1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজইরাক

সমকামীদের শাস্তি নিয়ে ইরাকে বিতর্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সমকামীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে একটি আইন পাশ করতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক৷ ইতিমধ্যে বিলের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4WA2o
সরকার এলজিবিটিকিউদের বিরুদ্ধে মূলত ‘নৈতিকতা আইনকে' ব্যবহার করছে
সরকার এলজিবিটিকিউদের বিরুদ্ধে মূলত ‘নৈতিকতা আইনকে' ব্যবহার করছেছবি: Hadi Mizban/AP/picture alliance

সমালোচকেরা বলছেন, দেশটির বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যা থেকে জনগণকে দৃষ্টি সড়িয়ে নিতে সমকামীদের নিয়ে এমন আইন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার৷

দেশটির বিদ্যমান ‘ল অন কমবেটিং প্রস্টিটিউশন ১৯৮৮' নামে আইনের সংস্কার করার লক্ষ্যে খসড়া আইনটি পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন সাংসদ রাদ আল মালিকি৷ আইনটি পাশ হলে, সমলিঙ্গের ব্যাক্তিদের সম্পর্ক শাস্তিু হবে মৃত্যুদণ্ড বা দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড৷ শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত এই আইন ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে৷ ‘নারীদের বেশ ধারণকারী' ব্যক্তির তিন বছরের কারাদণ্ড বা সাত হাজার ৭০০ ইউরো (প্রায় আট লাখ টাকা) জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷ নারীদের বেশ ধারণকারী বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা নারীদের পোশাক পরিধান করেন বা সাজসজ্জা করেন৷  

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এলজিবিটিকিউ গবেষক রাশা ইউনেস বলেন, আইনটি হঠাৎ করেই করা হয়েছে বিষয়টি এমন নয়৷ এটি ইরাকে চলমান জন অসন্তোষের সাথে সম্পর্কিত৷ 

এটি এমন সময়ে করা হয়েছে যখন দেশের জনগণের মূল দাবিদাওয়া মেনেনিতে গিয়ে সরকারকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, বলেন তিনি৷  

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের সম্পর্ককে আইনে যৌন বিকৃতি বলে ব্যাখা করা হয়েছে৷ তাছাড়া যারা ‘সমকামিতাকে উৎসাহিত করছে' তাদের সাত বছরের জেল এবং ১০ হাজার ৬০০ ইউরো জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কোন ধরনের আচরণ সমকামিতাকে উৎসাহিত করছে সে বিষয়টি আইনে স্পষ্ট করা হয়নি৷

দায়মুক্তির সংস্কৃতি

সমকামীদের সম্পর্কের বিরোধিতায় ইরাকে এখন পর্যন্ত কোনো আইন নেই৷ তবে সরকার এলজিবিটিকিউদের বিরুদ্ধে মূলত ‘নৈতিকতা আইনকে' ব্যবহার করছে৷  

এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ‘‘সশস্ত্র গ্রুপ এবং ব্যাক্তি পর্যায় থেকে কয়েক দশক ধরে এলজিবিটিকিউ সদস্যদের উপর হামলার ঘটনা চলছে৷ এমন হামলা ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটছে এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না৷'' 

এমন পরিস্থিতিতে নতুন এই আইন ‘আগুনে তেল ঢালার' মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে, বললেন ইউনেস৷ 

ইরাকুয়্যার নামে ইরাকের একমাত্র এলজিবিটিকিউ সংস্থার প্রধান আমির আসোর বলেন, ‘‘আইনটি পাশ হলে সমকামীদের উপর সাধারণ মানুষের হামলা আরো সহজ হবে৷''

তিনি বলেন এই আইনটি ইরাকের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী যেখানে লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়ের সব ধরনের মানুষের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে৷

অবশ্য এই আইনটি পাশের জন্য বেশ কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করছে ইরাক সরকার৷

গত আগস্ট মাসে দেশটির কমিউকেশন অ্যান্ড মিডিয়া কমিশন একটি নির্দেশনা জারি করে৷ নির্দেশনায় গণমাধ্যমগুলোকে সমকামী কথাটির পরিবর্তে ‘যৌন বিকৃতি' 'sexual deviance' কথাটি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে৷ সেইসঙ্গে লিঙ্গ শব্দটি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷     

এদিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় আধা-স্বায়ত্ত্বশাসিত ইরাকি কুর্দিস্তানে ইতিমধ্যেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে সেখানকার পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয়৷ বিলে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠিা যদি সমকামিতাকে উৎসাহিত করে তাহলে তাদেরকে শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে৷ 

এক সিরীয় সমকামীর গল্প

নিপীড়ন চলছে

ইরাকের এলজিবিটিকিউ সদস্যরা বরাবরইতাদের উপর নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন৷

কালচার ম্যাগাজিন রাসেফ ২২-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ৪৩ বছরের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘‘লিঙ্গের পরিচয়ের কারণে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে যখন শুনতে পাই আমার খুব খারাপ লাগে৷ আর আমি ভয় পাই৷ কারণ আমি জানি যে আমিও এমন বিপদে আছি৷ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা কার ছাড়া বা এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেইা৷''    

লেখক আমরো আল-কাধি অবশ্য মনে করেন সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি ইরাকের মানুষের যে অনীহা বা বিরাগ সেটি আরব সমাজের পাবারিকির যে কাঠামো তার মধ্যেই নিহিত আছে৷

আরবে লিজিবিটিকিউ নিয়ে নিজের লেখা বইয়ে আল-খাদি জানান ছোটবেলায় তার মা তাকে বলতেন, ‘‘তুমি আসলে তুমি নও, তুমি হচ্ছ আমি৷'' 

‘‘অবশ্যই আমি আরবের সব পরিবারের কথা আমি বলতে পারি না৷ কিন্তু ইরাকের যেই সমাজে আমি বড় হয়েছি সেখানে বাবা-মায়েরা সন্তানকে নিজেদের সামাজিক প্রতিমূর্তি হিসেবে দেখেন৷ একজন ব্যাক্তি যার নিজের ইচ্ছা এবং স্বাধীনতা থাকতে পারে সেভাবে দেখা হয় না৷ বরং একটি বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে দেখা হয় যার লক্ষ্য হবে বৃহত্তর পারিবারিক ইউনিটি নিশ্চিত করা৷''

যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংস্থা টি ব্রাউনের প্রধান নির্বাহি বলেন, ইরাকে যা হচ্ছে তা আসলে নতুন কিছু  নয়৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এটি একটি নিষ্ঠুর শাস্তি এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷

কেরস্টেন নিপ/আরআর