1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শাহজাহানের ভাই সিরাজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দাদার সাম্রাজ্যে ভাইয়ের দাপট। শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে পথে সন্দেশখালির নারীরা। পুলিশের আশ্বাস সত্ত্বেও তারা বিক্ষোভে অনড়।

https://p.dw.com/p/4cpjn
সন্দেশখালির নারীদের প্রতিবাদ
শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে পথে সন্দেশখালির নারীরা। (ফাইল ছবি)ছবি: Subrata Goswami/DW

সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গায়১৪৪ ধারা থেকে কড়া পুলিশি নজরদারি। তাতেও প্রতিবাদ আন্দোলন থেকে পিছু হটছেন না স্থানীয় মানুষজন। বৃহস্পতিবার বেড়মজুর এলাকায় যে উত্তেজনার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল, শুক্রবার তা বিস্ফোরণের আকার নেয়। শনিবারও উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে এই এলাকা।

শাহজাহানের ভাই সিরাজ

সন্দেশখালি বেড়মজুর এক ও দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে সিরাজউদ্দিনের রাজত্ব চলে বলে দাবি গ্রামবাসীর। অভিযোগ, বিঘার পর বিঘা চাষের জমি দখল করে ভেড়ি তৈরি করেছেন সিরাজ। এর ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে স্থানীয়দের। বিনিময়ে তারা কিছু পাননি।

সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামেন গ্রামবাসী। বৃহস্পতি ও শুক্রবার আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় সিরাজের ভেড়ি সংলগ্ন আলাঘরে। গতকাল স্থানীয়দের প্রতিবাদে উত্তেজনা চরমে ওঠে। পুলিশ কর্তারা এসেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছেন।

শাহজাহানের মেজ ভাই সিরাজ। এলাকায় সিরাজ ডাক্তার নামেও তার পরিচিতি রয়েছে। তবে শুধু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নয়, সিরাজও উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরার মতো হাত পাকিয়েছেন জমির দখলদারির ক্ষেত্রে। এমনই অভিযোগ গ্রামবাসীর। এমনকি তিনি নাকি জমি দখল করে বাজারও বসিয়েছেন দাদার মতো।

পুলিশের সামনে শেখ সিরাজের বিরুদ্ধেগ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, "শাহজাহানের ভাই জোর করে আমাদের জমি কেড়ে নিয়েছে, চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রায় ১৫ বিঘা এলাকা জুড়ে ভেড়ি তৈরি করেছেন সিরাজউদ্দিন। দখলদারির প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি।"

শুক্রবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সিরাজের ভেড়ি লাগোয়া আলাঘরে ফের আগুন দেয়া হয়। দলে দলে পুরুষ-মহিলারা চলে আসেন ভেড়ি চত্বরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে।

আজ শনিবার মাঠপুকুর এলাকায় নারীরা লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের সঙ্গে তাদের বিতন্ডা হয়। গ্রামবাসীর দাবি, অবিলম্বে শাহজাহান ও তার ভাই সিরাজকে গ্রেপ্তার করতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের কেড়ে নেয়া জমি।

পুলিশে অনাস্থা গ্রামবাসীর

প্রতিবাদীদের পুলিশ আটক করছে, এই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন গ্রামবাসী। মহিলারা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবাদ জানান। এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, কাউকে আটক করা হয়নি।

পুলিশ ও প্রশাসন সন্দেশখালিতে অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র খুলেছে। বেড়মজুর এলাকার কেন্দ্রে ৭০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর ৫০টির বেশি সিরাজের বিরুদ্ধে। সবই প্রায় জমি হাতানোর অভিযোগ।

শাহজাহানের ভাই এখন গাঢাকা দিয়েছেন। অথচ ৫ জানুয়ারি তাদের বাড়ির সামনে ইডি আধিকারিকরা আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানেই ছিলেন সিরাজ। নিয়মিত টিভি ক্যামেরার সামনে বক্তব্য পেশ করেছেন। কেন তাকে পুলিশ ধরেনি, এই প্রশ্ন উঠছে।

সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে হাড় হিম করা যত অভিযোগ

আস্থা ফেরাতে সরাসরি পুলিশ কথা বলছে জনতার সঙ্গে। রাজ্য পুলিশের ডিজি, দক্ষিণবঙ্গ রেঞ্জের ডিআইজি, বসিরহাটের পুলিশ সুপার এলাকায় এসে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। মোবাইলে জেলাশাসকের সঙ্গে প্রতিবাদী নারীদের কথা বলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন তারা।

কিন্তু কোনো আশ্বাসেই কর্ণপাত করেননি গ্রামবাসী। তাদের একটাই প্রশ্ন, বছরের পর বছর অত্যাচার চললেও কেন পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি? এখন তাদের আশ্বাসে কিসের ভরসা?

রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু এই এলাকায় সফরে গিয়ে আজ বলেন, "কোনো অন্যায় হয়ে থাকলে কাউকে ছাড়া হবে না। সব অভিযোগের প্রতিকার করা হবে। দল ও সরকারের পক্ষ থেকে এ কথা বারবার বলা হয়েছে।"

'নন্দীগ্রাম ভয়ংকর, সন্দেশখালি আরো ভয়ংকর'

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "শাহজাহান সরকারি সুরক্ষা কবচের মধ্যে রয়েছেন। তাই পুলিশ তাকে ধরছে না। তাকে ধরলে অনেক সত্য বেরিয়ে আসতে পারে।"

সন্দেশখালির চলতি পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় বারবার উঠে আসছে বাম আমলের সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ। যদিও দুটিকে আলাদা চোখে দেখছেন চিত্রশিল্পী সমীর আইচ।

তিনি বলেন, "দুটোর কারণ আলাদা। নন্দীগ্রামে একটা প্রকল্প হচ্ছিল। তার ফলে সেখানে বসবাস করা যাবে না, এমনটাই ভেবেছিলেন গ্রামবাসী। কিন্তু এখানে বছরের পর বছর জমি দখল করা হয়েছে, নারীর সম্ভ্রমহানি ঘটানো হয়েছে। আগেরটা ভয়ংকর, এটা আরো ভয়ংকর।''