1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পানিপড়ায় এখনো  আস্থা!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ নভেম্বর ২০১৯

কিশোরগঞ্জের পানিপড়ার ঘটনা এখন পুরো দেশেই আলোচনার বিষয়৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি ভাইরাল৷ হাজার হাজার মানুষ বোতলে পানি নিয়ে আসেন৷ আর কবিরাজ একযোগে মাইকে ফু দেন৷  কিন্তু মানুষের এই পানিপড়া বা ঝাড়ফুঁকে এখনো আস্থা কেন?

https://p.dw.com/p/3T5V6
প্রতীকী ছবিছবি: DW/A. Deb Kanunjna

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল যে রাতে আঘাত হেনেছে তার আগের দিন শনিবার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নে ওই ‘ফুঁ অনুষ্ঠানে' স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানও ছিলেন৷ ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান৷ কিন্তু কবিরাজ সবুজ মিয়ার এই আয়োজনে বাধা না হয়ে বরং তারা সহযোগী হয়েছেন৷

তাদের একজন সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ দাবী করেন, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সে কারণেই সেখানে গিয়েছিলেন৷  লাকার কিছু ছেলে ওই কবিারজকে এনেছিলো৷ কবিরাজের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায়৷ তিন-চারদিন ধরে এলাকায় মাইকিং হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি অবশ্য বলেন,‘‘আমাকে কেউ কিছু জানায়নি৷’’

আর পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামা বলেন,‘‘আমি ওই পথ দিয়ে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিলাম৷ পথে হাজার হাজার লোক দেখে সেখানে যাই৷ গিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করে দিই৷ ৫০ হাজার লোক ছিল৷ আমি না গেলে বিশৃঙ্খলা হতো৷’’

এই চিত্র যে প্রত্যন্ত পাকুন্দিয়ার তা নয়৷ রাজধানী ঢাকায়ও এই ঝাড়ফুঁক, তবিজ-কবজ, কবিরাজি চিকিৎসার প্রবল উপস্থিতি৷ কোনো পরিসংখ্যান নেই তবে সাধারণ পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট যে তান্ত্রিক গুরু, আধ্যাাত্মিক গুরু, সর্পরাজ বা মঘা ইউনানী চিকিৎসা ও ঝাড়ফুঁকের ব্যবসার দাপট এখানে আধুনিক চিকিৎসার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও বিজ্ঞাপন নীতিমালার কারণে সংবাদ মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞাপন এখন তেমন চোখে না পড়লেও তাদের বিজ্ঞাপন দেখা যায় ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে৷ আর অনলাইনেও তারা সক্রিয়৷

ডা. মনি লাল আইচ লিটু

ঢাকার কাঠাল বাগানে রাস্তার পাশে প্রতিদিন সকালে এক নারী জন্ডিসের চিকিৎসা করেন৷ সেখানে লম্বা লাইন হয়৷ তিনি ডাবের পানিপড়া দেন৷ ওই লাইন দেখলেই বোঝা যায় যে কুসংস্কারে শহর আর গ্রামে তেমন কোনো পার্থক্য নেই৷

আর জরিপও বলছে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই এখনো আধুনিক চিকিৎসার বাইরেই আছেন৷ এটা যে আস্থার সংকট তা বলা যাবেনা৷ এর পিছনে সামাজিক, প্রচলিত বিশ্বাস ও রাজনৈতিক কারণ আছে৷ অর্থনৈতিক কারণও একটি বড় বিষয়৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত খানা আয় ও ব্যয় জরিপের জরিপে চমকে দেয়ার মত তথ্য আছে৷ আর তাতে বলা হয়েছে দেশের শতকরা ৫৮ ভাগ রোগী  এখনো রেজিষ্টার্ড এমবিবিএস চিকিৎসকের কাছে যান না৷ তাহলে তারা কাদের ওপর চিকিৎসার জন্য নির্ভর করেন? বিবিএস বলছে তারা নির্ভর করেন হাকিম,কবিরাজ, ওঝা, পীর, বৈদ্য, ওষুধের দোকানদার ও হোমিও চিকৎসকের ওপরে৷ জরিপে আরো বলা হয়েছে, ব্যয়ের কারণে অনেকে এমবিবিএস চিকিৎসকের কাছে যান না৷ আবার কেউ কেউ মনে করেন তাদের কাছে গেলে বড় কোনো রোগ ধরা পড়তে পারে৷

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ লিটু মনে করেন,‘‘পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘকাল ধরেই ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি চিকিৎসায় অভ্যস্ত৷ এটা বিজ্ঞান ভিত্তিক না হলেও কিছু  মানুষ এবং মহল আছে যারা এটাতে টিকয়ে রাখছে৷ তারা প্রতারণামূলক প্রচারও চালায়৷ তবে এর সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থা একটা বড় বিষয়৷ দেশের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়৷ তারা এলোপ্যাথিক চিকিৎসাকে ব্যয়বহুল মনে করেন৷ তাই কবিরাজ, ওঝা, পানিপড়া বা তাবিজ কবজের ওপর নির্ভর করেন৷’’ এখানে ধর্মীয় বিশ্বাসকেও কাজে লাগানো হয় বলে মনে করেন তিনি৷

ড. সাদেকা হালিম

তিনি বলেন,‘‘অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই সব চিকিৎসায় বাধা না দিয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন৷ তারা দেখেন ভোট৷ অনেক লোক৷ যেটা কিশোরগঞ্জে হয়েছে৷’’

তিনি আরো বলেন,‘‘এই রাজধানীতে অনেক শিক্ষিত মানুষও এই ধরনের চিকিৎসায় করান৷ তারা জন্ডিসের জন্য ফু দেয়া মালা পড়েন৷''
বাংলাদেশে শুধু সাধারণ রোগ নয়, ক্যান্সারের মত রোগের চিকিৎসাও করা হয় কবিরাজি পদ্ধতিতে৷ আর এই ধরণের অপচিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া যায় ৷ কবিরাজি হালুয়া খেয়ে গত জানুয়ারিতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে চার জনের মৃত্যু হয়৷

সমাজবিজ্ঞানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম মনে করেন,‘‘আধুনিক এই বাংলাদেশে যেখানে সবকিছু এগিয়ে যাচেছ সেখানে এখনো কিভাবে ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবজে মানুষের আস্থা সেটা গভীরভাবে বিবচনা করার দরকার আছে৷’’
তিনি বলেন,‘‘কুসংস্কার, ধর্মের অপব্যাখ্যা এর পিছনে কাজ করে৷ যারা ধর্মের অপব্যবহার করে তারাই বলে বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ফু দিলে সব রোগ সেরে যাবে৷ আবার কিছু প্রচলিত বিশ্বাসও কাজ করে৷ আর আমাদের শিক্ষাও এই সব বিষয়ের বিরুদ্ধে হয়তো আমাদের প্রস্তুত করতে পারেনি৷ হয়তো প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যর্থ৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান