1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘স্পর্শকাতর বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের যাওয়াটা বিব্রতকর’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৩ ডিসেম্বর ২০২২

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত শাহীনবাগে ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের সমন্বয়কের বাসায় গিয়েছিলেন৷ সেখানে বাইরে ‘মায়ের কান্না’ নামে পৃথক একটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷

https://p.dw.com/p/4LNBi
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদছবি: Samir Kumar Dey/DW

কোনো কূটনীতিকের কারও বাসায় যেতে বাধা আছে কিনা? কেনই বা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হল? বিদেশিদের কাছে আমাদের অভিযোগের প্রবণতা বাড়ছে কিনা? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ৷ 

ডয়চে ভেলে : দেশের কোন নাগরিকের কূটনীতিকদের কাছে নিজের চাহিদার কথা বলতে কোন বাধা আছে কিনা?

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ : আইনগত কোন বাধা আছে বলে আমার জানা নেই৷ তবে এটার খুব একটা কোন প্রয়োজনও নেই৷ কারণ দেশের নাগরিকের কোন সমস্যা হলে সেটার জন্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে৷ তাদের কাছেই প্রথমে যাবে এবং তাদের কাছেই দাবি দাওয়াগুলো উত্থাপন করবে৷ বিদেশি কোনো রাষ্ট্রদূত তিনি তো এ দেশের মেহমান৷ তিনি এদেশের মানুষের অভিযোগ শোনার জন্য দায়িত্ব নিয়ে আসেননি৷ সুতরাং তাদের কাছে যাওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি না৷  

সম্প্রতি মায়ের ডাক নামে একটি সংগঠনের সমন্বয়কের বাসায় গেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত৷ কূটনীতিকদের এমন কোন সংগঠনের নেতাদের বাসায় যাওয়া আপনি কীভাবে দেখেন?

যদি কোনো বিষয় এমন হয় যে, বিষয়টির স্পর্শকাতরতা আছে, যেমন মায়ের ডাকযে সংগঠন আমি জানি তাদের মনে অনেক কষ্ট আছে৷ এই ধরনের যে সংগঠনগুলো তারা আপনজনকে হারিয়েছেন, কী কারণে হারিয়েছেন সেটা অন্য ব্যাপার৷ পরিবারের সদস্যদের কাছে একটা কষ্ট আছে৷ এই কষ্টটার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুনের মাধ্যমে এপ্রোচ করার ব্যাপার আছে৷ হঠাৎ করে একজন রাষ্ট্রদূতেরসেখানে যাওয়াটা বিব্রতকর৷ কারণ ওই বিষয়ে যদি আমরা ব্যর্থ হয়ে থাকি তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপের একটা বিষয় আছে৷ সম্প্রতি যে ঘটনাটা ঘটেছে সেখানে তিনি যদি সরকারকে জানিয়ে সেখানে যেতেন তাহলে সরকারও সহায়ক একটা অবস্থা নিতে পারত৷ তাহলে যে ধরনের সমস্যা হয়েছে সেটা হতো না৷ 

‘দেশে মানবাধিকারের অবস্থা কোনভাবেই খারাপ না’

কূটনীতিকদের এরকম কারো কাছে যাওয়া কী আইনের লংঙ্ঘন?

এটার কোন প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি না, সেটা আগেই বলেছি৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হচ্ছে এই নিখোঁজ লোকজনকে খুঁজে বের করা৷ শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী না, এখানে একটি মন্ত্রণালয় আছে, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীও আছেন৷ অনেক কর্মকর্তাও আছেন৷ তাদের দৃষ্টিতে বিষয়টি আনা হচ্ছে প্রথম কাজ৷ রাষ্ট্রের একটা বিচারিক কার্যক্রম আছে সেখানেও যেতে হবে৷ কিন্তু রাষ্ট্রদূতের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই৷

এখন সরকার কি এই সংগঠনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিলে সেক্ষেত্রে কী আইনের কোন লংঙ্ঘন হবে না?

যার বাসায় গেছেন তিনি কী দাওয়াত দিয়েছিলেন নাকি রাষ্ট্রদূত নিজের ইচ্ছায় সেখানে গেছেন এটা একটা বিবেচ্য বিষয়৷ আমি প্রথমেই বলেছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়াটা তার জন্য সমীচীন৷ সেটা না করে কোন কূটনীতিকের কাছে গেলে রাষ্ট্রের জন্য কষ্টকর ও বিব্রতকর৷

মায়ের ডাক বা মায়ের কান্না সংগঠন দু'টির কেউ কী কখনও অভিযোগ নিয়ে মানবাধিকার কমিশনে এসেছেন?  

আমার জানামতে কখনও আসেনি৷

একটি সংগঠনের সমন্বয়কের বাসায় যখন একজন কূটনীতিক যান তখন বাইরে একই ধরনের আরেকটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান করাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

যখন কেউ তার স্বজনকে হারায় তখন তার কষ্ট লাগে৷ সেটার প্রকাশ করতে গেলে অন্যদের কাছে না গিয়ে নিজ দেশের কর্তৃপক্ষকে অগ্রগণ্য হিসেবে নিতে হবে৷

অনেকেই বলছেন, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এতই খারাপ যে, বিচার না হওয়ায় সবাই কূটনীতিকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন?

স্বামী বিবেকানন্দের একটা কথা আছে, যত মত তত পথ৷ কথাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিভিন্ন মত সৃষ্টি হয়, আমরা মানুষ হিসেবে মানবীয় গুনাবলীর মাধ্যমে সঠিকভাবে পরিচালনা করাই হলো আমার দায়িত্ব৷ এটা এমনভাবে প্রচার হওয়া উচিৎ নয় যে কারণে কতগুলো সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ এজন্য বিভিন্নজনের বিভিন্নমত তারা সেভাবেই করছে৷ সবাই সবকিছু মেনে নেবে, সবার একই ধরনের মত হবে সেটা কিন্তু বলব না৷ সবাই যার যার মতো করছে, সেটার প্রতিফলন হচ্ছে৷ গণতান্ত্রিক সমাজে সবার কথা বলার অধিকার আছে, যে কারণে তারা সেটা বলছেন৷

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার মানদণ্ডে দেশে এখন মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে?

আমি বলব, দেশে মানবাধিকারের অবস্থা কোনভাবেই খারাপ না৷ এই কারণে যে, অভিযোগগুলো উঠছে তার তদন্ত হচ্ছে৷ আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ আমিসহ কমিশনের সদস্যরা মিলে একমত হয়ে বলেছি যে, যেখানেই সমস্যা হোক আমরা সেখানে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করব৷ সেখানে আমরা সঠিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব৷ সেটা রাষ্ট্রকে অবহিত করার চেষ্টা করব৷ রাষ্ট্র যাতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করে সেটা আমরা চেষ্টা করব৷ আমরা আমাদের কাজটা চালিয়ে যাব৷ বিশেষ করে বড় কোনো মানবাধিকারের সমস্যা হয়েছে বলে আমি মনে করি না৷

গুম-খুনের যে অভিযোগ উঠছে, এসব ঘটনায় মানবাধিকার কমিশন কী কখনও তদন্ত করেছে?

হ্যাঁ, আমরা তদন্ত করেছি৷ আমরা পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছি যে, বলা হচ্ছে কেউ গুম হয়েছেন, কিছুদিন পর দেখা যাচ্ছে তিনি ফিরে এসেছেন৷ অর্থাৎ তিনি নিজেই হয়ত কোথায় চলে গিয়েছিলেন৷ আবার কেউ কেউ হয়তো মামলায় জাড়িয়ে গিয়েছিলেন ফলে নিজেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন৷ পরে হয়ত তাকেও পাওয়া গেছে৷ এ ধরনের ব্যাপারগুলো আছে৷ কেউ কেউ হয়ত বিশেষ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে চলে গেছেন৷ এ নিয়ে মানবাধিকার কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে৷ আমাদের সুষ্পষ্ট অবস্থান আছে, আমরা একটা পেপারও তৈরি করেছি৷

এসব ঘটনার তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের আইনি কোন সংকট আছে কিনা?

আইনে এমন কোন সংকট নেই৷ তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা কোনো বাহিনীর ক্ষেত্রে তদন্ত করার সীমাবদ্ধতা আছে৷ এক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার বিষয় আছে, সেটা আমরা করি৷ তবে দৈনন্দিন যা ঘটছে সেগুলোর তদন্ত করতে আমাদের কোন সংকট নেই৷

মানবাধিকারের কারণেই তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি সংস্থার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে৷ কোন যুক্তিতে আপনার কাছে মনে হচ্ছে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো?

যে দেশ স্যাংশন দিয়েছে সেটা তাদের চিন্তাধারার বিষয়৷ যাদের বিরুদ্ধে দিয়েছে বা এই সংস্থা আমাদের দেশে মোটামুটি নির্ভরযোগ্য সংস্থা হিসেবে দাঁড়িয়েছে৷ যারা অন্যায়, অত্যাচার বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কাজটা করে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কাজটা পরিচালনা করে সুনাম অর্জন করেছে৷ যারা স্যাংশন দিয়েছে তারা তাদের চিন্তা থেকে দিয়েছে৷ কিন্তু কোন একটি দেশ যদি অন্য কোন দেশের কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে হয় সেটার জন্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক একটা ফোরাম আছে৷ সেখানে গিয়ে যে কোনো দেশ, যে কোনো দেশের বিষয়ে বলতে পারে৷ সেখানে গিয়ে তারা তো বলতে পারত বাংলাদেশে এই কারণে আইন শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা হচ্ছে৷ কিন্তু একটা দেশ আরেকটা দেশ সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলাটা কষ্টকর একটা বিষয়৷ স্যাংশন না দিয়ে ওই ফোরামে যদি তারা বলত এবং এও বলতে পারত আপনারা তদন্ত করে আমাদের জানান৷ তদন্ত কিন্তু ওই দেশের দায়িত্ব থাকে এটার তদন্ত করে সেটা জানানো৷ এর মাধ্যমে মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে সেটা ভাবার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না৷