1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আইন প্রভাবশালীদের দিকে একটু হেলে পড়ে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৩ জুন ২০২১

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর মামলার প্রধান আসামি শহীদুল ইসলাম স্বাধীন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/3vQyM
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

তবে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার তরুণ ঝুমন দাস আপন জামিন পাননি৷ তিনি এখনও কারাগারে৷ উচ্চ আদালতে তার জামিনের শুনানি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে৷

স্বাধীনের জামিনআর ঝুমনের কারাগারে থাকা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, প্রভাবশালীদের দিকে আইন একটু হেলে পড়ে৷ সেটা অর্থশালী হোক আর ক্ষমতার দিক দিয়ে প্রভাবশালী হোক অথবা পেশি শক্তির অধিকারীই হোক৷ এটা কোনভাবেই কাম্য নয়৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা এক সময় শেষ হয়ে যাবে৷ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসনথাকাটা জরুরি৷ আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে অপপ্রয়োগ হচ্ছে সেটা তো আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি৷ এই ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে এই আইনটির সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না৷’’ 

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসন থাকাটা জরুরি: অধ্যাপক মিজানুর রহমান

শুধু স্বাধীন নয়, দুর্নীতির মামলায় প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে জামিন পেয়েছেন যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান৷ গত ৯ মার্চ ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন৷ যদিও বিষয়টি এতদিন জানা যায়নি৷ একইভাবে ঘুস গ্রহণ ও অর্থপাচার আইনের মামলায় বরখাস্তকৃত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিককেও জামিন দিয়েছেন আদালত৷

একই ধরনের দুর্নীতির মামলায় কারও জামিন হচ্ছে, আবার কারও হচ্ছে না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢালাওভাবে তো এগুলো নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না৷ প্রতিটি মামলাই আলাদা৷ কোন মামলায় কী আছে সেটা দেখে বলতে হবে৷ হুট করেই এগুলো নিয়ে মন্তব্য করাও ঠিক হবে না৷’’

তবে সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একই ধারার মামলায় আদালত একজনকে জামিন দিতে পারেন, আরেকজনকে জামিন নাও দিতে পারেন৷ এটা আদালতের এখতিয়ার৷ আদালত যেটা দেখেন একই ধারার দুর্নীতির মামলা হলেও কার দুর্নীতির পরিমাণ কত? একজন হয়ত অবৈধভাবে তিন লাখ টাকা উপার্জন করেছেন৷ অন্যজন একশ' কোটি টাকা উপার্জন করেছেন৷ দু'টি মামলার ধারা কিন্তু এক৷ কিন্তু আদালত তিন লাখ টাকা দুর্নীতি করা ওই লোকটিকে আগে জামিন দেন৷ এই কারণে দেখবেন দুর্নীতির মামলার শুরুতেই আদালত শোনেন কত টাকার দুর্নীতি করেছেন৷’’

দুর্নীতির মামলার শুরুতেই আদালত শোনেন কত টাকার দুর্নীতি করেছেন: শাহদীন মালিক

গত ১৭ মার্চ হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয় নোয়াগাঁও গ্রামের ৮৮টি হিন্দু বাড়িতে৷ এ সময় পাঁচটি মন্দির ভাঙচুর করা হয়৷ ঝুমন দাস আপনের ফেসবুক আইডি থেকে মামুনুল হককে কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে এই হামলা চালানো হয়৷ যদিও হামলার ঘটনার আগেই পরিবারের লোকজন ঝুমনকে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়৷ এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে দেড় হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ শাল্লা থানা পুলিশও একটি মামলা করে৷ এ ছাড়া ঝুমন দাসের মা নিভা রানী দাসও আরেকটি মামলা করেন৷ এই মামলায়ও ৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়৷ সব মামলায় প্রধান আসামি স্বাধীন৷

সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নোয়াগাঁওয়ের ঘটনায় বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল এবং পুলিশের করা দুটো মামলাই দুর্বল৷ এরই সুযোগ নিয়েছে আসামিপক্ষ৷ প্রথমে পুলিশ যে মামলা করেছে সেটা তো চুরির মামলা৷ পরে আমরা এটা নিয়ে কথা বলার পর কিছু ধারা নতুন করে যুক্ত হয়েছে৷ আমরা বলেছি, এটা ধর্মীয় উসকানির বিষয় বলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের যাওয়ার মতো মামলা৷ নতুন কিছু ধারা যোগ করলে তো আর মামলা শক্তিশালী হয় না৷ ফলে সহজেই জামিন পেয়েছে স্বাধীন৷ অন্যদিকে ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে৷ সাধারণত নিম্ন আদালত এই মামলায় জামিন দিতে চান না৷’’

শাল্লার হিন্দু গ্রামে হামলার ঘটনায় পুলিশ সব মিলিয়ে ১০৫ জনকে গ্রেফতার করে৷ এদের বেশিরভাগ আসামি ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছে৷ ১৮ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে৷ সুনামগঞ্জ ডিবির ওসি ইকবাল বাহার জানান, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া ১৮ জনই ভাঙচুর-লুটপাটে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে৷ শহীদুল ইসলাম স্বাধীনও যে হামলায় ছিলেন- ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার সময় অনেকেই তা বলেছে৷ তবে স্বাধীন নিজে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন৷ ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির এখনও তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি৷

ঝুমনের ভাই নুপুর চন্দ্র দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ঝুমনের জামিনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একবার, জজ কোর্টে একবার আবেদন করেছিলাম৷ কিন্তু আদালত জামিন দেননি৷ সর্বশেষ গত সোমবার হাইকোর্টে জামিনের জন্য তোলা হয়েছিল৷ কিন্তু আদালত শোনেননি৷ পরে শুনবেন বলে ফেরত দিয়েছেন৷ পুলিশ ঝুমনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কী পেয়েছে সেটাও আমাদের বলে না৷ আবার জামিন চাইলে বিরোধিতা করে৷ এর মধ্যে স্বাধীনের জামিন হয়ে গেল৷ গতকালই সে এলাকায় এসেছে৷ এলাকায় গুজব রয়েছে, তার লোকজন অনেকদিন ধরেই বলছিলেন, স্বাধীন আসুক তারপর...৷ এখন কী হবে সেটাই বুঝতে পারছি না৷ আবার আমার ভাইয়ের ফেসবুক এখনও খোলা৷ পুলিশ তার কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়েছে৷ কী যে হচ্ছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না৷ কোথায় গেলে বিচার পাব তাও জানি না৷’’

আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি নিম্ন আদালত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন দিতে চান না৷ দিচ্ছেনও না৷ অথচ হামলা, ভাঙচুরের মতো ফৌজদারি অপরাধের মামলায় জামিন দিচ্ছেন৷ এটা উচিত না৷’’

প্রসঙ্গত, সাবেক যুবলীগ নেতা কাজী আনিসুরের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা করেন কমিশনের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান৷ ওইদিন কাজী আনিছের স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে এক কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের অভিযোগেও আরেকটি মামলা হয়৷ গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুটি মামলার চার্জশিট দাখিল করেন একই কর্মকর্তা৷ এর আগে সুমি রহমানও জামিন পেয়েছেন৷ একইভাবে ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিক দুর্নীতি ও ঘুসের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন৷ ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির ভূতের গলিতে পার্থ গোপাল বণিকের নিজ ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়৷ এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়৷