কার্নেভাল: জার্মানির সবচেয়ে রাজনৈতিক যে উৎসব

ড্যুসেলডর্ফের মানুষ ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে কেমন ধারণা পোষণ করেন, তাই ধরা আছে এই কার্নেভাল ফ্লোটে৷ ট্রাম্পের হাতে ধরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা, যা তার হাতে ধরা কাঁচি দিয়ে কাটার পর আকার নিয়েছে নাৎসি স্বস্তিকা চিহ্নের৷

ট্রাম্প-সমর্থকদের আরো একটু উসকে দিতে এই ফ্লোটে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পকে৷ তবে এবার তার হাতে ছুরি৷ পেছন থেকে এক ইউক্রেনিয়ান সৈনিককে ছুরিকাঘাত করছেন তিনি৷ দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সাহায্য কমাবেন ট্রাম্প, এমনটাই বলে এসেছেন তিনি৷ এমন হলে রাশিয়াকে ঠেকাতে বেগ পেতে হবে ইউক্রেনকে৷

কোলন শহরের এই কার্নেভাল ফ্লোটে দেখা যাচ্ছে যুদ্ধে ক্লান্ত ইউক্রেনিয়ান প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির শৈল্পিক রূপ৷ তার হাতে ধরা ন্যাটোর হেলমেট, পাশে লেখা ‘টু বি অর ন্যাটো বি!’... ইশারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্য হওয়া বিষয়ক জটিলতার দিকে৷

জার্মান পাপিয়েরমাশে শিল্পী জাক টিলির এই কার্নেভাল প্লোটটি এই নিয়ে দ্বিতীয়বার প্রদর্শিত হলো৷ এই ফ্লোটে দেখা যাচ্ছে বিস্ফোরিত চোখের পুটিনকে৷ মুখের তুলনায় বড় মাপের ইউক্রেনকে গিলতে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন, শিল্পীর চোখে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে৷

বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় ব্যস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব৷ জার্মানির তরফে তাবড় সভায় উপস্থিত থেকে আলোচিত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক৷ এই ফ্লোটে শিল্পীর চোখে তিনি ধরা পড়েন দামি অথচ পলকা চীনা বাসনের দোকানে একটি হাতির আদলে৷ এই উপস্থাপন একটি ইংরেজি প্রচলিত রূপক অর্থে৷ নীতিশুদ্ধ পররাষ্ট্র নীতির পক্ষে সাফাই গাওয়া বেয়ারবক আসলে যেখানেই যান, সেখানেই হইচই ফেলে দেন, নেতিবাচকভাবে, এটাই বোঝাতে চাইছে ফ্লোটটি৷

এবারের কার্নেভালের রাজনীতি ছাড় দেয়নি জার্মান রাজনৈতিক দল, এএফডিকে, যারা পরিচিত চরম ডানপন্থি চিন্তাধারার জন্য৷ গত কয়েক বছরে এই দলটি জার্মানিত দ্বিতীয় জনপ্রিয় দলের স্থান এসেছে, বিশেষ করে দেশটির পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলিতে৷ এই ফ্লোটটি ড্যুসেলডর্ফ শহরের৷ এক ভাঁড় তার সামনে থাকা হাসিমুখো এএফডির মুখোশ খুলে দিচ্ছে৷ কিন্তু মুখোশের পেছনে লুকিয়ে এডলফ হিটলারের ভৌতিক চেহারা৷

কোলন শহরের এই ফ্লোটটি জার্মানির রাজনীতির বর্তমান জটিলতার জন্য দায়ী করছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে৷ ফ্লোটে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতসীন জোটে থাকা দল এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিন পার্টির দলীয় রঙ৷ এই তিন দলের রঙের পুতুলদের দেখা যাচ্ছে এএফডি নেত্রী আরিস ভাইডেলের আকারের বেলুনে হাওয়া ভরতে৷

গোটা বিশ্বজুড়ে যত সমস্যা, তার সবকিছুই কমবেশি আলোচিত হলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, এমনটাই মনে করছেন এই ফ্লোটের শিল্পী৷ ড্যুসেলডর্ফের এই ফ্লোটে গণমাধ্যমকে দেখানো হচ্ছে তাদের ক্যামেরা যুদ্ধের দিকে তাক করে রাখতে৷ পেছন থেকে পিঠে টোকা দিচ্ছে বিরাট আগুনের হলকা, যার গায়ে লেখা ‘২০২৩: ইতিহাসের উষ্ণতম বছর’৷

জনগণের সাথে সংযোগ স্থাপনে কার্নেভালের সময় বেছে নেন বহু রাজনীতিক৷ নর্থ রাইন ভেস্টফালেন রাজ্যের প্রধান হেনড্রিক ভ্যুস্ট কোলন শহরের কার্নেভালের মিছিলে পায়ে হেঁটে অংশ নেন৷ কার্নেভালকে বৈচিত্র্যের উদযাপন হিসাবে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘এই সময় খুব সহজ নয়, ফলে একটু হাসি, একটু আনন্দ করা ভালো৷’’