1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মা তোর বদনখানি মলিন হলে…

প্রভাষ আমিন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মানুষের তীব্রতম অনুভূতি কী? কখনো মনে হয় মানব-মানবীর প্রেমই সেরা৷ অথবা স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির প্রেম? মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা? নাকি সন্তানের প্রতি স্নেহ? শেষ পর্যন্ত অবশ্য দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধের অনুভূতিকেই তীব্রতম মনে হয়৷

https://p.dw.com/p/3PXya
Bangladesch singen für Guinness in Dhaka Nationalhymne
ছবি: Reuters

এ ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটা ব্যাখ্যাও আছে৷ সব প্রেমের ব্যাখ্যাই লুকিয়ে আছে প্রকৃতিতে৷ মানব-মানবী যদি পরস্পরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব না করে, তবে মানবসভ্যতা থেমে যাবে৷ সন্তান স্নেহ তারচেয়ে তীব্র, কারণ জন্মের পর সব শিশুই থাকে অসহায়৷ মা-বাবার অন্ধ স্নেহ না পেলে সেই শিশুর পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন৷ প্রকৃতি তার স্বার্থে মানবশিশুর টিকে থাকা নিশ্চিত করতেই মা-বাবার মনে সন্তানের জন্য প্রবল ভালোবাসা সৃষ্টি করে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি বুঝি আসলে দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধের অনুভূতিই তীব্রতম৷ এর শত শত উদাহরণ আছে বিশ্বজুড়ে, আমাদের সবচেয়ে কাছের উদাহরণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ৷ প্রিয়তম স্ত্রীকে ফেলে স্বামী চলে যাচ্ছেন যুদ্ধে, সন্তানের মায়াভরা মুখও তাকে আটকাতে পারছে না৷ মা-বাবা যেতে দেবেন না বলে, তাদের লুকিয়ে রাতের অন্ধকারে ঘর ছাড়ে সন্তান৷ আবার জাহানারা ইমামের মতো অনেক মা সন্তানকে দেশের জন্য উৎসর্গ করে দেন৷ একাত্তরে যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন, তারা জানতেন তারা আর নাও ফিরতে পারেন৷ হয়তো কোনোদিন আর মায়ের সাথে দেখা হবে না, সন্তানকে কোলে নিতে পারবেন না, প্রিয়তম স্ত্রীর চোখে খুঁজবেন না দুদণ্ড শান্তি৷ তবুও মানুষ যুদ্ধে যায়, দেশের জন্য ধর্মের জন্য, জাতির জন্য, প্রাণ দেয় ভাষার জন্য৷ এটাই দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ৷

আসলে দেশপ্রেম এমন এক তীব্র অনুভূতি যার পুরোটা কখনোই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না৷ গণজাগরণ মঞ্চে লাখো মানুষের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে ‘আমার সোনার বাংলা…' গাইতে গাইতে কখন চোখ জলে ভেসে যায় টেরই পাই না৷ শুধু গণজাগরণ মঞ্চ বলে নয়, জীবনে যতবার জাতীয় সঙ্গীতে গলা মিলিয়েছি, ততবারই গলা আর্দ্র হয়ে আসে৷ বিদেশের মাটিতে পুরস্কার মঞ্চে দাড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত শুনে মাবিয়া কেন কান্নয় ভেঙ্গে পড়েন আমি জানি৷ এই যে আমরা ক্রিকেটের জন্য গলা ফাটাই, পরাজয়ে মুষড়ে পড়ি; এটা আসলে যতটা না ক্রিকেটের জন্য, তার চেয়ে বেশি দেশের জন্য৷ দেশপ্রেম একটা ইনবিল্ট অনুভূতি৷আপনাকে ট্রেনিং দিয়ে দেশপ্রেমিক বানানো যাবে না৷ দেশের প্রতি, মাটির প্রতি, শিকড়ের প্রতি মানুষের যে টান; তা কখনো মুছে যায় না৷ নিরাপত্তাজনিত কারণে, অর্থনৈতিক কারণে মানুষ দেশ ছেড়ে যায় বটে, ভিন্ন দেশে অভিবাসন করে, বৈধ-অবৈধ উপায়ে উন্নত দেশে গিয়ে অনেকে থেকে যান৷ কিন্তু গিয়ে দেখুন হয়ত ২০ বছর দেশে আসতে পারছেন না, কিন্তু দেশের জন্য অন্তরে গভীর আবেগ ধারণ করেন৷ দেশভাগের পর ধর্মের কারণে অনেকে দেশ ছেড়েছেন৷ কিন্তু দেশ রয়ে গেছে তাদের অন্তরে৷ এখনও বাংলাদেশের কাউকে পেলে কলকাতার ‘বাঙাল'রা গভীর আবেগ নিয়ে দেশের কথা জানতে চান৷ তারা বাড়ির পাশের বটগাছ, তুলসিতলা, আঙ্গিনার গন্ধরাজের গল্প করেন৷ কারো যদি জন্মভূমিতে আসার সুযোগ হয়, গোপনে মাটি নিয়ে যান৷ দেশের মাটি মানেই তার কাছে পবিত্র, খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি৷ ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা কেন তার পূর্বপুরুষের ভিটায় এসে মাটিতে গড়াগড়ি করে শিশুর মত কাঁদেন? এর আসলে কোনো ব্যাখ্যা নেই৷ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ বা জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপি গরীয়সী- এসব কথা বলে দেশপ্রেম বাড়ানো বা কমানো যায় না৷ তবে গভীর আবেগ দিয়ে দেশের কোনো লাভ হয় না৷ দেশকে সত্যি সত্যি ভালোবাসলে দেশের জন্য কাজ করতে হয়৷ সবাইকে যে দেশের জন্য জীবন দিতে হবে তা নয়; যার যার নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে৷ যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলাটাও দেশকে ভালোবাসার নিদর্শন৷   

দেশপ্রেম অবশ্যই ভালো৷ কিন্তু বাড়াবাড়ি কোনোকিছুই ভালো নয়৷ অতিরিক্ত পানি খেলেও আপনি স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে পারেন, অতিরিক্ত ভাতও কিন্তু ক্ষতিকর৷ তেমনি বাড়াবাড়ি রকমের দেশপ্রেম বা কট্টর জাতীয়তাবোধ আপনাকে অন্ধ করে তুলতে পারে৷ আর বিবেকের অন্ধত্ব আপনাকে কুয়োর ব্যাং করে তুলতে পারে৷ আপনি আপনার দেশকে এতটাই ভালোবাসেন, যে অন্য কোনো দেশই আপনার ভালো লাগে না৷ দেশেপ্রেমের কারণে আপনি অন্য দেশকে, জাতিকে, ভাষাকে ঘৃণা করেন- তাহলেই সমস্যা৷ আপনি যদি সত্যি সত্যি আপনার দেশ, জাতি, ভাষা, ধর্মকে ভালোবাসেন; তাহলে অন্য দেশ জাতি, দেশ, ভাষা, ধর্মকে ঘৃণা করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়৷ সত্যিকারের ভালোবাসা থেকে ভালোবাসাই উৎসারিত হবে, ঘৃণা নয়৷

কট্টর জাতীয়তাবাদ যে কত ভয়ংকর তা বিশ্ব দেখেছে হিটলারের মাধ্যমে৷ দুটি বিশ্বযুদ্ধেরই পেছনের মূল কারণ কট্টর জাতীয়তাবাদ৷ তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেকেই কট্টর জাতীয়তাবাদের বিপদটা টের পান৷ তাই একটি কল্যাণকামী বিশ্ব গড়ার আকাঙ্খায় একটা অলিখিত ঐকমত্য গড়ে ওঠে, জাতিসংঘের মাধ্যমে কিছু লেখাপড়াও হয়৷ কিন্তু আস্তে আস্তে বিশ্ব আবার বিপরীত দিকে হাটা শুরু করেছে যেন৷ দিকে দিকে আবার কট্টর জাতীয়তবাদের উত্থান ঘটছে৷ আসলে জাতীয়তাবাদ আর ধর্ম হলো চতুর রাজনীতিবিদের কঠিন অস্ত্র৷ জাতীয়তাবাদ আর ধর্মকে পুজি করে এই রাজনীতিবিদরা ঘৃণার চাষ করেন৷ সেই ঘৃণার পথ ধরেই ক্ষমতায় আরোহন করেন৷ ক্ষমতায় টিকে থাকতেও তাদের অস্ত্র সেই ধর্ম আর জাতীয়তাবাদ৷ তলে তলে জাতীয়তাবাদের এই বিষের চাষ হচ্ছিল অনেকদিন ধরেই৷ কেউ কেউ একটু আড়ালে-আবডালে বলছিলেনও৷ কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এককেন্দ্রিক বিশ্বের শাসক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ডনাল্ড ট্রাম্পের মত একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন, তখন আড়ালটা সরে গেল৷ চক্ষুলজ্জা ফেলে সবাই জাতীয়তাবাদের ঝান্ডা উড়িয়ে দিলেন৷ জাতীয়তাবাদে সমস্যা নেই, সমস্যা হলো কট্টর জাতীয়তাবাদে৷ ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' এই স্লোগান নিয়ে ভোটে লড়লেন ট্রাস্প এবং অবিশ্বাস্যভাবে জিতলেন৷ তখন অবিশ্বাস মনে হলেও, এখন মনে হচ্ছে মার্কিনীরা আসলে এমনই৷ আর মেয়াদজুড়ে ট্রাম্প যত অপকর্ম করেছেন আর যত মিথ্যা বলেছেন; তাতে তার কয়েকবার অভিশংসন হওয়া উচিত ছিল৷ কিন্তু আমি, নিশ্চিত করে বলতে পারি, ট্রাম্প আবারও নির্বাচিত হবেন৷ নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্পের প্রধান এজেন্ডা ছিল অভিভাসন ঠেকানো৷ মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলতে টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় নিজের সরকার অচল করে দিতেও দ্বিধা করেননি এই জাতীয়তাবাতী মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে ওঠা অনেক মার্কিন মূল্যবোধ ধুলায় লুটিয়ে দিলেন ট্রাম্প একাই৷ বিশ্বজুড়ে যখন আঞ্চলিক ঐক্য আর দেয়াল ভাঙ্গার গান, তখন ট্রাম্প ধরেছেন উল্টো সুর৷ ভাঙা নয়, আবার দেয়াল গড়ার ধারণায় ফিরছে বিশ্ব৷ যুক্তরাষ্ট্রের এই জাতীয়তাবাদের ঢেউ লেগেছে যুক্তরাজ্যেও৷ রীতিমত ভোটাভুটি করে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সেই ব্রেক্সিট নিয়ে এখন টালমাটাল যুক্তরাজ্য৷ ব্রেক্সিট ট্রাম্পের দেয়াল তোলার মতই স্বার্থপরতা, বিচ্ছিন্নতা, একলা চলার ডাক৷ একলা থাকলে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য হয়তো খারাপ থাকবে না৷ কিন্তু সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা আর একা একা ভালো থাকার যে পার্থক্য সেটা বোঝার মত বিবেচনাবোধ ট্রাম্পদের নেই৷

বিশ্বের অনেকগুলো সমস্যা এখন এই জাতীয়তাবাদ বা ধর্মীয় মৌলবাদ থেকে সৃষ্ট৷ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে তাদের পরিণত করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠিতে৷ সেখানেই থেমে থাকেনি মিয়ানমার, তাদের ঠেলে পাঠিয়েছে বাংলাদেশে৷ আর বাংলাদেশে আগে থেকেই আছে কয়েক লাখ আটকেপড়া পাকিস্তানি৷ রোহিঙ্গাদের জোর করে পাঠানো হলেও, পাকিস্তানীরা ৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তখনকার পুর্ব পাকিস্তানে এসেছিল৷ একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হয়ে গেলে ভারত থেকে আসা এই মুসলমানেরা আটকে পড়ে বাংলাদেশে৷ কখনো পাকিস্তান না দেখা এই জনগোষ্ঠি ধর্মের বিবেচনায় আটকে পড়া পাকিস্তানি৷

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিত্বত্ত্বের ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছিল ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তান, যদিও সে রাষ্ট্র ২৩ বছরেই ভেঙ্গে গেছে৷ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ৷ তবে ভারত এগিয়ে চলে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে৷ এখনও কাগজে-কলমে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ বটে, কিন্তু বাস্তবে নয়৷ নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ মিলে ভারতকে কট্টর হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে৷ কারণ সেটি মুসলিম অধ্যূষিত৷ আসামে নাগরিক তালিকা প্রকাশ করে বাঙালি মুসলমানদের কোণঠাসা, এমনকি সুযোগ পেলে দেশছাড়া করার হুমকি দিয়েছে৷ একদিকে পাকিস্তানে ইসলামী মৌলবাদ, আরেকদিকে ভারতে হিন্দু মৌলবাদ৷ মূদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ৷

এই যে দেশে দেশে অভিভাসীদের ভিড়, শরাণার্থী শিবিরগুলো খালি বড় হচ্ছে, বাড়ছে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা; এসবই কিন্তু আমাদের কারো না কারো দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদের ফল৷ যতদিন আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ভাবনায় ফিরতে না পারবো, ততদিন বিশ্বজুড়ে এ ধরনের সঙ্কট আরো বাড়বে, রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা বাড়বে, অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের স্রোত আরো লম্বা হবে৷ আসাম বা কাশ্মীর নিয়ে যখন আমরা কথা বলি, তখন বলা হয়, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার৷ কিন্তু কাশ্মীর আর আসামে লাখ লাখ মানুষকে নিপীড়ন করা কোনোভাবেই কোনো দেশের অভ্যন্তরীন বিষয় হতে পারে না৷ নিপীড়নের প্রতিবাদ করার দায়িত্ব বিশ্বের সকল বিবেকবান মানুষের৷ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলার সময়ও আমি বিভ্রান্ত হয়ে যাই৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা করে, ধর্ষণ করে, আগুন লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িছাড়া করে৷ মানবিক বাংলাদেশ তাদের সবাইকে আশ্রয় দেয়৷ আমি আশা করেছিলাম, বিশ্বের সবাই বাংলাদেশের পাশে থাকবে৷ সম্মিলিত চাপে মিয়ানমার বাধ্য হবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে৷ কিন্তু কিসের কী৷ বুঝলাম, আমি খুব বোকা৷ দুই বছর হয়ে গেছে, একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি৷ বরং মিয়ানমারের নানামাত্রিক টালবাহানা চলছেই৷ চীন-রাশিয়া যখন মিয়ানমারের পক্ষে থাকে, আমি অবাক হই৷ কোনো সভ্য রাষ্ট্র কিভাবে মিয়ানমারের পক্ষে থাকতে পারে? কিন্তু সবাই বলে, এখানে স্বার্থটাই আসল৷ সবাই নিজের স্বার্থটা দেখবে৷ আমি দ্বিমত করছি না৷ সবাই অবশ্যই নিজের স্বার্থটাই দেখবে৷ কিন্তু তাই বলে, স্বার্থের কথা বলে, এত বড় অন্যায়ের পক্ষ নেবে৷ স্বার্থটাই সব; ন্যায্যতা, মানবতা বলে কিছু থাকতে নেই বুঝি৷ ১২ লাখ মানুষের জীবনের চেয়ে চীনের কাছে স্বার্থটাই বুঝি বড়?

তবে সবাইকে নিয়ে চলা মানেই কিন্তু দেশকে ভুলে যাওয়া নয়৷ দেশকে ভালোবেসেই বিশ্ব মানবতার কল্যাণে কাজ করা সম্ভব৷ শতবছর আগে ব্রতচারী আন্দোলনের প্রবর্তক গুরুসদয় দত্ত লিখে গেছেন – 'বিশ্বমানব হবি যদি/কায়মনে বাঙ্গালী হ'৷ আমি যখন গাই ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…' তার মানে কিন্তু এই নয়, আমি বাকিদের ঘৃণা করি৷ হতে পারে, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি; কিন্তু ভালোবাসি বিশ্ব মানবতার সবাইকেই৷ ‘সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি…' এই গানকে কেউ কেউ কট্টর জাতীয়তাবাদী বলেন৷ কিন্তু এটা দেশাত্মবোধক গান বটে, তবে কট্টর জাতীয়তাবাদী নয়৷ আমি জানি বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা দেশ নয়৷ কিন্তু আমার কাছে আমার দেশই সেরা৷ ছেড়া শাড়ি পড়া হলেও, মূর্খ হলেও, কালো হলেও আমার মাই কিন্তু আমার কাছে সেরা৷ মায়ের বদন মলিন হলে যদি আপনার নয়ন জলে ভাসে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি আপনার মাকে ভালোবাসেন, আপনার দেশকে ভালোবাসেন৷ এই সংবেদনশীলতাই আপনাকে আরো ভালো মানুষ করে তুলবে৷ আর আপনি যখন সত্যিকারের ভালো মানুষ হয়ে উঠবেন; তখন দেশ-জাতি-ভাষা-বর্ণ-ধর্ম কিছুই আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে না৷ আপনি মানুষকে বিবেচনা করবেন মানুষ হিসেবেই৷ নিছক দেশের স্বার্থ নয়, আপনি সবকিছু বিবেচনা করবেন ন্যায্যতা দিয়ে, বিবেচনা দিয়ে৷ এমনকি আপনার প্রিয় দেশও কোনো অন্যায় করলেও আপনি তার প্রতিবাদ করবেন৷ এটাই সত্যিকারের দেশপ্রেম, জাতীয়বাদ, মানবতাবাদ৷

সাংবাদিক প্রভাষ আমিনের লেখাটি কেমন লাগলো জানান বন্ধুরা, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য