1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্দেশখালি, শাহজাহান নিয়ে তদন্তে সিবিআই: হাইকোর্ট

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
৫ মার্চ ২০২৪

এবার সন্দেশখালি নিয়ে তদন্ত করবে সিবিআই। শেখ শাহজাহানকে মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে তুলে দিতে হবে সিবিআইয়ের কাছে। নির্দেশ হাইকোর্টের।

https://p.dw.com/p/4dAyS
সন্দেশখালিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা
সন্দেশখালির নারীদের সঙ্গে পুলিশের বচসাছবি: Subrata Goswami/DW

সন্দেশখালি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে সন্দেশখালি-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে। 

এর আগে হাইকোর্টের এক বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, সন্দেশখালি-কাণ্ডের তদন্ত করতে বিশেষ দল বা সিট গঠন করবে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু সেই নির্দেশ খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, সিবিআই এই তদন্ত করবে। 

গত ৫ জানুয়ারি ইডি কর্মকর্তাদের আক্রমণ, সেখানে নারীদের উপর অত্যাচার, জোর করে জমি দখলের অভিযোগ, মারধরের মতো বিষয়গুলি নিয়ে এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করে দেখবে। 

ইডি-র তরফ থেকেও হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল, এই তদন্তভার যেন সিবিআই-কে দেয়া হয়। কারণ, পুলিশের উপর তাদের ভরসা নেই।

গত জানুয়ারি মাস থেকে সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অনেক অভিযোগ সামনে এসেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত একাধিক তৃণমূল নেতাকে।

সভায় যেতে বাধা

এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান গ্রেপ্তার হওয়ার পর আনন্দে মেতেছিলেন বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা। নির্যাতনের অভিযোগ তোলা কয়েকজন নারী মোদীর আগমিকালের সভায় যেতে চান। এই সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে বিজেপি

এই নারীদের কয়েকজন অভিযোগ তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে যেতে চান বলে তাদের ভয় দেখাচ্ছে শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্ব। টিভি নাইন বাংলাকে এক নির্যাতিতা বলেন, "আমার যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী, যে কেউ ডাকলে যাব। কিছু লোক সমস্যা তৈরি করছে। ওরা বললেও যাব। না বললেও যাব।"

আরও এক গ্রামবাসীর বক্তব্য, "ওরা বারণ করলেও আমরা যেতে চাই। আমাদের নিষেধ করবে কেন? চাপ এলেও যাব। এখানে কী কী হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে জানাব।"

গত সপ্তাহে মোদী পশ্চিমবঙ্গে দুটি সভার মাধ্যমে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছেন। ১ মার্চ হুগলির আরামবাগ ও ২ মার্চ নদিয়ার কৃষ্ণনগরে সভা করেন তিনি। দুটি সমাবেশে বিজেপির শীর্ষ নেতা সন্দেশখালির প্রসঙ্গে তীব্র আক্রমণ করেছেন রাজ্যের শাসক দলকে। এই পর্বে তার তৃতীয় সভা বারাসতে, যে শহর উত্তর ২৪ পরগনার সদর।

এই সভায় হাজির হয়ে নারীরা নিজেদের কথা সরাসরি জানাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রীকে। এক অভিযোগকারিণী বলেন, "দিনের পর দিন আমরা অত্যাচার সহ্য করেছি। পুলিশের কাছে গিয়ে লাভ হয়নি। ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। এখন নিজেরাই সে কথা বলতে চাই।"

সন্দেশখালির একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। নারীদের দাবি, মধ্যরাতে তাদের ডেকে পাঠানো হত দলীয় কর্মসূচির নামে। একজনের বক্তব্য, "শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা বৈঠকে ডাকত। এদের পিছনে ছিল শেখ শাহজাহান। না গেলে বাড়ির ছেলেদের মারধর করত। পুলিশের কাছে গেলে পাঠাত শাহজাহানের কাছে।"

বাম মনোভাবাপন্ন বুদ্ধিজীবীদের একটি দল সম্প্রতি সন্দেশখালি ঘুরে এসেছে। সেই দলের সদস্য, অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন, "সন্দেশখালির মহিলাদের সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটা বাস্তব। এই বাস্তবটাকে যদি রাজনীতির স্বার্থে দেখা হয়, তাহলে সেটা নিন্দনীয়।রাজনীতিবিদরা সবসময়ই এই ধরনের ঘটনা রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইবেন। আমি চাইব, কোনো রাজনৈতিক দল যাতে নিজেদের স্বার্থে এই মানুষগুলোকে যাতে ব্যবহার না করে।"

নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী, অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ বলেন, "শুরু থেকেই সন্দেশখালির মহিলারা রাজনীতির ঘুঁটি হয়ে রয়েছেন। তাদের সমস্ত প্রতিবাদকে শাসকদলের তরফে বলা হয়েছে যে, বিরোধীদের শেখানো প্রতিবাদ। পরে শাসক দল শিবির করে স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার সহ নানা পরিষেবা যখন দিতে শুরু করে, তখন বোঝা গিয়েছে যে তারা সন্দেশখালির ব্যাপারটায় কত গুরুত্ব দিচ্ছে।"

মোদী আজ কলকাতায় এসে পৌঁছচ্ছেন। রাতে থাকবেন রাজভবনে। আগামিকাল বারাসাতের সভা ছাড়াও তার একগুচ্ছ কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম মেট্রোর নয়া রুটের উদ্বোধন।

সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে হাড় হিম করা যত অভিযোগ

বাড়ি ভাড়া শুভেন্দুর

নির্বাচনের মুখে সন্দেশখালি রাজ্যের সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের গড়ে থাবা বসাতে বিরোধীরা যেমন মরিয়া, শাসকও তেমনি ব্যস্ত ড্যামেজ কন্ট্রোলে।

আদালতের অনুমতি নিয়ে ইতিমধ্যেই দুবার সন্দেশখালি সফর করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ভোটের মরশুমে শুধু সাময়িক পরিদর্শন নয়, সেখানে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে চাইছেন তিনি। তাই সন্দেশখালিতেই ঘর ভাড়া নিয়েছেন বিজেপি নেতা।

টিভি নাইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী মাস তিনেকের জন্য পুকুরপাড়া এলাকায় ঘর ভাড়া নিচ্ছেন শুভেন্দু। স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়াল বলেন, "সন্দেশখালির মাটিতে বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করতে শুভেন্দু অধিকারী এমনটাই পরিকল্পনা করেছেন। সেই কারণে বাড়ি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।"

শুভেন্দুর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট স্থানীয় নারীরা। কয়েকজনের বক্তব্য, "আমাদের আতঙ্ক অনেকটা দূর হবে। কিছু হলে সরাসরি জানানো যাবে। উনি থাকবেন শুনে আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি।” তৃণমূলের দাপট থাকলেও এসব এলাকায় এখনো বামেদের কিছুটা সমর্থন রয়েছে। সেখানেই আগামী মাস তিনেক ঘনঘন দেখা যেতে পারে শুভেন্দুকে।

এ নিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, "একটি সেবাকেন্দ্র করা হয়েছে। আমরা ভাড়া নিয়েছি। অত্যাচারিত মহিলাদের পাশে থাকা ও আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য।”

সন্দেশখালি যে সব দলেরই নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রে থাকবে তা বোঝা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "অত্যাচারের খবর কেউই আর বেশি দিন চেপে রাখতে পারবেন না। স্থানীয় শাসক দল চেষ্টা করছে যাতে নারীরা অন্য দলের কাছে মুখ খুলতে না পারে। তাই প্রধানমন্ত্রীর সভাতে যাওয়া নিয়ে অভিযোগ উঠছে। অত্যাচারিত নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। ছয় জনকে যদি ভয় দেখানোও হয়, তা হলেও বাকিরা এগিয়ে আসবেন।"