1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাষের জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে চাষিদের লাভ

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিশ্বের অনেক প্রান্তেই কৃষিকাজ সব সময়ে আর লাভবান হচ্ছে না৷ চাষিরা নিজের জমি পুরোপুরি হাতছাড়া না করলেও বেশি আয়ের আশায় ইজারা দিচ্ছেন৷ জার্মানিতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এমন জমির ব্যবহার বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/4Gx7U
জার্মানিতে জমিতে সৌর প্যানেল
জার্মানিতে জমিতে সৌর প্যানেল বসাতে দিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকছবি: DW

বার্লিনের কাছে কৃষিক্ষেত্রের কাছে বসতি এলাকার আশেপাশের এলাকা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে অনেকটা বদলে যাবে৷ ফলে পর্যটনের জন্য আর তেমন উপযুক্ত থাকবে না৷ তবে বোরেয়াস এনার্জি কোম্পানির প্রতিনিধি মার্টিন স্টেল মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘আমরা পরিকল্পিত এলাকা প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি৷ বসতি এলাকা থেকে প্রায় দেখাই যাবে না৷ কোথাও ফাঁকফোকর থাকলে আমরা লতাপাতা দিয়ে প্রাচীর তৈরি করে দেবো৷ সম্ভব হলেই বসতি এলাকা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি৷ প্রাথমিক খসড়াগুলিতে অন্যরকম পরিকল্পনা ছিল৷’’

প্রকল্পের পরিকল্পনাকারীদের সূত্র অনুযায়ী এই ক্ষেত্র সৌর জ্বালানির জন্য উপযুক্ত৷ কাছেই এক সাবস্টেশন রয়েছে৷ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির বিকল্প সৃষ্টির স্বার্থে যে অনেক জায়গার প্রয়োজন, অনেকেরই তা পছন্দ নয়৷ নোটাস এনার্জি কোম্পানির আন্দ্রে বার্ৎস বলেন, ‘‘কোনো পৌরসভা বিশেষ সমস্যা ছাড়াই যদি জমি বরাদ্দ করে এবং প্রকল্প নিয়ে আপত্তি না তোলে এবং এর ফলে গোটা জার্মানির সমাজের উপকার হয়, তখন একেবারে হাতে গোনা কিছু মানুষ সেই উদ্যোগ সফলভাবে বানচাল করলে বলতেই হবে, যে আমাদের সামাজিক কাঠামোয় কোথাও ত্রুটি রয়েছে৷’’

সৌরবিদ্যুতের জন্য জমি ভাড়া দিয়ে তিনগুণ আয়

২০৪৫ সালের মধ্যে জার্মানি যে প্রধানত পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করবে, সেই লক্ষ্য স্থির হয়ে গেছে৷ সেটা সম্ভব করতে সৌর ও বায়ুশক্তির ব্যবহার কয়েক গুণ বাড়াতে হবে৷ কিন্তু বিশ্বের অন্য কিছু প্রান্তে সৌর বিদ্যুতের জন্য আরও উপযুক্ত জায়গা রয়েছে, যেখানে সূর্যের আলোর অভাব নেই৷ ডেজারটেক কোম্পানির মিশায়েল শ্র্যোডার মনে করেন, ‘‘উত্তর আফ্রিকায় বিস্তর জায়গা রয়েছে৷ আমরা যদি ৩০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০০ কিলোমিটার প্রস্থের এলাকায় সোলার প্লান্ট বসাতে পারি, যা সাহারা মরুভূমির প্রায় এক শতাংশের সমান, সে ক্ষেত্রে আমরা গোটা বিশ্বের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পারবো৷’’

এখনই সাহারায় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে বটে, কিন্তু আশেপাশের রাষ্ট্রগুলির নিজস্ব চাহিদা পূরণ করতেই সেগুলি কাজে লাগানো হয়৷ ইউরোপে বিদ্যুৎ রপ্তানির বিশাল পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয় নি৷ পাওয়ার লাইন, বিপুল অর্থ এবং রাজনৈতিক আস্থার অভাব থেকেই গেছে৷ আন্দ্রে বার্ৎস বলেন, ‘‘আজ আমরা যদি দশ, ২০ বা ৩০ বছর পরের অবস্থার কথা ভাবি, তখন ১০ বছর পরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কল্পনা করা কঠিন৷ আমার মতে, এ ক্ষেত্রে একাধিক উৎস থাকাই বাঞ্ছনীয়৷ জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের পূর্বাংশে সোলার পার্ক নির্মাণ করা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আমার বিশ্বাস৷’’

কারণ ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের অনেক জমি বালুভরা, শুষ্ক ও অনুর্বর৷ চাষি হিসেবে ইয়ুর্গেন গিসে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে বলেন, ‘‘আমরা জমিতে সার ও কীটনাশক দিয়েছি, আমরা সব কাজ করেছি, লাঙল দিয়েছি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো ফলন হয় নি৷’’

সোলার প্যানেল বসাতে জমি ইজারা দিয়ে কৃষকের লাভ

প্রতিবেশী চাষি ইয়ান ডেইকস্ট্রারও একই সমস্যা রয়েছে৷ তার মতে, শুধু পরিমাণে কম নয় মানও খারাপ৷ দুই চাষিই জ্বালানি কোম্পানিগুলির ডাকে সাড়া দিয়ে লাভের মুখ দেখছেন৷ চড়া দামে তারা নিজেদের জমির সামান্য অংশ ইজারা দিয়ে ভালোই আয় করছেন৷ কিন্তু তারাই আবার জেলা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে সেই বিনিয়োগ সম্পর্কে সিদ্ধান্তের অংশীদার হচ্ছেন৷ চাষি ও কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে ডেইকস্ট্রা মনে করেন, ‘‘এটা ঠিক, যে ব্যাপারটা একটু দৃষ্টিকটু৷ আমি জেলা কাউন্সিলের সদস্য আবার চাষিও বটে৷ আমরা ভোটাভুটিতে অংশ নেবো না, গোটা প্রক্রিয়া প্রভাবিত করবো না৷ কাউন্সিলের বাকি সদস্যদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ এভাবেই কাজ চলে, একেই বলে গণতন্ত্র৷’’

কিন্তু গ্রামের এক ঘোড়া পালনকারী বিষয়টি মোটেই সেভাবে দেখেন না৷ ইয়ুলিয়ানে উলিশের মতে, কাউন্সিলের সদস্যদের জ্বালানি কোম্পানিগুলির সঙ্গে আলোচনা করা উচিত নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন বড় আকারের প্রকল্প জেলা কাউন্সিলের বিবেচনার উপযুক্ত নয়৷ সেখানকার কোনো সদস্য শিশু হাসপাতালের নার্স৷ তাদের হয়তো চুক্তিপত্র পড়ার ক্ষমতা নেই৷ চুক্তি পড়ে গরমিল শনাক্ত করা সম্ভব নয়৷ রাজ্য অথবা ফেডারেল সরকারকে ভিন্নভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে৷’’

তাহলে প্রশ্ন হলো, কে সিদ্ধান্ত নেবে এবং বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ প্লান্টগুলি কোথায় বসানো হবে? জ্বালানির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সম্ভব করতে হলে সেগুলি দ্রুত গড়ে তোলা প্রয়োজন৷

মারিয়ন হ্যুটার/এসবি