গত ৫ই জানুয়ারি খালেদা জিয়া ‘অবরুদ্ধ' অবস্থায়ই গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন৷ তিনি নয়াপল্টনে বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের' একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে চাইছিলেন৷ কিন্তু তাঁকে বের হতে দেয়া হয়নি৷ এরপর সেদিন বিকেলে ৬ই জানুয়ারি থেকে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া৷ এই অবরোধ কর্মসূচি এখনো চলছে৷
এদিকে পুলিশ প্রত্যাহারের পর সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়ার মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শাইরুল কবির খান জানান,‘ পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হবেন না৷'
আর খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সরিয়ে নেয়া সরকারের নতুন চাতুরী ছাড়া আর কিছুই নয়৷''
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সোমবার বলেছেন, ‘‘সংলাপের দাবি করার আগে নাশকতা বন্ধ করতে হবে৷'' তিনি নাশকতা প্রতিরোধে সরকারকে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন ৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইট পাঠক ও ফেসবুক বন্ধু মোস্তফা কামাল ও শেখ ফরিদ জানিয়েছেন, ‘‘এটা সরকারের নতুন চাল৷'' অন্তহীন পলাশ মনে করছেন, ‘‘এটা উনার কৌশল৷''
পাঠক সুমিত তাহেরের পাল্টা প্রশ্ন, খালেদা জিয়া এখন বাসায় যায়না কেন ?
দেশের রাজনীতিকদের রাজনীতি নিয়ে সন্দিহান মাহমুদুল হাসান৷ ডিডাব্লিউ-র ফেসবুকে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এতদিন তো বলছে পুলিশ নাকি বের হতে দেয়না৷ এখন
কিসের সমস্যা? হায়রে দেশের রাজনীতি, এরা নাকি দেশের ভাল চায়!''
এ বিষয়ে ফেসবুকে জুয়েল জাহির বলছেন ‘‘উনি অবরুদ্ধ ছিলেন না৷ অবরুদ্ধ হলে দলের লোকজন দেখা করলো কী ভাবে, খাওয়া ভেতরে গেল কী ভাবে? আসলে সবই ভণ্ডামি৷ মিথ্যার একটা সীমা থাকা উচিত৷''
মজিবর রহমান দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে খুবই চিন্তিত৷ তাঁর প্রশ্ন ‘‘গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের কী হবে?''
পাঠক নিশ্চুপ রকিকে মনে হচ্ছে তিনি বর্তমান সরকারের পতন নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত৷ তিনি বলছেন ‘‘হাসিনার পতন হবেই, ইনশাল্লাহ৷''
আহমেদ তাহমেদের অনুরোধ, ‘‘বুবু, আপনার নাটক বন্ধ করুন৷''
দিদার শেখের সহজ প্রশ্ন ‘‘তিনি কার্যালয়ে থাকলে সরকারের কী দোষ?''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন