1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হুমায়ুন আজাদকে হত্যার দায়ে চার জঙ্গির ফাঁসি

১৩ এপ্রিল ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার ঘটনায় চার জঙ্গির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত৷

https://p.dw.com/p/49sL5
Symbolbild Galgen
ছবি: Nerijus Liobe/Zoonar/picture alliance

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন তিনি৷ এরপর ১২ আগস্ট জার্মানিতে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়৷

ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন বুধবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন৷ সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷

দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা দুই আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷

বাকি দুই আসামি নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ পলাতক৷

বিজ্ঞানমনস্কতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পক্ষে লেখা হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালে বইমেলা চলার সময় ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে টিএসসির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন৷

কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছরের আগস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে এসেছিলেন এই লেখক৷ পরে ১২ আগস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়৷

হামলার পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন৷ আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়৷ সেই মামলার রায় হলো বুধবার৷  

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এবং ধর্মান্ধতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসামিরা নৃশংসভাবে হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়েছিল৷''

Humaun Azad, berühmter Schriftsteller in Bangladesch
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan

নিয়ম অনুযায়ী এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে সাত দিন সময় পাবেন আসামিরা৷ তবে আপিল করতে হলে পলাতক আসামিদের আত্মসমর্পণ করতে হবে৷

২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ' উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে মৌলবাদীরা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল৷ সেই সময় জামায়াতের এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যিনি পরে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বইটি নিষিদ্ধেরও দাবি তুলেছিলেন৷

হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা বিক্ষোভ করেছিলেন৷

তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘‘জার্মানি থেকে পাঠানো হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু সনদ এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, অ্যানাটমিক্যালি মৃত্যুর যথেষ্ট কারণ পাওয়া না গেলেও টর্চারের (নির্যাতনের ফলে) ফলে তার মৃত্যু ঘটেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়৷ মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে এবং হাইপার টেনশনে তিনি মারা যান৷

‘‘জার্মানির মিউনিখ হাসপাতালের অটোপসি রির্পোট পর্যালোচানায় দেখা যায়, ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারির ওই তারিখে ঘটনার দিন মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তিনি অসুস্থ ও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন৷ চিকিৎসার পরও আরোগ্যপ্রাপ্ত না হয়ে বরং তিনি ধীরে ধীরে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখের বাসস্থানে যাওয়ার চারদিন পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন৷'' 

বিচারের দীর্ঘ অপেক্ষা

প্রথমে দায়ের করা হত্যা চেষ্টা মামলায় পুলিশ ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেয়৷ কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়ে বাদী মঞ্জুর কবির ২০০৯ সালের অক্টোবরে অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন৷

সেই আবেদনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘পাক সার জমিন সাদ বাদ বইটি প্রকাশের পর ২০০৩ সালের ২৩ নভেম্বর জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সংসদে বইটির সমালোচনা করেন, কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তার বিষয়ে তদন্ত করেননি৷ অপরাধী চক্র একটি বৃত্তি দিয়ে হুমায়ুন আজাদকে জার্মানিতে নিয়ে যায়৷ সেখানে তিনি হত্যার শিকার হন৷''

হুমায়ুন আজাদ নিজেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় হামলার পেছনে মৌলবাদী সংগঠন এবং যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর জড়িত থাকার ইঙ্গিত করেছিলেন সাংবাদিকদের কাছে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন৷

সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলাটি তদন্তের পর ২০১২ সালের ১৪ মে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে হত্যার অভিযোগ যুক্ত করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন৷

মো. মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন ওরফে হামিম ওরফে হাসিম, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ এবং হাফিজ মাহমুদ ওরফে রাকিব ওরফে রাসেলকে সেখানে আসামি করা হয়৷

তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় আসামির তালিকা থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী, ছাত্রলীগ নেতা আবু আব্বাস ভূঁইয়া, গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা মাহমুদ, আবদুল খালেক গবা ওরফে টাইগার, শফিক উল্লাহ ওরফে সাদ এবং ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, আতাউর রহমান সানি, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ও খালেদ সাইফুল্লাহর নাম সম্পূরক অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়৷

ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূইয়া জিন্নাহ ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সম্পূরক অভিযোগেপত্রের পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচার শুরুর আদেশ দেন৷

আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা৷ তাদের মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আটক রয়েছেন৷ নূর মোহাম্মদ শুরু থেকেই পলাতক৷

সালাহউদ্দিন সালেহীন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেপ্তার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা৷ সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফিজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন৷

গত ২৭ মার্চ দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে এ মামলা রায়ের পর্যায়ে আসে৷ বুধবার সেই রায়ে জীবিত চার আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত৷

জেডএইচ/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)