‘‘করোনাকালে দেশের জনসাধারণ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্থ আর পরিবহণ খাত তাদের ব্যবসায় কোনোভাবে ছাড় দিতে চাচ্ছে না৷ এই মহামারির সময়ে তাদের ব্যবসায়িক মনোভাব পরিবর্তন করা উচিত৷,'' এই মন্তব্য ডয়চে ভেলের পাঠক তাপস চক্রবর্ত্তীর৷
‘‘লকডাউনে কেবল পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা কিন্তু না৷ সাধারণ জনগণের যেখানে জীবন চালানোই দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে কেবল একটা পক্ষের সুবিধা দেখলে হবে না৷ সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি৷,' ডয়চে ভেলের মাধ্যমে সরকারের কাছে এই অনুরোধ পাঠক ইশতিয়াক রিয়াদের৷
আর পাঠক আতিকুর রহমান লিখেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে বহুগুণ, কিন্তু দেশের বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই৷ দেশের বাজারে তেলের দাম কমিয়ে সমন্বয় করা যেতো৷''
আতিকুর রহমানের সাথে পুরোপুরি একমত পাঠক ফকরুল ইসলাম রাসেল৷
মো.সাদ্দাম প্রধানের মতে, দেশের নীতিনির্ধারকরা যা খুশি তাই করছেন ৷
এদিকে পাঠক হাবীব মালিক মনে করেন, এই ভাড়া বৃদ্ধি কোনো অবস্থাতেই যৌক্তিক হয়নি, এটা একটা সড়যন্ত্রমূলক সিদ্ধান্ত, যার সঙ্গে জড়িত বিআরটিএ চেয়ারম্যান এবং বাস মালিকরা৷
এক ধাক্কায় শতকরা ৬০ভাগ বাস ভাড়া বাড়ানোর প্রসঙ্গে মালয়েশিয়া থেকে মো.সাঈদ লিখেছেন, মালয়েশিয়ায় গত সাত বছর যাবত বাসের ভাড়া একই রয়েছে৷
আর ওলিউর রহমান খান রাজীব মনে করছেন, বাসভাড়া বাডানোর মধ্য দিয়ে সরকার পরিবহণ সেক্টরে একটা অরাজকতার পথ উন্মুক্ত করে দিলো৷ ‘‘অতিরিক্ত ভাড়া সাধারণ জনগণ কোথা থেকে দেবে? সরকার কিভাবে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিলো? সাধারণ জনগণের প্রতি কি সরকারের কোনো দ্বায়িত্ব নেই? সরকার কি জনগণকে কষ্ট দিয়ে বাসমালিকদের স্বার্থ রক্ষা করছে?'' ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় প্রশ্নগুলো রেখেছেন পাঠক সাইফুল ইসলাম ৷
‘‘অফিস বন্ধ৷ ২মাস ধরে বেতন পাই না৷ বাসা ভাড়া দিতে হবে৷'' সব মিলিয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন পাঠক খালেক ৷
‘‘সরকারি নির্দেশ বাস মালিকরা মানবে না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাস চলবে- এটা শুধু মুখের কথা, জনগণ দূরত্ব মানবে না৷'' এসব বিষয়ে নিশ্চিত পাঠক সবুজ মিয়া ৷
আর ‘‘কোন ক্রমেই বাস ভাড়া বৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না'' মন্তব্য মোস্তাক আহমেদের ৷
‘‘ ভাড়া সামান্য বাড়তি নেয়া যেতে পারে, তবে ৮০% কখনো গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিনিময়ে সেফটি ব্যবস্থা কি দিচ্ছে পরিবহন মালিক সমিতি?'' জানতে চান ওসমান গনি৷
তবে মিজানুর রহমান মিল্কি মনে করছেন, ‘‘যারা বাস ভাডা বাডানোর সুপারিশ করেছেন, তারা কেউ পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করেন না৷ ''
‘‘বাংলাদেশে একবার ভাড়া বাড়লে আর কমায় না'' – মন্তব্য বিনতে গিয়াসের৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
শিশুদের আশঙ্কা কি বেশি?
শিশুদের নিয়ে আলাদা করে কোনো আশঙ্কা নাই৷ যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন৷ আক্রান্তদের পাঁচ জনের চারজনের ওপর এই ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের মতোই প্রভাব ফেলবে৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশু ও তরুণ বয়সিরা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ মধ্যবয়সিরা এতে আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত সেবা ও চিকিৎসায় তাদেরও সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
কী খেলে ঠেকানো যাবে করোনা?
কোনো কিছু খেয়েই করোনা ঠেকানো যাবে না৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য সুষম খাবার এমনিতেই প্রয়োজন৷ অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে৷ কেউ রসুন খাওয়ার কথা বলছেন, কেউ ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কথা বলছেন৷ রসুনে নানা উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো৷ রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে তা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক শরীরে গেলে তা করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা উচিত?
নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর পর গরম পানি পান করলে ভাইরাস মারা যাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷ মুখে বা শরীরে একবার ভাইরাস প্রবেশ করলে কোনো খাবার বা পানীয় দিয়েই তা আটকানো যাবে না৷ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
অ্যান্টিবায়োটিক বা কোনো ওষুধে কাজ হবে?
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর, ভাইরাসের জন্য নয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসুস্থ শরীরে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে৷ সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন৷ এখনো নভেল করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শিগগিরই হয়তো আসবে সুখবর৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কোনো প্রভাব রয়েছে?
এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস মারা যায়৷ কিন্তু এত উচ্চ তাপমাত্রা কোনো দেশেই থাকে না৷ অনেকে মনে করছেন গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময় জরুরি৷ কিন্তু প্রচণ্ড গরম পানি দিয়ে স্নান করলেই তা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কি করোনা ভাইরাস শনাক্ত সম্ভব?
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে তাপমাত্রা বোঝা সম্ভব, ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চত করা সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে কারো শরীরে জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যাবে না৷ সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ দিনের পরও ভাইরাস শরীরে কর্মক্ষম থাকতে পারে৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
টাকার মাধ্যমে কী করোনা ছড়ায়?
শরীরের বাইরে করোনা ভাইরাস কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে৷ ফলে আমদানি করা কোনো পণ্য বা চিঠির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে৷ ময়লা টাকা থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷ ফলে টাকা লেনদেনের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত৷ যত বেশি সম্ভব হাত-মুখ-নাক-কানে হাত নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
মশা বা অন্য পশুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল এক ধরনের বেড়াল থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ নভেল করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ ধারণা করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনো মাধ্যম হয়ে মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়েছে৷ তবে মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এটি আপনার মধ্যে ছড়াবে না৷ সতর্কতা হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়ার আগে ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ-মাংস বা পোচ করা ডিম থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
কিভাবে থাকবো নিরাপদ?
সবচেয়ে জরুরি হাত পরিষ্কার রাখা৷ সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করতে হবে৷ যদি সাবান না থাকে, ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, হাত ধুয়ে নিন৷ অথবা হাতের কনুইয়ে মুখ ঢাকুন৷ হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি দিলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন অন্য়রা৷ হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানো ও কোলাকুলি থেকেও বিরত থাকুন৷
-
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
আমি কী মারা যাবো?
করোনায় আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন, এমন আশঙ্কা একেবারেই কম৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন৷ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন৷ অনলাইনে যা দেখবেন, সব বিশ্বাস না করে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সন্ধান করুন৷ সাবান, স্যানিটাইজার নিজে কিনে জমিয়ে রাখবেন না৷ আপনি নিরাপদ থাকলেও আপনার আশেপাশের মানুষ নিরাপদ না থাকলে সহজেই তার কাছ থেকে ছড়াবে ভাইরাস৷ ফলে নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও থাকার সুযোগ দিন৷
লেখক: অনুপম দেব কানুনজ্ঞ