গৃহিণীরা তাঁদের শ্রমের প্রাপ্য মর্যাদা কতটা পাচ্ছেন, তার উত্তরে পাঠক মোহাম্মদ দাউদ আমাদের ফেসবুকে জানিয়েছেন, ‘‘সব কিছু কেন অর্থ দিয়ে বিচার হবে? আপনাকে যে লালন-পালন করে বড় করলো, তাঁকে আপনি আর কত দিয়েছেন! আমার মা তো চাকরি করেনি৷ কিন্তু বাবা সব টাকা-পয়সাই মায়ের হাতে দিত, যার মূল্য ছিল ভালোবাসা৷ এটা টাকা দিয়ে কখনো কেনা যায় না৷''
সালেক মাহমুদ তো সেই চির পরিচিত প্রবাদ বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করেছেন, ‘‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে৷'' তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘এটাই চিরকালের সত্য৷ মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যা ছাড়া দুনিয়া তাই অচল৷''
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
বাড়তি কাজ, বাড়তি বেতন
এক সপ্তাহে একজন চিকিৎসক ৫৬ ঘণ্টা কাজ করলে মাসে পান ১ লাখ ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার৷ সেই অনুযায়ী গৃহিণীদের সপ্তাহে ৯৪ ঘণ্টা কাজের হিসেবে বছরে কত বেতন হওয়া উচিত? স্যালারি ডট কম বলছে, গৃহিণীরা ৯টা থেকে ৫টা কাজের বাইরে সপ্তাহে যে অতিরিক্ত ৫৮ ঘণ্টা খাটেন, সেটা হিসেব করলে তাদের বাড়তি বেতন হওয়া উচিত বছরে ৬৭,৪৩৬ মার্কিন ডলার৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
রান্না করা
একজন গৃহিণীকে সপ্তাহে কমপক্ষে অন্তত ১৪ ঘণ্টা রান্না করতে হয়৷ ঘণ্টায় ৯ দশমিক ০৩ মার্কিন ডলার হিসেব করলে বছরে কেবল রান্নায় তাঁদের আয় হওয়া উচিত ৬,৫৭০ ডলার৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
গাড়ি চালানো
একজন গৃহিণী সন্তানকে স্কুলে দেয়া, বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজে সপ্তাহে ৯ ঘণ্টা গাড়ি চালান৷ ঘণ্টায় ১৩ দশমিক ৮৫ ডলার হিসেবে বছরে সেই কাজের পারিশ্রমিক দাঁড়ায় ৬,৪৮২ মার্কিন ডলার৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
সন্তানদের পড়ালেখায় সাহায্য করা
সন্তানদের পড়ালেখায় একজন মা সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা সময় দেন বলে স্যালারি ডট কমের জরিপে উঠে এসেছে৷ একজন শিক্ষিকার বেতন হিসেবে ঘণ্টায় ১৮ দশমিক ২৩ ডলার হিসেব করলে বছরে সেই কাজের পারিশ্রমিক দাঁড়ায় ৭,২৯০ ডলার৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
সন্তানদের যত্ন নেয়া
যুক্তরাষ্ট্রে স্যালারি ডট কম যে ৬ হাজার মায়ের উপর জরিপ করেছেন, তারা জানিয়েছে সপ্তাহে গড়ে ৪০ ঘণ্টা সন্তানের যত্নে সময় দেন৷ ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৬৫ ডলার করে হিসেব করলে এর জন্য তারা পারিশ্রমিক পেতে পারেন ২০ হাজার ডলার৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
ঘর পরিষ্কার করা
সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা ঘর পরিষ্কারে ব্যয় করেন গৃহিণীরা৷ ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৮৮ ডলার করলে বছরে যা দাঁড়ায় ৫,১৩৫ ডলার৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
বাড়ির বাজার করা
সপ্তাহে ৩ ঘণ্টা যদি গৃহিণীরা বাজার-সদাইয়ে ব্যয় করেন, তাদের পামিশ্রমিক ঘণ্টায় ১০ ডলার করে ধরলে বছরে দাঁড়ায় ১,৬৯৬ ডলার৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা
সপ্তাহে আধা ঘণ্টা করে এ কাজে সময় দেন গৃহিণীরা৷ ঘণ্টায় এ কাজের জন্য তাদের যদি ২৪ দশমিক ৯০ ডলার দেয়া হয় বছরে দিতে হবে ৬৪৭ ডলার৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
অন্যান্য কাজ
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গৃহিণীদের স্বামী, ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যেও কাজ করতে হয়৷ স্বামীর টিফিন প্রস্তুত করা, অফিসে যাওয়ার তার কাপড়-চোপড় প্রস্তুত রাখা এসব৷
-
একজন গৃহিণীর কাজের মূল্য কত?
বাংলাদেশের গবেষণা
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলছে, একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজ করেন৷ পুরুষদের ক্ষেত্রে এ কাজের গড় সংখ্যা ২ দশমিক ৭৷ গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের নারীদের বার্ষিক মজুরিবিহীন গৃহকাজের অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা৷ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ
গৃহিণীকে তার প্রাপ্য মূল্য দেওয়া কখনই সম্ভব নয়৷ তবে তাঁকে যা দেয়া যায় তা হচ্ছে সম্মান, শুধুই ‘সম্মান'৷ এই মন্তব্য ডয়চে ভেলের পাঠক আনিসুর রহমানের৷
আবদুল্লাহ আল-মামুনও খুব সুন্দর করে জানিয়েছেন তাঁর মনের কথা৷ লিখেছেন, ‘‘যারা গৃহের রানি, তারাই হচ্ছে গৃহিণী! রানির মজুরি হয় নাকি?''
এছাড়া ‘অমূল্য' – এই একটি মাত্র শব্দের মধ্য দিয়েই গৃহিণীদের কাজের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন পাঠক মোহাম্মদ আলী৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
শিশুদের অবসর সময়
সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ছোট বয়স থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের অনেক কিছু শিখতে হয়, অনেক কিছু করতে হয়৷ তাই শিশুরা যাই করুক না কেন ওদের খেলার সময় প্রয়োজন৷ বন্ধুদের সাথে খেলার মধ্য দিয়েই যে ওরা সমস্ত স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
টিভির সামনে আধঘণ্টার বেশি নয়!
টেলিভিশন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট – এগুলো বিনোদন আর তথ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপ বাড়ায়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, একঘণ্টা কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসে থাকার চেয়ে খোলা বাতাসে খেলাধুলা বা ব্যায়াম শিশুদের বেশি দরকার৷ আর তিন বছরের কম বয়সি শিশুদের দিনে আধঘণ্টার বেশি টিভি দেখা উচিত নয়৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
অ্যান্টি স্ট্রেস
বাড়ি স্ট্রেমুক্ত করতে ঘরে ফেরার পর সবাই কিছুক্ষণ সোফায় বসে আড্ডা দিন৷ তারপর খাবার টেবিলে সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা বা জরুরি কিছু থাকলে, তা নিয়ে আলোচনা করুন৷ যে কোনো সমস্যা সমাধান একত্রে করলে অনেক সহজ হয়৷ শিশুরা ছোট থেকেই যেন এটা শেখে, তার চেষ্টা বড়দেরই করা উচিত৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
শিশুদের শিশুর মতো বড় হতে দিন
কিন্ডারগার্ডেনে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে৷ নিজেকে চেনা এবং অন্যে সাথে সম্পর্ক তৈরি করা সেখানেই শেখে শিশুরা৷ পায় সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ৷ তাই লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন নির্ভয়ে সব কিছু বলতে ও করতে পারে৷ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়াটা মূল লক্ষ্য নয়, জরুরি হলো আত্মবিশ্বাসী হতে পারা৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
খুঁজে বের করতে হবে...
প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে পড়াশোনা বা হোমওয়ার্ক করতে শিশুর মনোযোগ কখন সবচেয়ে বেশি৷ সরাসরি স্কুল থেকে আসার পর নাকি কিছুক্ষণ খেলার পর? সবচেয়ে বড় কথা – শিশুরা যাই করুক না কেন, মাঝে মাঝেই বিশ্রাম নিতে হবে তাদের৷ অর্থাৎ যে কোনো কাজের মাঝে কিছুক্ষণ হাঁচটাচলা, গান শোনা বা মুক্ত বাতাস সেবন করা৷ যা শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে নয়, বড়দেরও প্রয়োজন৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
শিক্ষার ধরন
আজকের দিনের চাকরিজীবী মা-বাবার জীবন চলে অতি দ্রুতগতিতে এবং তাঁদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে শিশুরা হাঁপিয়ে ওঠে৷ শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সব কিছুই সন্তানদের শেখানোর চেষ্টা থাকেন বাবা-মা৷ তাই তাঁরা নামি-দামি আধুনিক কিন্ডারগর্ডেনগুলোতে সন্তানকে ভর্তি করেন৷ তবে কিন্ডারগার্টেন বা স্কুল ভবিষ্যত জীবনে শিশুর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে একটা পাথেও মাত্র৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
খেলার ছলে শিক্ষা
জার্মানির বোখুম শহরের একটি স্কুলে পড়াশোনাটা নতুনভাবে বা খেলার ছলে সেখানো হয়৷ সেখানে ‘প্রোমোশন’ বা ভালো রেজাল্টই বড় কথা নয়৷ ছোট ছেলে-মেয়েরা কারিগরি ক্লাসে তরোয়াল তৈরি করতে শেখে সেখানে৷ খেলার ছলে শেখে নানা কায়দাকানুন৷ তাছাড়া প্রতিটি শিশুর কাজ করার ধরনও আলাদা৷ তাই শিশুরাই প্রস্তাব দেয়, তারা কী করতে চায় বা না চায়৷ শিশুদের ইচ্ছেকে পুরো দাম দেওয়া হয় এখানে৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
ভয় ছাড়া শিক্ষা
স্কুলে খুব ভালো ফল করতে হবে – এর জন্য কোনো চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়৷ কারণ এতে শিশুদের মধ্যে একটা ভয় তৈরি হয় আর ভয় মানুষের আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠতে সবচেয়ে বড় বাধা৷ তবে একটি কথা বাবা-মাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি শিশুই আলাদা৷ অর্থাৎ সবার গ্রহণযোগ্যতা সমান নয়৷ ‘আমাদের সন্তানের চেয়ে অন্য বাচ্চার রেজাল্ট ভালো কেন?’ – এ প্রশ্ন কখনই করা উচিত নয়৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
ভয় মস্তিষ্ককে বিগড়ে দেয়
পরীক্ষার হলে সব কিছু ভুলে যাওয়াটা মোটেই নতুন নয়৷ একে আমরা ‘ব্ল্যাকআউট’ বলে জানি৷ এমনটা কিন্তু শুধুমাত্র ভয়ের কারণেই হয়ে থাকে৷ ‘‘ভয়ের সময় মানুষের শরীরে স্ট্রেস হরমোন ছড়িয়ে পড়ে এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায় বা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়৷ অর্থাৎ শেখা বা জানা বিষয়ও মনে পড়ে না৷’’ বলেন জার্মানির মস্তিষ্ক গবেষক৷
-
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়তে বড়দের ভূমিকা
বর্তমানে আমরা, অর্থাৎ বড়রা যে মানসিক চাপের মধ্যে জীবনযাপন করছি, তা ইচ্ছে করে নয়৷ পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করছে৷ তাই যতটা সম্ভব শিশুদের মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন৷ কারণ শিশু বয়সেই তৈরি হয় ব্যক্তিত্ব, তাদের আত্মবিশ্বাস, যা বড় হতে, সুস্থ মানুষ হতে অনেক বেশি প্রয়োজন৷
লেখক: নুরুননাহার সাত্তার