আবদুর রাকিব মুসা ভিআইপিদের কারণে অসংখ্যবার বিড়ম্বনায় পড়ার কথা জানিয়েছেন৷ ঢাকায় যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছার কারণে তিনি তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘আমি যদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতাম ভিআইপি নামক শব্দটাই নিষিদ্ধ করে ফেলতাম৷ গণতন্ত্রের দেশে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে এটাই নিয়ম৷ কেন একজন অসংখ্য মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে তথাকথিত ভিআইপি সুবিধা ভোগ করবে?''
সোহেল রানা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘একবার ৩ ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, কারণ ভিআইপি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন৷ উনি জেগে না ওঠা পর্যন্ত পুলিশ এলাকা ত্যাগ করতে দেয়নি৷''
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বেশ মজা করে লিখেছেন, ‘‘কী যে বলেন, আমাদের দেশে ভিআইপিদের কারণে জনদুর্ভোগ কোনো ব্যাপার নাকি?''
আল মামুন শাওন নাকি একজন শীর্ষ ভিআইপির জন্য এক রাতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছিলেন, তবে তাঁর ভোগান্তিটা ঠিক কেমন ছিলো, তা তিনি পরিষ্কার করে লেখেননি৷
আর পাঠক তুষার আহমেদতো রাস্তায় ভিআইপির কারণে দেরি হওয়ায় তাঁর চাকরির ইন্টারভিউ-ই মিস করেছেন৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
রফিকুল ইসলাম নাসিম, পর্যটন ব্যবসায়ী
ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তাঘাট অপ্রতুল৷এরমধ্যে নিত্য যানজটের সঙ্গী এই শহরে সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা ভিআইপি মুভমেন্ট৷ভিআইপি সংস্কৃতির কারণে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের অনেক মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যার আমিও একজন ভুক্তভুগী৷অফিস সময়ে ভিআইপিদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত রেখে সাধারণ মানুষের যাতায়াতকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন, সাথে সাথে জরুরি সেবাদানকারী যানবাহনকে যে-কোনো পরিস্থিতিতেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া উচিত৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
মুশফিকা রুবাইয়াৎ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
প্রতিদিনই আমরা ভিআইপি ভোগান্তির শিকার হই৷ উত্তরা থেকে আসার পথে ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে প্রায়ই আটকা পড়ি৷ একেকটা সিগন্যালে আধঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিটও আটকে থাকতে হয়৷ শুধু যে রাস্তাই আটকে থাকে এমন নয়, রাস্তা পার হওয়ারও উপায় থাকেনা৷ ফুটপাথেও হাঁটতে দেয়া হয়না৷ একারণে অনেক সময় পরীক্ষার হলেও দেরিতে ঢুকতে হয় আমাকে৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
রাতুল চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
বাংলাদেশে ভিআইপি সংস্কৃতিটা অনেকটাই অপসংস্কৃতি মনে হয় তার কাছে৷ কারণ তিনি মনে করেন, দেশের একজন ভিআইপি তার নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে তার কোনো জরুরি কাজকে আটকে রাখতে পারেনা৷ তবে তাদেরও যেহেতু জরুরি চলাফেরা করতে হয় সেজন্য আমরা ভিন্ন কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারি, যাতে একজন সাধারণ মানুষও সামান্য ভোগান্তির শিকার না হন৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
আসিফ আহমেদ, চাকুরিজীবী
তার মতে ভিআইপিদের জন্য বিশেষ বিশেষ সুবিধা দেয়াটা দোষের কিছু নয়৷ তবে সেটা দিতে হবে অবশ্যই সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে না ফেলে৷ ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে অনেক সময় অফিসে পৌঁছুতে দেরি হয়৷ তবে রাস্তা বন্ধ করে অন্যদের বিপাকে ফেলে ভিআইপি সংস্কৃতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
লুৎফর রহমান, শিক্ষক
বিভিন্ন সময় দেখা যায় হাসপাতালে কোনো ভিআইপি ভর্তি হলে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়৷ এটা বন্ধ করা উচিত৷ সাধারণ রোগীরা এতে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হন৷ মন্ত্রী এমপি হলে তো ডাক্তাররা তাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন৷ এজন্য ভিআইপিদের বিশেষ কোনো হাসপাতালেই নেয়া উচিত৷ এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সকে যে-কোনো ভিআইপি চালাচলের ঊর্ধ্বে আগ্রাধিকার দেয়া উচিত৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
শাওলিন শাওন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
ভিআইপি বিড়ম্বনার সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হয়েছি রাস্তাঘাটে৷ কারণ অসংখ্যবার আমার ক্লাস মিস হয়েছে৷ কারণ ভিআইপি আসবে বলে এক ঘণ্টার বেশি সময়ও রাস্তায় আটকে থাকার অভিজ্ঞতা আছে৷ এসময়ে ফুটওভার ব্রিজও বন্ধ করে দেয়া হয়৷ তবে তার মতে ভিআইপিদের যেহেতু চলাচল করতেই হবে সেহেতু আলাদা একটি ইমার্জেন্সি লেন করা যেতে পারে৷ তাহলে হয়তো সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
তৌকির হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বড় ধরণের ভিআইপি এলে তাদেরকে অভিনন্দন জানাতে আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক আনা হয়৷ দেখা যায় দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ গ্রামাঞ্চলেও এটা দেখা যায় যে, কোনো মন্ত্রী গেলে রাস্তার দুইপাশে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ এ ধরণের ভিআইপি সংস্কৃতি থাকা উচিত নয়৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
আবু রায়হান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
তার মতে ভিআইপি লোকজনের হয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়৷ তাই চলাচলের ক্ষেত্রে তাদের দিকটিও দেখতে হবে৷ তবে অবশ্যই ভিআইপি চলাচলে সাধারণ মানুষ যেন দুর্ভোগের শিকার না হন সেটাও দেখতে হবে সবার আগে৷
-
ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছে সাধারণ মানুষ
শরিফুল হাসান শুভ, ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত
যে ভিআইপি সংস্কৃতি সাধারণ মানুষেকে দুর্ভোগে ফেলে সেসবের ঘোর বিরোধী তিনি৷ তবে ভিআইপিদের যেহেতু দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম সারতে হয় সে কারণে তাদের জন্য এমন কোনো উপায় বের করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে না হয়৷
লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান (ঢাকা)
মিজান রহমানকে একদিন রাত নয়টার সময় কাকলী থেকে মিরপুর ১৪ হেঁটে যেতে হয়েছে৷
মোহাম্মদ ফয়সাল লিখেছেন, ‘‘বিগত এক দশকে দেশে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা বোধহয় একটু বেশিই বেড়ে গেছে৷''
পাঠক দিন হায়দায় দুঃখ করে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশে এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য করলেও কোনো লাভ নেই৷ কারণ নিজেদের কমেন্টেস নিজেরাই পড়ি৷ যাদের উদ্দেশ্যে লিখবো তারা তো আর পড়ছেনা৷''
ভিআইপিদের কারণে ঢাকার জনদুর্ভোগের বিষয়টি ডয়চে ভেলে পাঠকদের সামনে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরায় আন্তরিক ধন্যবাদ দিয়েছেন পান্থ চৌধুরী৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: জাহিদুল হক