‘‘আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বাংলাদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি৷ আমাদের বিখ্যাত কবি, লেখকদের আদি বাড়ি অবিভক্ত বাংলায় ছিল৷ যেমন মধুসূদন, জীবনানন্দ দাস, কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসীমউদ্দীন, সৈয়দ মুজতবা আলি৷ ওখানে অনেক কিছুই দেখার আছে৷ সেই স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলি পরিদর্শনের ভীষণ ইচ্ছে হয়৷ ইচ্ছে হয় বাংলাদেশকে ঘুরে ঘুরে দেখার৷'' পাঠক মলয় মন্ডল এভাবেই তাঁর আবেগ-অনুভূতি কথা প্রকাশ করেছেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায়৷ তবে বাংলাদেশি কিছু পাঠক নাকি ফেসবুকে ভারতীয়দের অশোভন কথাবার্তা লেখেন, তাই মলয়ের বাংলাদেশে যেতে সাহস হয় না৷
তবে আমানুল হক বিজয় পাঠক মলয়কে অভয় দিয়ে ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘ পাঠক মলয়কে অবশ্যই শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানাই৷ বাংলাদেশে আসেন, এমন আতিথেয়তা এবং আন্তরিকতা সারা বিশ্বের কোথাও পাবেন না৷''এম এইচ কলিন্সও বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়েছেন মলয়কে৷
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
একান্ত আগ্রহের
বাংলাদেশের শিল্প ও পণ্যসামগ্রী নিয়ে কৌতূহল সারা বিশ্বের! শহর কলকাতাও তার উর্ধে নয়৷ কলেজ স্ট্রিটে আয়োজিত এই মেলা ঘিরে মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো৷
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
ঐতিহ্যে খাদি
একুশ শতকে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে খাদির পোশাক৷ কুমিল্লার মহম্মদউল্লার স্টলে ছিল খাঁটি খাদি বস্ত্র সামগ্রীর পসরা৷ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাদির পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, গামছা এপারের নজর কেড়েছে বৈকি!
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
দৈনন্দিনতার অঙ্গ
দৈনন্দিনতায় বাঙালির বড় প্রয়োজনীয় বিছানার চাদর৷ ওপার বাংলার ঢাকা, কুষ্টিয়া, কুমারখালি থেকে আসা বিছানার চাদর ঘিরে এপার বাংলাতেও যথেষ্ট আগ্রহ দেখা গিয়েছিল৷
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
জুতা আবিষ্কার!
ক্ষতিকারক প্লাস্টিককে রুখতে পাট-ই আমাদের মূল ভরসা৷ মেলায় পাটের তৈরি হরেক দ্রব্যের সম্ভারে চমক ছিল জুতো৷ ঢাকার সোহেল রানার ‘জুটেস্কো’ নানারকম ব্যাগের পাশাপাশি তৈরি করে এই জুতো৷
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
গৃহিণীর নজর
মহিলাদের অনেকেরই নজর ছিল গৃহসজ্জার উপকরণের দিকে৷ ময়মনসিংহের লাইজু আক্তারের কুশন কভার বা গৃহসজ্জার নানা উপকরণে গৃহিণীরা বেশ মজে ছিলেন৷
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
মসলিনের দেশ
বস্ত্রশিল্পে বাংলাদেশের খ্যাতি বিশ্বজোড়া৷ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়৷ এমন নজরকাড়া সামগ্রীর কদর তো হবেই!
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
শিল্প বটে!
রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি এলাকার উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা তৈরি করেন সুদৃশ্য ছাতা, ব্যাগ, পাখা৷ বাঁশের তৈরি এমন ইকো-ফ্রেন্ডলি ছাতা রীতিমতো যে কোনো বহুজাতিক সংস্থাকে চমকে দিতে পারে৷
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
স্বনির্ভরতার পথে
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের মধ্যে ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন মহিলারা৷ ক্রমশ তাঁরা স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন৷ তেমনই একজন চাঁদপুরের সনজিদা খানম৷ তিনি তাঁর নিজস্ব উদ্যোগের পসরা নিয়ে এসেছিলেন কলকাতায়৷
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
কেবলই উঁকি
মেলার উদ্দেশ্য নিজের সামগ্রী জনতার সামনে তুলে ধরা, নিছক বিক্রি নয়৷ তাই অজস্র ক্রেতা উঁকি দেন স্টলে স্টলে৷ একাংশ কেনাকাটা করেন৷ বাংলাদেশের পণ্যেও ব্যতিক্রম হয়নি উঁকিঝুঁকির৷
-
এপারের উৎসবে শরিক ওপার
শাড়ি নজরকাড়া
ঢাকাই জামদানির বিশ্বজোড়া নাম! কুমিল্লার পারভিন আক্তারের জামদানি পুজোর বাজারে হটকেকের মতো সেল হওয়ারই জিনিস! ভারতীয় মুদ্রায় তিন হাজার টাকা থেকে এর দাম শুরু৷ নিজস্ব তাঁতি দিয়ে তৈরি ঢাকাই জামদানির পাশে ছিল ফেব্রিক ও অ্যাপ্লিকের নজরকাড়া শাড়ি৷
লেখক: পায়েল সামন্ত (কলকাতা)
আর মোহাম্মদ রেহান খান লিখেছেন, ‘‘সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে পশ্চিম বঙ্গের এক দম্পতির সাথে দেখা হলো৷ আমি তাঁদের ছবি তুলে দেওয়ার পর তাঁরা লাইব্রেরি ঘুরে দেখলেন৷ তাঁদের সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগলো৷''
পাঠক দিন হায়দার লিখেছেন, ‘‘পশ্চিম বাংলার মানুষের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রাণের সম্পর্ক৷ পশ্চিম বাংলার লাখ লাখ মানুষের আদি বাড়ি এই বাংলাদেশেই৷ তবে যাদের ইতিহাস জ্ঞান নেই, তারা তা অস্বীকার করবে৷ শুভেচ্ছা জানাই ওপারের বাঙালিদের৷''
তবে আশীষ বিশ্বাস দুঃখ করে লিখেছেন, ‘‘জীবন জীবিকার তাগিদে মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হয়, এটা ঠিক৷ কিন্তু তার নিজের জায়গায় ফিরতে পাসপোর্ট বানাতে হয়, এটা আমাকে কষ্ট দেয়৷''
আর দীপক দে-র বক্তব্য এরকম, ‘‘একদিন আমরাও বাংলাদেশে বাস করেছি৷ তাই একটা টান আছে দেশটার উপর৷ কিন্তু আজ আর দেশটা আমাদের জন্য না৷ যারা টিকে আছে, তাদের কথা শুনে এটুকু বুঝি! তবে এটা ঠিক, ধর্মান্ধতা থাকলে শান্তি থাকে না!''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
লোক ও কারুশিল্প মেলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রতি বছর মাসব্যাপী বসে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব৷ সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে প্রতি বছর এ মেলা শুরু হয় জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ লোকজ মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকার সব রকম লোকজ সংস্কৃতি ও কুটির শিল্প সামগ্রী নিয়ে উপস্থিত হন শিল্পীরা৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
বৈশাখী মেলা
এটি মূলত সার্বজনীন লোকজ মেলা৷ বাংলা নতুন বছরের শুরুতে বাংলাদেশের সর্বত্রই আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার৷ নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তোলে এ বৈশাখী মেলা৷ স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সব প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী এই মেলার মূল আকর্ষণ৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
রাস মেলা
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের দুবলার চরে প্রতিবছর কার্তিক-অগ্রহায়নের পূর্ণিমা তিথিতে বসে রাসমেলা৷ অনেক হিন্দু পুন্যার্থী আর পর্যটক এ উৎসবে শামিল হতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন৷ এ উপলক্ষ্যে পাঁচ দিনের একটি মেলাও মেলা বসে দুবলার চরে৷ মেলাটি চলে আসছে ১৯২৩ সাল থেকে৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
লাঙ্গলবন্দের মেলা
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলমম্বীরা চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী বা অশোকাষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নানের জন্য সমবেত হন৷ এ উপলক্ষে তিন দিন ব্যাপী মেলা বসে ব্রহ্মপুত্রের দুই তীরে৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
গুড়পুকুরের মেলা
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটি ৩০০ বছরেরও বেশি৷ বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের শেষে অনুষ্ঠিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়৷ চলে একমাস৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
পোড়াদহের মেলা
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ি এলাকায় ইছামতি নদীর তীরে আড়াইশ বছর ধরে বসে ব্যতিক্রমী এক মেলা৷ প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার বসে দুই দিনের এ মেলা৷ এ মেলার মূল আকর্ষণ বড় বড় আকৃতির নানা রকম মাছ৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
রাশ লীলার মেলা
মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা কমলগঞ্জ আর আদমপুরে কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব রাস লীলা৷ এ উপলক্ষে তিন দিনের মেলা বসে কমলগঞ্জের মাধবপুর ও আদমপুরের সনাঠাকুর মণ্ডপ এলাকায়৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
রথের মেলা
সাধারণত বাংলা বছরের আষাঢ় মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথের মেলা বসে৷ সবচেয়ে বড় রথের মেলা বসে সাভারের ধামরাইয়ে৷ এছাড়া কুষ্টিয়ার রথখোলার মেলা, রাজশাহীর পুঠিয়ার রথের মেলা, সিলেটের লামাপাড়া রথযাত্রার মেলা উল্লেখযোগ্য৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
লালন মেলা
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামে মরমী শিল্পী লালন সাঁইয়ের সামাধিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দুইবার লালনমেলা অনুষ্ঠিত হয়৷ তার একটি হচ্ছে লালন সাঁইজির তিরোধান তিথি উপলক্ষে এবং অন্যটি দোলপূর্ণিমায় লালন প্রবর্তিত সাধুসঙ্গ উপলক্ষে৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
মধু মেলা
যশোরজেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে প্রতি বছর বসে সপ্তাহব্যাপী মধু মেলা৷ বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে হয় এ মেলার আয়োজন৷
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিচিত্র কয়েকটি মেলা
বটতলায় বৌমেলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চারশ’বছরের পুরানো একটি বট গাছকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে বউ মেলা৷ বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় দিনে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা পরিবারের সুখ শান্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানকার বট গাছকে পূজা করেন৷ এ উপলক্ষে পাঁচদিনের মেলাও বসে বট গাছের চারপাশে৷
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন