1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমি কী পরবো, ঠিক করবে কে?

৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

একেক মানুষের পছন্দের পোশাক একেক রকম৷ ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ও পরিবেশ মানুষের পোশাকও পালটে দেয়৷ আমরা ভাবি, আমার যা ইচ্ছে পরবো, আরেকজন তা ঠিক করে দেয়ার কে? কিন্তু আসলেই কি তা আমার ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে?

https://p.dw.com/p/3PAZP
প্রতীকী ছবিছবি: Privat

মফস্বল শহর থেকে প্রথম ঢাকায় এসেছি৷ ঢাকা সম্পর্কে জ্ঞান বলতে বিটিভিতে যা দেখি, তাই৷ কেনো জানি তখন ধারণা হয়েছিল, জিন্সের প্যান্ট মানেই বখাটে ছেলে৷ এর পেছনে অবশ্য আমার প্রফেসর বাবার ভূমিকা অনেক৷ সারা জীবন ফরমাল পোশাক পরে কাটিয়ে দেয়া বাবা প্রায়ই জিন্সের প্যান্ট পরে ছেলেপেলে দেখলেই মুখ ভ্যাংচাতেন৷ ফলে আমারও কেমন জানি একটা বিতৃষ্ণা গড়ে উঠেছিল৷

ঢাকায় ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে দেখি, সবাই জিন্সের প্যান্ট আর টিশার্ট পরেই ঘুরে বেড়াই৷ আর আমি, বাবার সুযোগ্য সন্তান, ফরমাল প্যান্ট আর ফুল হাতা শার্ট পরে ভারি ফ্রেমের চশমা চোখে জ্ঞানি জ্ঞানি ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াই৷ বন্ধুরাও মুখ টিপে হাসে, আর ‘প্রফেসর' বলে ভেংচি কাটে৷

আমার তখন কেনো জানি মনে হতে লাগলো, জিন্স আসলেই আরামের৷ আর বাবা যাই বলুক এতোদিন, জিন্স পরলে যে সবাই বখাটে হয় না, সে প্রমাণও পেলাম৷ কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাস ছাড়তে পারছিলাম না

শেষ পর্যন্ত যখন নিজেকে প্রচণ্ড অনুপ্রাণিত করে প্রথম জিন্সের প্যান্ট কিনলাম, ততোদিনে ভার্সিটি পাট চুকে গেছে৷ বন্ধুরা সবাই ভারি ভারি সিভি বগলে নিয়ে, চুল পরিপাটি করে আঁচড়ে, শার্ট-প্যান্ট ইন করে, চকচকে জুতা পরে বিভিন্ন অফিসে ইন্টারভিউ দিতে ব্যস্ত৷

আর আমি কেবল বাবার প্রভাব বলয় থেকে বের হয়ে জিন্স আর কেডস পরে ঘোরা শুরু করেছি৷ এতো সহজে ছাড়ি কিভাবে? ততোদিনে সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকে গেছি বলে আর নতুন করে ফরমাল সাজার কষ্ট করতে হয়নি বটে, কিন্তু এমন অন্যের দ্বারা পোশাকের ক্ষেত্রে প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ এখনও রয়ে গেছে বই কি৷ আমি যতো সহজে স্বীকার করলাম, অনেকেই সেটা করবেন না, কিন্তু প্রভাবিত হওয়ার এই ট্রেন্ড সবার মধ্যেই প্রায় একই৷

বরাবরই এই বিতর্ক থাকবে, পোশাক কার জন্য পরবেন- নিজের ভালো লাগার জন্য, নাকি অন্যের ভালো লাগানোর জন্য? যারা নিজের কথা বলেন, তারা বলেন- কে কি বললো, সেটায় কী আসে যায়? নিজের কমফোর্টই আসল কথা৷ বিপরীতে, যারা অন্যের কথা বলেন, তারা বলেন- পোশাকেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে৷ ফলে সেটা সবকিছু চিন্তা করেই হওয়া ভালো৷

আমি অবশ্য মনে করি দুটোই সঠিক৷ এমন কাপড় পরলেন যাতে আপনাকে দারুণ লাগছে, কিন্তু আপনি হাঁটতেই পারছেন না, সেটা আপনার আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তা এমনকি আনুষ্ঠানিকতাতেও প্রভাব ফেলবে৷ আবার খুব কমফোর্টেবল লাগছে, কিন্তু পরিবেশের সঙ্গে একেবারেই মাননসই না, সেক্ষত্রে অন্যরা আপনার সঙ্গে কমফোর্ট নাও ফিল করতে পারে৷

সুন্দর মডেল, নায়ক-নায়িকাদের দেখিয়ে আমাদের নানা বিষয়ে প্রলুব্ধ করা হয়৷ আমরা কি আসলে সেসব বিজ্ঞাপনে কাপড়-জুতা দেখি? একটু ভালো করে দেখবেন খেয়াল করে৷ আমরা কখনই একজন মডেলের গায়ে কাপড়টা দেখি না৷ দেখি মডেলকে সে কাপড়ে কতোটা ভালো লাগছে৷ কিন্তু অনেক ফ্রেমিং, অনেক আলোর বিন্যাস, শত শত ছবি থেকে বাছাই করার পর যে ছবিটা বিজ্ঞাপন হিসেবে আপনার সামনে উপস্থাপন করা হয়, আপনি পরলে আপনাকেও সারাক্ষণ তেমনই লাগতে থাকবে, এটা মনে করা একটু বোকামি নয় কি? এমনকি একই কাপড়ে ঠিক অন্য মডেলকে বসিয়ে দিয়ে খুবই বাজেও লাগতে পারে৷

শাড়ি নিয়ে ইদানিং বেশ একটা বিতর্কের ঝড় বয়ে গেলো৷ সত্যি কথা হলো, আশেপাশের অনেক নারীকেই শাড়ি পরা বিষয়ক ফ্যান্টাসিতে ভুগতে দেখেছি৷ আমার মা সারাজীবন শাড়ি পরেছেন, বাসাতেও, কাজের জায়গাতেও৷ তার কাছে এটা নিত্যদিনের স্বাভাবিক একটা পোশাক৷ কিন্তু সবার কাছে কি তাই? 

HA Asien | Anupam Deb Kanunjna
অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

না৷ আমার অনেক বান্ধবীকেও দেখেছি সারা জীবন অন্য পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও, কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে যেতে শাড়িই তাদের পছন্দ৷ সেটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের আদিখ্যাতার অভাব নেই৷ এটা দোষের কিছু নয়, বিশেষ আয়োজনে বিশেষ পোশাক ছেলেরাও পরে৷ কেউ পাঞ্জাবী, কেউ স্যুট৷

কিন্তু সেই বিশেষ দিনে বিশেষ পোশাক হিসেবে শাড়ি, পাঞ্জাবী, স্যুট আমরা কেনো পরি? আসলেই কি সেটা আমি কমফোর্ট ফিল করি বলে? কিন্তু এটাতেই কমফোর্ট ফিল করলে আমি তো তা প্রতিদিনই পরতাম৷ না, আসলে আমরা সে অনুষ্ঠানে, সে মানুষগুলোর সামনে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করতে চাই৷ তখন যদি কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আমার সেই উপস্থাপনের প্রশংসা করে বলে, তোমাকে পাঞ্জাবীতে দারুণ হ্যান্ডসাম লাগে, ওয়াও৷ আমার কি দুঃখ পাওয়া উচিত, নাকি উদ্দেশ্যের সার্থকতা বিবেচনায় আনন্দিত হওয়া উচিত?

এই বিতর্ক চলুক৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য