1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে পেট্রোল-ডিজেলচালিত গাড়ির দিন শেষ

২৮ অক্টোবর ২০২২

২০৩৫ সালের পর কম্বাশন ইঞ্জিনচালিত ছোট যান বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তারপর থেকে শুধু বিকল্প জ্বালানিচালিত গাড়ি ও ভ্যান পথে নামার অনুমোদন পাবে৷

https://p.dw.com/p/4ImkI
ছবি: Franz Neumayr/picturedesk.com/picture alliance

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে বিশ্বব্যাপী যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হচ্ছে, অনেক দেশই ঠিক সময়ে তা পূরণ করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷ বিশেষ করে পরিবহণের ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে কিছু দেশ৷ এবার রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এমন অঙ্গীকার করলো৷ অনেক তর্কবিতর্ক ও দরকষাকষির পর বৃহস্পতিবার ইইউ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ এর আওতায় ২০৩৫ সালের পর ২৭টি ইইউ সদস্য দেশগুলিতে পেট্রোল বা ডিজেলচালিত কোনো নতুন যান অনুমোদন পাবে না৷ অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত কম্বাশন ইঞ্জিনের আয়ু অদূর ভবিষ্যতেই শেষ করতে বদ্ধপরিকর এই রাষ্ট্রজোট৷ ২০৩৫ সাল থেকে শুধু বিকল্প ও দূষণহীন জ্বালানিচালিত গাড়ি ও ভ্যানই পথে নামার অনুমোদন পাবে৷ তবে পুরানো যান নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না৷ সেগুলি আয়ু শেষ হওয়া পর্যন্ত পথে নামতে পারবে৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় ১৫ শতাংশের উৎস গাড়ি৷ গোটা পরিবহণ ক্ষেত্র প্রায় এক চতুর্থাংশ নির্গমনের জন্য দায়ী৷ বর্তমানে ইইউ দেশগুলিতে বিক্রি হওয়া নতুন গাড়ির প্রায় ১২ শতাংশে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন রয়েছে৷

‘জিরো এমিশন মোবিলিটি' লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কারণ বর্তমানে একাধিক সংকটের ফলে কাচামালের সরবরাহ থেকে শুরু করে দক্ষ শ্রমিকের অভাব গাড়ি শিল্পের উপরেও কুপ্রভাব ফেলছে৷ সে কারণে ২০২৬ সালে ইইউ নতুন করে এই সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করবে৷ তবে ধাপে ধাপে  কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার কর্মসূচির ক্ষেত্রে কোনো আপোশ করতে চাইছে না ব্রাসেলস৷ ‘ফিট ফর ফিফটিফাইভ’ নামের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ১৯৯০ সালের তুলনায় ৫৫ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে ইইউ৷ তারপর ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর ২৭টি সদস্য দেশ৷

২০৩৫ সালের পর কম্বাশন ইঞ্জিন কার্যত নিষিদ্ধ করার এই উদ্যোগের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এসেছে৷ সদস্য দেশগুলি এমন ইঞ্জিন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার বদলে কার্বনহীন কৃত্রিম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছিল৷ গাড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য দেশ জার্মানির বর্তমান জোট সরকারের তিন শরিক দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ কম ছিল না৷ বিশেষ করে উদারপন্থি এফডিপি দল এমন পদক্ষেপের প্রবল বিরোধিতা করেছে৷ অনেক দরকষাকষির পর শেষ পর্যন্ত ইইউ পরিবেশমন্ত্রীরা সম্মিলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এবার সদস্য দেশগুলিকে জাতীয় স্তরে আইন প্রণয়ন করে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে৷

ইউরোপের গাড়ি শিল্প এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছে৷ জার্মানির গাড়ি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন ভিডিএ-র প্রেসিডেন্ট হিল্ডেগার্ড ম্যুলার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে ২০৩০ সালের পরের জন্য কোনো লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা বাস্তবসম্মত নয়৷ উদাহরণ হিসেবে তিনি ব্যাটারিচালিত গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় চার্জিং পয়েন্টের অবকাঠামোর অভাবের উল্লেখ করেন৷ এছাড়া কাঁচামালের জোগান ও যথেষ্ট মাত্রায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তাও এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে অন্তরায় হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন৷ তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্দেশ্য অবিলম্বে এমন সব অনিশ্চয়তা দূর করার কাজ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ম্যুলার একই সঙ্গে কার্বনহীন সিন্থেটিক ফুয়েল ব্যবহার করে কম্বাশন ইঞ্জিন চালানোর পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি৷ ইউরোপীয় গাড়ি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠনও অবকাঠামো মজবুত করার উপর জোর দিচ্ছে৷

এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)