1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উচ্চশিক্ষায় অভূতপূর্ব সংকট পশ্চিমবঙ্গে

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চরমে উঠল রাজ্য ও রাজ্যপালের সংঘাত। একটি নির্দেশিকায় ১৬টি প্রতিষ্ঠানের উপাচার্যকে নিয়োগ করেছেন আচার্য। পাল্টা অবস্থান নিয়েছে নবান্ন।

https://p.dw.com/p/4Vxvr
অরবিন্দ ভবন
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: Subrata Goswami/DW

অল্প কয়েকদিন আগে রাজ্যের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। রবিবার গভীর রাতে রাজভবন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এর মাধ্যমে রাজ্যের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে নিয়োগ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই উপাচার্যদের পদ খালি ছিল।

কর্নাটক হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তাকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

যদিও তৃণমূল কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে বিরোধের জেরে অন্তর্বর্তী উপাচার্য রবীন্দ্রভারতীর ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না। সোমবার তিনি অবশ্য প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাস গিয়েছিলেন।

রাজ্যের ক্ষোভ

আচার্য আচমকাই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়োগ করায় রাজ্য তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে। সোমবার রাজ্য এক নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছে, রাজভবনের নির্দেশ মানার প্রয়োজন নেই। এমনকী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজ্য বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব আনার কথাই ভাবছে তৃণমূল সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "রাজ্যপাল উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। কোনো আলোচনা না করেই তিনি ফতোয়া জারি করছেন। এটা তালিবানি মানসিকতা।"

সাবেক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গ তোলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, "ধনখড় যখন রাজ্যপাল ছিলেন, তখন নিয়োগের বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলতেন। আলোচনার একটা পরিসর খোলা ছিল। এখন সেটা নেই।"

আচার্যের প্রতিক্রিয়া

যদিও রাজ্যপাল বোসের দাবি, "এটা আচার্যের নির্দেশিকা নয়। সংবিধান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইন ও শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে।"

অতীতে রাজ্য সরকার যে উপাচার্যদের নিয়োগ করেছিল, সেই নিযুক্তি আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়ে যায়। এবার রাজ্যপালের নিয়োগ নিয়ে আইনি প্রশ্ন উঠছে বেশ কিছুদিন ধরে।

যদিও বোস বলেছেন, "আচার্য কখনো উপাচার্য হিসেবে কাজ করেননি, করবেন না, করতে পারেন না এবং করা উচিত নয়।" কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তা হলে তিনি কেন রাজ্য সরকারের সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে আলোচনা করছেন না?

বিরোধ ঘিরে ভিন্নমত

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, "রাজভবনকে ব্যবহার করছে কেন্দ্র। এতে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় আঘাত লাগছে। উচ্চশিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর জবাব বিজেপিকে দিতে হবে।"

যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি, অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদার বলেন, "রাজ্যপাল আইন অনুযায়ী কাজ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হতে চেয়েছিলেন। রাজ্যপাল আচার্য হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করছেন।"

‘ইউজিসির নির্দেশিকা এই নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি’

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "রাজ্যপাল যদি আইনবিরুদ্ধ কাজ করে থাকেন, তা হলে রাজ্য সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিক। আমি আইনজ্ঞ নই। আদালত কী রায় দেয়, সেদিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।"

নিয়োগে প্রশ্ন

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। ১৫ সেপ্টেম্বর পরের শুনানি। তিনি বলেন, "এ নিয়ে বিতর্ক না করে আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা ভালো। আদালত যদি বলে, তাহলে আচার্য নিযুক্ত উপাচার্যরা পদে থাকবেন না।"

এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "যাকে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য করা হয়েছে, তিনি অধ্যাপনা করেননি, তার পিএইচডি নেই। ইউজিসির নির্দেশিকা এই নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি। তাই প্রশ্ন উঠছে।"

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর মন্তব্য, "একজন সাবেক বিচারপতিকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে একজন উপাচার্যকে কি হাইকোর্টের বিচারপতি করা যেতে পারে? তিনি কি সেই কাজটা করতে পারবেন?"

উচ্চশিক্ষায় প্রভাব

বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে অচলাবস্থা চলতে থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারা। প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, "রাজ্য ও রাজভবনের মধ্যে উচ্চশিক্ষার দখলদারি নিয়ে লড়াই চলছে। এর বলি হচ্ছে ছাত্ররা। তার জেরে ছাত্রভর্তি কমে গিয়েছে ৩০ শতাংশ। কে এর দায় নেবে?"

সম্প্রতি দেশের অগ্রণী প্রতিষ্ঠানে এক তরুণের চাকরি সংশয়ে পড়ে চলতি অচলাবস্থার জেরে। হুগলির সায়ন কর্মকার চাকরি পেয়েছেন ডিআরডিওতে। প্রতিরক্ষা গবেষণার এই শীর্ষ সংস্থায় সায়নের নিয়োগ আটকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র যথাযথ না হওয়ায়। উপাচার্য পদ শূন্য থাকায় তার স্বাক্ষর ছাড়াই শংসাপত্র জমা দিতে হয়েছে সায়নকে, যা বাতিল করে সংস্থাটি। পরে রাজভবনের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে।

অভিজিৎ চক্রবর্তীর মন্তব্য, "আচার্য রোজই উপাচার্য বদল করতে পারেন। কিন্তু তার কী অভিঘাত হচ্ছে, সেটা বুঝতে হবে। শিক্ষক-পড়ুয়ার সম্পর্ক এতে কোথায় এসে দাঁড়াচ্ছে, সে কথাও মাথায় রাখা দরকার।"