1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিআই স্বীকৃতি: পণ্যের প্রচারে-প্রসারে-গৌরবে

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ভৌগোলিক নির্দেশক তথা জিআই সনদ পাওয়া পণ্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক ব্যাপার থাকে৷ তাই একে নিয়ে গৌরব করাই যায়৷ কিন্তু এই স্বীকৃতির আর্থিক কোনো গুরুত্ব আছে কি?

https://p.dw.com/p/4cUU7
বাংলাদেশের ইলিশ মাছ
দেশের ২১টি পণ্যকে তারা জিআই সনদ দেয়া হয়েছে, আরো ১১টি পেয়েছে প্রাথমিক স্বীকৃতিছবি: Imago/UIG

টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জিআই পণ্য- এমন খবর যেদিন বাংলাদেশে এলো, সেদিন থেকেই এ নিয়ে সরব হলো বাংলাদেশিরা৷ টাঙ্গাইল ভারতের জেলা নয়, বাংলাদেশের জেলা- অনলাইনভিত্তিক সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লো এমন সমালোচনা৷ মানববন্ধনও হলো টাঙ্গাইলে৷ দেশের প্রশাসন কেন নির্বিকার- তোলা হলো এমন প্রশ্ন৷ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও বসে থাকেনি৷ দ্রুততার সঙ্গেই তারা টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করে৷ টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন ৬ ফেব্রুয়ারি এর জিআই স্বীকৃতির আবেদন জমা দেয় পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে৷ তারাও দিয়েছে প্রাথমিক স্বীকৃতি৷ যা ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ সেখানে টাঙ্গাইল শাড়ি ছাড়াও ছিলো নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা ও গোপালগঞ্জের রসগোল্লার জিআই-এর প্রাথমিক সনদ৷ এই তিনটি পণ্য দুই মাস পর চূড়ান্ত সনদ পাবে- জানিয়েছে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর৷

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের ২১টি পণ্যকে তারা জিআই সনদ দিয়েছে৷ আরো ১১টি পেয়েছে প্রাথমিক স্বীকৃতি৷ এছাড়া এখন আবেদন জমা আছে ১৩টি৷ এর আগে ১০টি আবেদন যাচাই করে তারা নাকচ করে দিয়েছে৷

কোনো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ আবেদন করতে পারে: আলেয়া

সনদ পাওয়া একুশ পণ্য: ২০১৬ সালে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর থেকে দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই সনদ পায় জামদানি৷ এরপর স্বীকৃতি পেয়েছে- বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাতি আম,বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বাংলাদেশের কালোজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকার মসলিন, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের শীতলপাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই ও কুষ্টিয়ার তিলের খাজা৷

জিআই সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের পরিচালক আলেয়া খাতুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অধিদপ্তর থেকে আমরা জিআই সনদ দিয়ে থাকি৷ আমরা কোনো আবেদনকারী না৷ আবেদন করতে পারে জেলা প্রশাসন, অ্যাসোসিয়েশন বা অন্য কোনো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ৷ আমাদের কাছে আবেদন জমা দেওয়া হলে আইন মোতাবেক অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জিআই সনদ দেওয়া হয়৷'

কোনো একটি পণ্যের জিআই সনদ একাধিক জেলা বা একাধিক দেশের যৌথভাবে থাকতে পারে কি-না, এ প্রসঙ্গে আলেয়া খাতুন বলেন, ‘যৌথ ঠিক না৷ যেটা যে অঞ্চলের বা একেক দেশের একেকটা হতে পারে৷ আবার আবেদনকারীও একাধিক হতে পারে৷'

 

জিআই কেন জরুরি?

জিআই স্বীকৃতি পাওয়া পণ্য ঢাকাই মসলিনের খ্যাতি মোগল আমলে ছড়িয়ে পড়েছিলো পুরো দুনিয়ায়৷ অভিজাত এই বস্ত্র হারিয়ে গেছে৷ কিন্তু ৪০০ বছর আগের সেই সুনাম রয়ে গেছে আজো৷ এদিকে ময়মনসিংহের মুক্তগাছার মণ্ডা-খ্যাত ‘গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডা' এবার তৈরি শুরুর ২০০ বছরে পা রেখেছে৷ ষষ্ঠ প্রজন্মের হাত ধরে চলা এই মিষ্টান্ন সদ্যই প্রাথমিক জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন মুক্তগাছার মণ্ডার সহ-সত্বাধিকারি রবীন্দ্রনাথ পাল৷ তিনি জানালেন, তাদের পারিবারিক আগ্রহের কারণেই জেলা প্রশাসন মণ্ডার জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদন করেছিলো৷ জিআই পণ্য হওয়ার কারণে মণ্ডা নিয়ে দেশে-বিদেশে মানুষের আগ্রহ আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন৷

এর মানে সাধারণ থেকে অসাধারণ হওয়া: কাকলী

মুক্তগাছার মণ্ডা একটি ঐতিহ্যবাহী দুগ্ধজাত মিষ্টান্ন৷ এর জিআই স্বীকৃতি প্রয়োজন ছিলো বলে মনে করেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, গবেষণাসহ যাবতীয় নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন জমা দেওয়া হয়৷ এর প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর প্রাথমিক সনদ দেয়৷

জিআই সনদপ্রাপ্তি বিখ্যাত পণ্যের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করছে৷ কিন্তু এর অর্থনৈতিক কোনো সুবিধা আছে কি-না জানতে চাইলে ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (ইডিসি) প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘জিআই সনদের মাধ্যমে শুধু গৌরব করা যায়, এমন নয়৷ আমি বলবো, পুরোটাই আর্থিক সুবিধা৷ যখন একটা জেলার পণ্য জিআই হয়, এর মানে হচ্ছে একটা পণ্য সাধারণ থেকে অসাধারণ হওয়া৷ এতে এ নিয়ে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, চাহিদাও বৃদ্ধি পায়, বিক্রিও বৃদ্ধি পায়৷'

তিনি আরো বলেন, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা সম্প্রতি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে, এতে অন্য জেলার চেয়ে এর চাহিদা বেশি থাকবে৷ জিআই পণ্য হিসেবে বাইরে রপ্তানি করতে পারলে এটা থেকে ২০ শতাংশ রয়ালিটি ফি পাবে সরকার- শুধু এ নামটা ব্যবহার করার কারণে৷ তাই জিআই পণ্য জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে৷ আর আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করলে ডলার আয় করতে পারবে বাংলাদেশ৷

সুন্দরবনের মধু, টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে ভারত জিআই সনদ আগেই করেছে- এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কি পিছিয়ে পড়ছে? এমন প্রশ্নে জিআই পণ্য নিয়ে তৃণমূলে কাজ করা কাকলী তালুকদার বলছেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে ভারত করে ফেলেছে আমরা করিনি৷ তাই আগে কী হয়েছে, সেটা না ভেবে আমাদের এখন কাজে ফোকাস হতে হবে৷ বাংলাদেশ-ভারত মিল রয়েছে এমন সম্ভাব্য জিআই পণ্যগুলোর তালিকা করে সেগুলোকে দ্রুত জিআই পণ্য করে ফেলতে হবে৷ কারণ ভারত আগে করলে, সেটাও বেআইনি কিছু হবে না৷'

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় ফল কাঁঠাল- এসব পণ্য ভারতেও উৎপাদিত হয়৷ তাই এগুলো ভারতের আগেই জিআই করা দরকার বলে মনে করছেন ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (ইডিসি) প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার৷ এক্ষেত্রে প্রশাসনে যারা আছেন, তাদের ভূমিকা কী- জানতে চাইলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘গবেষণার কাজে ঘাটতি ছিলো, এখন আমরা ভালো টিম নিয়ে গবেষণা সহায়তা দিচ্ছি৷ কাজ করার শুরুতে সচেতনতার ঘাটতিও দেখেছি অনেকের মধ্যে৷ এখন প্রশাসনেও এ নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে৷'

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য