইতিহাস, নতুন পতাকা৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরি করেন প্রায় ত্রিশ হাজার সেনা সদস্য, স্কুল শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
নতুন রূপে বিজয় দিবস
এবারের বিজয় দিবস বাঙালির কাছে নতুন রূপে ধরা দিয়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির তিনদিন পর এই বিজয় দিবস জাতিকে ভিন্ন মাত্রায় উজ্জীবিত করেছে, দিয়েছে নতুন সাহস৷ ৪২ বছর ধরে জাতি যা চেয়েছে, তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
নয় মাসের আত্মত্যাগ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাঙালি নিধন শুরু করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ তার জবাব দেয়া হয় স্বাধীনতা ঘোষণা আর মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে৷ যুদ্ধকালীন ৯ মাসের চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ৩০ লাখ মানুষ৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামসসহ স্বাধীনতা বিরোধীরা ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিল৷ হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা৷ এই সব রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনতে কয়েক দশক সময় লেগে যায়৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো হয়৷ রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে শহিদ হন৷ সেই সময়ই রচিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি৷
-
ভিন্ন মাত্রায় বিজয় উদযাপন
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেছিল সেই জায়গায় লাখো কণ্ঠে একসঙ্গে উচ্চারিত হলো ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি৷'' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটিই একাত্তরের রণাঙ্গণে বাঙালি জাতিকে প্রেরণা যুগিয়েছিল, শক্তি দিয়েছিল –যা পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে গ্রহণ করা হয়৷ ‘বিজয় ২০১৩' মঞ্চে বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে এই গানে কণ্ঠ মেলান উপস্থিত লাখো জনতা৷
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন, ঢাকা /নুরুননাহার সাত্তার
পুরনো বন্ধু অসিত কুমার দাস মিন্টু আজকাল ফেসবুকে তেমন মতামত না জানালেও, আমাদের সকলকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ঠিকই জানিয়েছেন৷
আজ বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৪ বছর আর এই দিনে ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু মামুন রনির একটি যৌক্তিক প্রশ্ন, ‘‘যে দেশের মুক্তির জন্যে নারীরা যুদ্ধ করেছেন, সেই দেশে আজ মা বোনেরা কেন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না? কেন প্রতিদিন কোনো না কোনো জায়গায় নারীরা ধর্ষিত হচ্ছেন? এটার জবাব কি আমরা কখনো দিতে পারবো?
১৬ই ডিসেম্বর এই বিজয়ের দিনে আহসান হাবীবের মন্তব্য, ‘‘বাঙালি জাতির জন্য আজ মহান বিজয় দিবস৷ আর জামাত শিবিরের জন্য আজ শোক দিবস৷'
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ