1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে পিরিয়ড সম্পর্কে অস্বস্তি দূর করার উদ্যোগ

২২ মার্চ ২০২৩

অনেক সমাজে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব সম্পর্কে এখনো অস্বস্তি রয়ে গেছে৷ নারীরা বিষয়টি যতটা সম্ভব গোপন রাখেন, পুরুষরাও এড়িয়ে চলেন৷ ভারতের জয়পুরের এক সংস্থা মেনস্ট্রুয়াল হাইজিনের বিষয়টি ভিন্ন স্তরে নিয়ে গেছে৷

https://p.dw.com/p/4P342
মাই প্যাড (ফাইল ফটো)
মাই প্যাড (ফাইল ফটো)ছবি: Archana Sharma

ভারতে স্যানিটারি প্যাড সাধারণত কালো প্লাস্টিক ব্যাগে পুরে বিক্রি করা হয়৷ কারণ, ঋতুস্রাবের বিষয়টিকে ঘিরে সামাজিক অপবাদ কম নয়৷ তাই স্যানিটারি প্যাড অন্যদের চোখের আড়ালে রাখার চল রয়েছে৷ এমনকি জয়পুরের মতো বড় শহরেও অনেকে দোকানে গিয়ে স্যানিটারি প্যাড কিনতে অস্বস্তি বোধ করেন৷

জয়পুরের হর্ষিতা আগারওয়াল সেই ট্যাবু ভাঙতে চান৷ তিনি নিজের স্যানিটারি প্যাড আড়ালে রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না৷ বরং গর্বের সঙ্গে সেটা তুলে ধরেন৷ নানা রকম ডিজাইনের মধ্যে পছন্দমতো প্যাড বেছে নিতে পেরে হর্ষিতা খুশি হন৷ হর্ষিতা বলেন, ‘‘আমরা এখন অনেক প্যাডের মধ্যে বাছাই করতে পারি৷ মেয়েরা সাধারণত স্যানিটারি প্যাড নিয়ে যেতে লজ্জা পায়৷ আমরা সেগুলি বাকিদের চোখের আড়ালে রাখতাম, কখনো নোটবুকের মধ্যে লুকাতাম, যাতে কেউ দেখতে না পায়৷ কিন্তু এই প্যাড এত সুন্দর দেখতে যে লুকানোর কোনো প্রয়োজন নেই৷ মানুষও এগুলিকে সুন্দর মনে করে৷''

ডিজাইন ও আকর্ষণীয় নক্সার কারণে এই প্যাডগুলি বাজারে প্রচলিত স্যানিটারি প্যাডের থেকে আলাদা৷ তাছাড়া সেগুলি কাপড় দিয়ে তৈরি৷ অর্থাৎ এই প্যাড পরিষ্কার করে বার বার ব্যবহার করা যায়৷

‘মেরে প্যাড' বা ‘আমার প্যাড' ভারতী সিং চৌহান ও তাঁর টিমের মস্তিষ্কের ফসল৷ তিনি বলেন, এই প্যাড পাঁচ বছর ব্যবহার করা যেতে পারে৷ বিশেষ করে যে সব নারী স্যানিটারি পণ্যের নাগাল পান না, বা যাদের প্রতি মাসে এমন প্যাড কেনার সামর্থ্য নেই, এই পণ্য তাঁদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী৷ চৌহান বলেন, ‘‘মানুষ প্রায়ই আমাকে প্রশ্ন করেন, একবার বিক্রি করার পর তো তাদের আর সেটা কেনার প্রয়োজন হবে না৷ তখন তো তোমার বড় লোকসান হবে৷ কিন্তু নারীদের পরিবেশবান্ধব ও তাদের সামর্থ্যের মধ্যে এক বিকল্প দেওয়াই ছিল আমাদের চিরকালের লক্ষ্য৷ সে কারণেই আমরা এটি ডিজাইন করেছিলাম৷ বাজার সত্যি খুব বড়৷ ২৬ শতাংশ নারী ডিসপোজেবল প্যাড ব্যবহার করেন৷ বাকিরা সবাই আমার সম্ভাব্য ক্রেতা৷''

ঋতুস্রাব নিয়ে ট্যাবু ভাংছে মেরা প্যাড

এই স্যানিটারি প্যাড পুনর্ব্যবহারযোগ্য বলে সেগুলি শুধু অর্থ সাশ্রয় করে না, পরিবেশবান্ধবও বটে৷ পরিবেশের উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না৷ ভারতী সিং চৌহান বলেন, ‘‘কোনো নারী পাঁচ বছর ধরে ডিসপোজেবল স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করলে তিনি ১৯ দশমিক দুই কিলো বর্জ্য কমাতে পারেন৷ প্লাস্টিক, রাসায়নিক ও পারফিউম থাকায় সেই বর্জ্য পচতে ৫০০ থেকে ৮০০ বছর সময় লাগে৷ এই প্যাড পাঁচ বছর ধরে বার বার ব্যবহার করা যায়৷ তারপর সেটি ফেলে দিলে পচনের জন্য তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগবে৷''

ডিসপোজেবল পণ্য একবার ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়৷ প্রতি মাসে ভারতে একশো কোটিরও বেশি স্যানিটারি প্যাড ফেলে দেওয়া হয়৷ সেগুলি আবর্জনার স্তূপে গিয়ে পড়ে৷ ফলে বছরে স্যানিটারি বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার টন৷

ভারতে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি প্রায় ৫০ শতাংশ নারী পিরিয়ডের সময় সুরক্ষা হিসেবে এখনো কাপড় ব্যবহার করেন৷ কিন্তু অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতির ফলে সংক্রমণের বিশাল ঝুঁকি থেকে যায়৷ ভারতী সিং ও তাঁর টিম প্রায়ই গ্রামে গিয়ে নারীদের সঙ্গে ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলেন, তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং হাতে তৈরি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের সুবিধা তুলে ধরেন৷

শুধু নারীদের এই টিম বিরামহীন উত্পাদন সম্ভব করে৷ কাটা, সেলাই থেকে শুরু করে প্যাকিং – সব কাজই তাঁরা নিজেরা করেন৷ এই কাজের মাধ্যমে তাঁরা শুধু অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন না, একইসঙ্গে মেনস্ট্রুয়াল হেলথ ও হাইজিন সম্পর্কে নীরবতা ভাঙার সাহস পাচ্ছেন৷ মেরা প্যাডের কর্মী হিসেবে রিজওয়ানা বলেন, ‘‘আমি কোনো ওযুধের দোকানে গেলে আমি সরাসরি স্যানিটারি প্যাড চাই৷ দোকানের কর্মী সেটা আমার হাতে তুলে দেন৷ সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু উপস্থিত মেয়েরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে৷ একবার তাদের হাসার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলাম৷ তারা বলে, এত খোলামেলা এমন কথা বললে লজ্জা লাগে৷ আমি তখন তাদের বোঝালাম, এটা কোনো নোংরা কথা নয় এবং এতে লজ্জা পাবার কোনো কারণ নেই৷ এটা আমাদের শরীর সম্পর্কিত একটি বিষয়৷ লজ্জার একেবারেই কোনো কারণ নেই৷''

ভারতে স্যানিটারি প্যাডের বাজারে বড় কোম্পানিগুলির আধিপত্য রয়েছে৷ কিন্তু ধীরে হলেও ‘মেরা প্যাড' নিজস্ব জায়গা করে নিচ্ছে৷ জয়পুরের মেয়েরা সেটি কিনছেন৷ প্লাস্টিক ব্যাগে না মুড়েই তারা সেটি প্রকাশ্যে নিয়ে যাচ্ছেন৷

অশোক কুমার/এসবি