রোহিঙ্গাদের কষ্টে ডয়চে ভেলের পাঠক রফিকুল ইসলাম সোহেল কষ্ট পাচ্ছেন৷ ফেসবুক পাতায় তাঁর মন্তব্য, ‘ ‘রাখাইনদের উপরে এই হামলা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হারমানাচ্ছে ৷ মানবতা শুধু ক্ষমতাবান দেশগুলোর জন্য৷ আজ কোথায় জাতি সংঘ? ''
জাতিসংঘ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন তা পাঠক নিলয়ও বুঝতে পারছে না৷
মর্তুজা চৌধুরীর লিখেছেন, ‘‘মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্বমানবতার কন্ঠ আজ নিরব কেন? মানুষ হত্যা নয়, মুসলিম হত্যা চলছে বলে? মুসলিমবিদ্বেষ আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, এ ঘটনা তারই স্বাক্ষর বহন করছে৷''
মারুফ আহমেদ মনে করেন এটা একটা বড় ইস্যু৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এখানে যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর প্রধানদের এগিয়ে আসতে হবে এবং জাতিসংঘের সাথে বসতে হবে এবং এর সমাধান করতে হবে৷ এভাবে তো চলতে পারে না৷ আমাদের শুধু দেখে দেখে দু'চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নাই৷''
‘‘ওরা রোহিঙ্গা নয়, ওদের বড় পরিচয় হচ্ছে ওরাও মানুষ'' – এ কথা বলে রোহিঙ্গাদের বাঁচানোর তাগিদ দিয়েছেন মো. রঞ্জু৷
-
শরণার্থী: জলবায়ু পরিবর্তন যার অন্যতম কারণ
রোহিঙ্গা শরণার্থী
১৯৯১-৯২ সালে আড়াই লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী সামরিক জান্তার নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়৷ ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও ৭৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে৷
-
শরণার্থী: জলবায়ু পরিবর্তন যার অন্যতম কারণ
জলবায়ু উদ্বাস্তু: প্রতি সাতজনে একজন
বাংলাদেশের জলবায়ু শরণার্থীদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্লাইমেট রিফিউজি’ বা এসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ৪৫ জনের মধ্যে ১ জন জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে৷ আর বাংলাদেশে সংখ্যাটা হবে প্রতি সাতজনে একজন৷ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামীতে বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে৷
-
শরণার্থী: জলবায়ু পরিবর্তন যার অন্যতম কারণ
জলবায়ু উদ্বাস্তু: প্রতি বছর ২,০০০ মানুষ আসছে ঢাকায়
আগে কেবল দারিদ্র্যের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসত মানুষ৷ আর এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঢাকায় আশ্রয় নিচ্ছে অনেকে৷ প্রতি বছর নতুন করে দুই হাজার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঢাকায় ঠাঁই নিচ্ছে৷
-
শরণার্থী: জলবায়ু পরিবর্তন যার অন্যতম কারণ
আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু সংস্থা আইওএম-এর রিপোর্ট
বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রতি বছর ঢাকার বাইরে থেকে কমপক্ষে ৪ লাখ মানুষ এই শহরে আসছে৷ আর আইওএম বলছে, ঢাকার বস্তিতে যেসব মানুষ থাকে, তার মধ্যে ৭০ ভাগই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘর-বাড়ি হারিয়ে এই শহরে আশ্রয় নিয়েছে৷
-
শরণার্থী: জলবায়ু পরিবর্তন যার অন্যতম কারণ
ইউরোপে শরণার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে
গত বছরের প্রথম তিন মাসে ইটালিতে গিয়েছিল মাত্র একজন বাংলাদেশি শরণার্থী৷ কিন্তু ২০১৭ সালে সেটা আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে৷ প্রথম তিন মাসে ইটালিতে বাংলাদেশি শরণার্থী এসেছে ২ হাজার ৮শ’ জন৷ নৌকায় ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে পৌঁছেছেন তাঁরা৷
-
শরণার্থী: জলবায়ু পরিবর্তন যার অন্যতম কারণ
১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে
দালালদের ১০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে থাকেন এই শরণার্থীরা৷ প্রথমে যান দুবাই বা তুরস্ক, সেখান থেকে লিবিয়া হয়ে ইটালিতে পৌঁছান তাঁরা৷ এই দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিতে তাঁদের অনেকের কয়েক বছর লেগে যায়, প্রাণ হারান কেউ কেউ৷
‘‘গুলির মুখে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা' এই শিরোনামে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনটি পড়ার পর পাঠক রাতুল হাসান সোহাগ ডয়চে ভেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনাদের সংবাদটি প্রচারণার ওপর যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি, ওরা দুদিকেই গুলির মুখোমুখি নয়৷ ওরা শুধু মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলির মুখে আর বাংলাদেশের বিজিবির বাধার মুখে৷ বাংলাদেশের বিজিবি তাদের কখনো গুলি করেনি৷ করলে এতগুলো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে জায়গা পেতো না৷ আশা করি, আপনাদের ব্যাপারটা বোঝাতে পেরেছি৷''
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারেই পাঠিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করেন পাঠক সজল মাহমুদ৷ আসিকিন হক ভাবছেন, নিজের দেশের কথা৷ তাঁর মতে, বাংলাদেশেই এত সমস্যা, এর ওপর রোহিঙ্গাদের বাড়তি ঝামেলা নেওয়ার প্রয়োজন নেই৷
তবে মোহাম্মদ লোকমান হাকিম বলছেন ‘‘আমি চাই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হোক৷ ধর্মের করণে নয়, মানুষ হিসেবে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল৷ তাহলে বাংলাদেশে কেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় হবে না?''
সংকলন: নুরুননাবহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
স্বামীর খবর জানেন না তিনি
রামিদা বেগমের স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ এরপর তাঁদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ তার সপ্তাহখানেক পর পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান তিনি৷ ফলে স্বামীর খবর এখন জানেন না রামিদা৷ ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন তাঁর কন্যার বয়স ছিল ১০ দিন৷ তখনও মেয়ের কোনো নাম দেয়া হয়নি রামিদার৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
এই শিশুর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে
স্বামীকে মিয়ানমারের সেনারা হত্যা করায় বাবামা-র সঙ্গে বাংলাদেশে চলে যান ১৮ বছরের নূর কায়েস৷ কোলে তাঁর ২৬ দিনের সন্তান, যার এখনও কোনো নাম দেননি তিনি৷ ছবিটি ৯ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
সাত দিনের মেয়ে
ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন আসমত আরার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র সাত দিন৷ মাসখানেক আগে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান৷ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার আগে তাঁর শ্বশুরকেও হত্যা করা হয়৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
সন্তানদের বাঁচাতে বাংলাদেশে
একমাস বয়সি ছেলে সন্তানের সঙ্গে রাজুমা বেগম৷ যখন বাংলাদেশে আসছিলেন তখন গর্ভবতী ছিলেন তিনি৷ সঙ্গে ১১ মাসের আরেকটি সন্তানও ছিল৷ ‘‘আমি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি কারণ মিয়ানমারের ভয়ের মধ্যে ছিলাম৷ আমার সন্তানদের বাঁচাতে চেয়েছি আমি’’, রয়টার্সকে বলেন বেগম৷ ছবিটি ১২ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
দেশে ফিরতে আগ্রহী সানোয়ারা
৯ ফেব্রুয়ারি তোলা এই ছবিতে ২৫ দিনের কন্যা কোলে ২০ বছর বয়সি মা সানোয়ারা বেগমকে দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় আড়াই মাস আগে স্বামীর সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি৷ এখন আছেন কক্সবাজারের কুতুপালাং আশ্রয়কেন্দ্রে৷ মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভাল হলে নিজ ঘরে আবারও ফিরে যেতে চান সানোয়ারা৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা এই ছবিতে মারিজানকে তাঁর ২৫ দিন বয়সি কন্যা সন্তান সহ দেখা যাচ্ছে৷ পাশে তাঁর ছেলে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাসখানেক আগে তাঁরা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
কন্যার জ্বর
দু’মাস বয়সি মেয়ের জ্বর কিন্তু মা আরাফা বেগম জানেন না ক্লিনিক কোথায়৷ আড়াই মাস আগে স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেনি তিনি৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না
মিনারা বেগমের এক মাস বয়সি সন্তান পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, কারণ তার মা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পান না৷ ফলে স্বাস্থ্যকর না হলেও স্থানীয় বাজার থেকে গুঁড়া দুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে তাকে৷ ছবিটি ১০ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
এলোপাথাড়ি গুলি
১৬ দিনের সন্তান কোলে মা আমিনা৷ ‘‘মাস দেড়েক আগে মিয়ামারের সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ আমি কোনোরকমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বেঁচেছি৷ তারা আমার চাচা আর ছোটভাইকে ধরে নিয়ে গেছে৷ তারা বেঁচে আছে কিনা জানিনা’’, ৮ ফেব্রুয়ারি রয়টার্সকে কথাগুলো বলেন তিনি৷
-
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
বয়স মাত্র একদিন
ফাতেমার সন্তানের বয়স মাত্র একদিন৷ ছবিটি ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা৷ মিয়ানমারে তাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাস দুয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন৷ এখন তাঁর স্বামী দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷
লেখক: জাহিদুল হক