1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘দেউলিয়া সরকার' বনাম ‘ডিম পাড়া' ৫৪ দলের রাজনীতি

১১ জানুয়ারি ২০২৩

ঢাকায় বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে আগামী ১৬ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দলের মহাসচিব বলেছেন, "আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।”

https://p.dw.com/p/4M1cG
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ছয় মাস এভাবেই ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে যাবে দলটি।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ছয় মাস এভাবেই ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে যাবে দলটি।ছবি: Mortuza Rashed/DW

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, " বিএনপির নেতৃত্বে ৫৪ দল  শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে।”

দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে বুধবার নগরবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। তীব্র যানজটের কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়।

বিএনপি ঢাকা ও সব বিভাগীয় শহরে এই কর্মসূচি পালন শুরু করে সকাল ১০টা থেকে। দলটির নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে  মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কর্মসূচি শেষ হয় দুপুর আড়াইটার দিকে। তারা পুলিশের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই কর্মসূচি শেষ করেন। এর বাইরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরীকরা একই সময়ে এই কর্মসূচি পালন করে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ ঢাকায় নৈরাজ্য প্রতিরোধে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দেয়। পরে অবশ্য বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভা হিসবে তারা সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সকাল ১০টায় মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর বাইরেও তারা ঢাকায় আরো সমাবেশ এবং পাড়ায়-মহল্লায় নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে ছিল।

দেউলিয়া বনাম ঘোড়ার ডিম

গণঅবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন," আওয়ামী লীগ দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমান সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এ সরকার পুলিশ, আমলাদের ওপর ভর করেছে।”

আমরা নৈরাজ্য ও জ্বালাও-পোড়াও প্রতিরোধে মাঠে আছি: এস এম কামাল হোসেন

তিনি বলেন,"এই সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটি করতে দেওয়া হবে না।”

চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে ১৫ জন নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, "লুটের  রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এক ঢাকা ওয়াসার এমডির যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি, যার একটির দামই ৫০০ কোটি টাকার বেশি। হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। তারা শত হাজার কোটি পাচার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।”

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, " বিএনপির আন্দোলন ভুয়া। আজকে খবর জানেন, পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে। ১২ দলীয় জোট দেখলাম বিজয় নগরে সমাবেশ করছে, সব মিলিয়ে ২৪ জন। ৭ দলীয় জোট প্রেসক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে, মঞ্চে ২০ জন সামনে সাংবাদিকসহ আরো ১৫ জন।”

তিনি আরো বলেন, "তারা বসে আছে ফুটপাতের উপর, মঞ্চ ও শ্রোতা সেখানেই, সবই ফুটপাতকেন্দ্রিক। ৫৪ দল আজকে একজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪ টা ঘোড়ার ডিম পাড়বে, ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। ভুয়া...ভুয়া... ভুয়া... এটা গরুর হাট।''

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শুরু হয়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম থেকে বিভগীয় সমাবেশ শুরু হয়। আর সেই সমাবশের আগের দিনই পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা হয়। এরপর ঢাকা ছাড়া বিএনপির সব বিভাগীয় সমাবেশই বাস, লঞ্চ ধর্মঘটের মুখে পড়ে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশের দিন কোনো পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা না হলেও ওইদিন ঢাকায় ছিল অঘোষিত হরতাল । ঢাকা শহরে সেদিন কোনো গণপরিবহণ চলাচল করেনি। গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ হলেও ঢাকার অন্যান্য এলকায় আওয়ামীলীগ একাধিক সমাবেশ করে। সেদিন সড়কে এবং পাড়া মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মহড়া দেয়। আর বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাইলেও পুলিশ অনুমতি দেয়নি। শেষ পর্যন্ত নানা ঘটনা ও সহিংসতার পর তারা গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে বাধ্য হন। সমাবেশের তিনদিন আগে  নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হন। সমাবেশের একদিন আগে, অর্থাৎ ৮ নভেম্বর দিবাগত গভীর রাতে  বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও কেন্দ্রীয় নেতা মীর্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা মঙ্গলবার জামিনে ছাড়া পান। বুধবারও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেখা গেল।

কার কী কৌশল

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বরের পর এখন আগামী ছয় মাস এভাবেই ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে যাবে তারা। তাদের মূল টার্গেট হলো সাধারণ মানুষকে আরো বেশি করে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা। জুনের পর নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে তারা তত কঠোর কর্মসূচি দেবে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আরো সক্রিয় করবে। তাদের কথা, " এবার কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন তারা হতে দেবে না।” কারণ, তারা, মনে করে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য তারা সর্বোচ্চ আন্দোলন গড়ে তুলবে। তাদের চিন্তা, এর মধ্যে সুষ্ঠ‚ নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপও আরো বাড়বে।

আমরা ক্রমান্বয়ে আন্দোলন আরো তীব্র করবো: সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স

এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এরইমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলার কাজ এক সঙ্গেই করবে। সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন আছে। আর মামলাগুলোর মাধ্যমে বিএনপিকে আদালত চত্বরে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করবে।

পররষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশি দূতাবাসগুলোকে আরো সক্রিয় করা হয়েছে আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলায়। এর ইমধ্যে ছোট ছোট জোটকে নির্বাচনের পক্ষে মাঠে নামানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

শেষ পর্যন্ত কী হবে

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, " সরকারের পদত্যাগ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে। আমরা ক্রমান্বয়ে আন্দোলন আরো তীব্র করবো।” তার কথা ," সরকার পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে কিছুই করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। আসলে সরকারের হাতে কোনো নিজম্ব কর্মসূচি নাই। তাই বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা পায়ে পাড়া দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা হামলা, দমন, নির্যাতন চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করতে পারবে না।”

তিনি বলেন, " যুগপৎ আন্দোলনে অনেকেই যোগ দিয়েছেন। ধাপে ধাপে আরো দেবে। যুগপৎ আন্দোলনের এক পর্যায়ে গিয়ে আমরা নতুন কৌশল নির্ধারণ করবো পরিস্থিতি বুঝে। তখন সেটা ভিন্ন রূপেও হতে পারে।”

এর জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, "কেউ যদি আমাদের কর্মসূচিকে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি মনে করে, করতে পারে। কিন্তু আমরা নৈরাজ্য ও জ্বালাও-পোড়াও প্রতিরোধে মাঠে আছি, থাকবো। কারণ্, তারা অতীতে যা করেছে তাতে তাদের বিশ্বাস করা যায় না।”

তিনি দাবি করেন, "আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে নির্বাচনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। সারাদেশের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের কাজ শুরুর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন আমরা সারা দেশে আমাদের উন্নয়নমূলক কাজ ও বিএনপির নৈরাজ্যের ঘটনা তুলে ধরবো। নির্বাচনের প্রস্তুতি আর নৈরাজ্য প্রতিরোধে আমরা মাঠে আছি।”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, " জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয় না। একটি দলের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলনে সাধারণ মানুষ সাড়া দেয় না। তাই বিএনপির আন্দোলনে সাধারণ মানুষ নেই। তাদের এই আন্দোলন সফল হবে না। ”