1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টেস্টে বিরাট-যুগ শেষ, সরে গেলেন অন্যতম সেরা ক্যাপ্টেন

১৭ জানুয়ারি ২০২২

এবার টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল ক্যাপ্টেন তিনি।

https://p.dw.com/p/45c7g
টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব ছাড়লেন বিরাট কোহলি। ছবি: AFP/D. Sarkar

গত ১৬ সেপ্টেম্বর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়েছিলেন বিরাট কোহলি। তখন তিনি বলেছিলেন, টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক পদে থাকবেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ক্রিকেট বোর্ড তাকে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টিমের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শেষে বিরাট নিজেই টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ ছেড়ে দিলেন।

এর মধ্যে অবশ্য বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রকাশ্য বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। বিরাটের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগও উঠেছে। সৌরভ জানিয়েছিলেন, বোর্ড বিষয়টি দেখছে।

কেন এই সিদ্ধান্ত

কোহলি বলেছেন, ''সাত বছর ধরে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এর পিছনে আছে প্রতিদিনের পরিশ্রম ও ধৈর্য। আমি পুরোপুরি সৎ হয়ে এই কাজ করে গিয়েছি। চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখিনি। কিন্তু একটা স্তরে এসে সব কিছু থেমে যায়। আমারও থেমে যাওয়ার সময় এসেছে। টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে এটাই আমার থামার সময়।''

কোহলির বক্তব্য, ''সাত বছরের এই যাত্রায় উত্থান-পতন ছিল। কিন্তু চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। আমি ১২০ শতাংশ দিয়েছি। আমি দলের প্রতি কখনো অসৎ হতে পারব না।''

দুইজনের প্রশংসা

অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়ার সময় সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী ও সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ধন্যবাদ দিয়েছেন কোহলি। উল্লেখযোগ্যভাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম একবারের জন্যও নেননি। অন্য কারো কথা বলেননি।

বিরাট অধিনায়কত্ব ছাড়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সৌরভ। অধিনায়ক হিসাবে বিরাটের প্রশংসা করেছেন তিনি।

ক্যাপ্টেন বিরাট

বিরাট কোহলি ভারতের অন্যতম সফল ক্যাপ্টেন। ৬৮টি টেস্টে তিনি দেশের অধিনায়কত্ব করেছেন। তার মধ্যে ৪০টি টেস্টে তিনি জিতেছেন। ১১টি ড্র হয়েছে এবং ১৭টিতে হেরেছেন। তিনি বিশ্বের সফল টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কের তালিকায় চার নম্বরে আছেন। ২০১৮ সালে তিনি পরপর তিন বছর টেস্ট ক্রিকেটে এক হাজার রান করে রেকর্ড করেন। অধিনায়ক হিসাবে তিনি সাতবার দুইশ বা তার বেশি রান করেছেন। এটাও একটা রেকর্ড।

তার অধিনায়কত্বে ভারত টেস্ট ক্রিকেটের তালিকায় প্রথম স্থান পেয়েছে। প্রথম টেস্ট ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে ভারত ফাইনালে উঠেছে। অবশ্য নিউজিল্যান্ডের কাছে তারা হেরে যায়। তিনি টিমে ফিটনেস কালচার নিয়ে এসেছিলেন।

বিতর্কে বিরাট

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলার সময় কোহলি জানিয়ে দেন, তিনি বিশ্বকাপ শেষ হলেই অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। তবে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে অধিনায়ক থাকবেন। এরপর রোহিত শর্মাকে নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করে বোর্ড।

কিন্তু তখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তিনি কোহলিকে অধিনায়কত্ব না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কোহলি তা শোনেননি। সৌরভ এই মন্তব্য করেন গত ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৫ ডিসেম্বর কোহলি সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, তাকে কেউ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেননি। তার সিদ্ধান্ত বিসিসিআই ভালোভাবেই নিয়েছিল। এরপর প্রশ্ন ওঠে, কে সত্যি কথা বলছেন, সৌরভ নাকি বিরাট?

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় একদিনের টিম ঘোষণা করার সময় নির্বাচন কমিটির প্রধান চেতন শর্মা ঘোষণা করেন, নির্বাচন কমিটির বৈঠকে সকলেই কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কের পদ না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। তার আগেই অবশ্য কোহলিকে সরিয়ে রোহিতকে একদিনের ক্রিকেটেও অধিনায়ক করেছে বোর্ড

অনুস্কা শর্মার প্রতিক্রিয়া

বিরাট কোহলির স্ত্রী ও বলিউডের নায়িকা অনুষ্কা শর্মা বিরাটের অধিনায়কত্ব ছাড়া নিয়ে দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বিরাটের সঙ্গে তার ছবি শেয়ার করে অনুষ্কা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ''আমার সেই দিনটার কথা মনে পড়ছে, ২০১৪ সালে যেদিন তুমি এসে বললে, ধোনি অবসর নিয়েছেন, তোমায় টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেদিন বিকেলেই আমি, তুমি ও ধোনি কথা বলছিলাম। তখন ধোনি বলেছিলেন, খুব তাড়াতাড়ি দেখবে, তোমার দাড়ি সাদা হওয়া শুরু হয়েছে।''

অনুষ্কা বলেছেন, ''সেইদিন থেকে আমি তোমার দাড়ি সাদা হওয়ার পাশাপাশি আরো অনেক কিছু দেখেছি। আমি দেখেছি, কীভাবে তুমি এগিয়ে গেছো এবং তোমার নেতৃত্বে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট দল কীভাবে কৃতিত্ব অর্জন করেছে। আমি তোমার জন্য গর্বিত।''

অনুষ্কা বলেছেন, ''তোমার সামনে যে চ্যালেঞ্জ এসেছে, তা সবসময় মাঠের মধ্যে থেকে আসেনি। বাইরে থেকেও এসেছে। যখনই তুমি হেরে গেছো, তখনই চোখের জলে বসে ভেবেছো তোমার কি কোনো খামতি থেকে গেছে? তুমি অপ্রথাগত, সোজাসাপটা মানুষ। তুমি ভান করতে পার না। এটাই আমার কাছে তোমাকে মহান করেছে।''

কে অধিনায়ক হবেন

দুইটি নাম খুব বেশি করে শোনা যাচ্ছে। রোহিত শর্মা এবং কে এল রাহুল। রোহিতকে টি-টোয়েন্টি ও একদিনের আন্তর্জাতিকে নেতা করা হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি নেতা হলে শচিনের পর মুম্বইয়ের কোনো ক্রিকেটার আবার ভারতের অধিনায়ক হবেন। সেটাও ২২ বছর পর।

সুনীল গাভাস্কার অবশ্য বলেছেন, তিনি মনে করেন, ঋষভ পন্থের হাতে অধিনায়কত্ব তুলে দেয়া উচিত। ঋষভ তরুণ। তিনি আইপিএলে অধিনায়কত্ব করেছেন। তাই একজন তরুণের হাতে দলের দায়িত্ব দিলে ভালো হয়।

জিএইচ/এসজি (পিটিআই)