‘‘আমাদের গরিব, অসহায়, যাদের থাকার জায়গা নাই তাদেরকে ভাসানচরের ঘরেগুলো দেওয়া হোক'',পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য জানার পর পাঠক শাহ ইব্রাহিম সোহেল এ কথা লিখেছেন ফেসবুক পাতায়৷ একই মত পাঠক ইসলাম সাইফ, খলিল মাহমুদ, মোহাম্মদ ফরিদ, রাজু শাহ ও ইউসুফ আলির৷ তাদেরও দাবি, ভাসানচর দেশের গৃহহীনদেরই দেওয়া হোক৷
এই সিদ্ধান্তকে সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছেন পাঠক সালেহ রাজীবও, যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটা শুধু তাঁর নিজের চিন্তা, সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি৷
তবে এ সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন পাঠক মুনতাসির আজিজ৷ তার মতে ভাসানচরে বাড়িগুলো নির্মিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্যে, তাই রোহিঙ্গাদের অবহেলা করা হলে সরকার চাপের মুখে পড়বে৷
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
মূল ভূখন্ড থেকে দূরে
বিশ বছরেরও কম সময় আগে ভাসান চর জেগে উঠেছিল৷ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে এটি ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ৷
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
যাওয়া সহজ নয়
ভাসান চরে যেতে সাধারণ মানুষের উপযোগী কোনো বাহন নেই৷ ঐ দ্বীপের কয়েকজন দোকানি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বর্ষার সময় সাগর উত্তাল থাকায় সাধারণ মাছ ধরার নৌকায় করে ভাসান চরে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়৷
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
তিন মিটার উঁচু বাঁধ
উঁচু ঢেউ ও বন্যার হাত থেকে ভাসান চরকে বাঁচাতে সরকার ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছে৷ এক দোকানি জানালেন, মাসে দু’বার বাঁধের বাইরের দিকে থাকা বাজার এক মিটার পর্যন্ত ডুবে যায়৷
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
একইরকম ভবন
রোহিঙ্গাদের জন্য ১,৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ প্রতিটি ভবনে ১৬টি ঘর রয়েছে৷ ১২x১৪ ফুটের একেকটি ঘরে একটি পরিবারের অন্তত চার জন সদস্যকে থাকতে হবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যবহারের জন্য ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে৷
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
সৌরশক্তি
ভবনগুলোর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সেগুলোতে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য দুটি ডিজেল জেনারেটর ও বিশাল এক মাঠে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ খাবার পানির জন্য রয়েছে নলকূপ৷ আরও আছে বৃষ্টির পানি থেকে খাবার পানি পাওয়ার ব্যবস্থা৷
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
ক্ষয় রোধের ব্যবস্থা
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে ২০০২ সালে প্রথম এই দ্বীপের অস্তিত্বের কথা জানা যায়৷ এরপর কয়েকবার এটি স্থান পরিবর্তন করেছে৷ ভূমিক্ষয় ঠেকাতে সরকার চরটিতে তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
দ্বীপটি কি বাসযোগ্য?
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, দ্বীপটি এখনও বসবাসের উপযোগী নয়৷ তবে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করছেন, বাঁধের উচ্চতা যদি সাড়ে ছয় থেকে সাত মিটার করা যায় তাহলে দ্বীপটি বসবাসযোগ্য হতে পারে৷ তবে ভাসান চরে ফসল ফলানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি৷
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
রোহিঙ্গাদের ভয়
কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা মারা যেতে পারেন৷ তবে প্রকল্পের প্রধান স্থপতি আহমেদ মুক্তা বলেন, ‘‘চরটি রোহিঙ্গাদের জন্য এক স্বর্গ৷’’
-
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
রোহিঙ্গারা কি ভাসান চরে যাবেন?
কয়েকটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে যে, নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷ তবে রোহিঙ্গারা সেখানে না গেলে গৃহহীন বাংলাদেশিদের ভবিষ্যতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷
রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে যে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের গৃহহীনদের থাকার সুযোগ দেওয়া হতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তা জানার পর, ভাসানচরের স্থাপনাটিতে হস্তশিল্প বা দূষণমুক্ত পরিবেশ বান্ধব কারখানা গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন পাঠক হাসনাইন মাহমুদ৷
অন্যদিকে মোমেনা মনি বলছেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না পাঠিয়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হোক, যে কথা বাংলাদেশের নাগরিকরা শুরু থেকেই বলছেন৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী